ভারতকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিল পুঁচকে হংকং

জয়ের পর ধোনির সঙ্গে স্বস্তির করমর্দন রোহিতের। ছবি: এএফপি
জয়ের পর ধোনির সঙ্গে স্বস্তির করমর্দন রোহিতের। ছবি: এএফপি
>

হংকংকে ২৬ রানে হারিয়ে এশিয়া কাপে শুভসূচনা করল ভারত। রোহিত শর্মাদের এই জয়ে চূড়ান্ত হলো সেমিফাইনালের চার দল—ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান

আগের ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে বিদায় নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। ভারতও কি একই পথে হাঁটবে? হংকংয়ের বিপক্ষে এই ম্যাচটা হারলে বিদায় নিশ্চিত না হলেও খাদের কিনারায় চলে যেত রোহিত শর্মার দল। তাও এমন পুঁচকে প্রতিপক্ষের বিপক্ষে, যাঁরা কিনা আইসিসির সহযোগী দেশ। ‘পচা শামুকে পা কাটা’ যাকে বলে আরকি। না, শেষ পর্যন্ত রোহিত শর্মাদের পা কাটেনি। তবে হারের ভয় পেয়ে বসেছিল ভীষণভাবে।

হংকংয়ের ইনিংসে প্রায় ৪০ ওভার পর্যন্ত হারের ভয় পেয়ে বসেছিল ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ে দ্বিতীয় দলটিকে। অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে শেষ পর্যন্ত ভয়টা কাটাতে পেরেছে রোহিত শর্মার দল। আর জয়ের রাস্তায় থেকেও হংকং শেষ পর্যন্ত ২৬ রানে হেরেছে অভিজ্ঞতার কাছে। ভারতের ৭ উইকেটে ২৮৫ রানের পুঁজি তাড়া করতে নেমে ৫০ ওভার খেলা হংকংয়ের ইনিংস থেমেছে ৮ উইকেটে ২৫৯ রানে!

ম্যাচটা না দেখে থাকলে ভাবতে পারেন, দুই দলের মধ্যে শক্তির ব্যবধান তো আকাশ-পাতাল। হংকং এত রান করল কীভাবে! মজাটা এখানেই। প্রায় তিন শ রান তাড়া করতে নেমে হংকংয়ের প্রথম উইকেট পরেছে ৩৫তম ওভারে। তার আগে স্কোরবোর্ডে উঠেছে ১৭৪ রান! ভুল পড়েননি। ভুবনেশ্বর কুমার, শার্দুল ঠাকুর, যুজবেন্দ্র চাহাল, কুলদ্বীপ যাদবদের মতো পরীক্ষিত বোলারদের বিপক্ষে এমন অবিশ্বাস্য ব্যাটিংই করেছেন হংকংয়ের দুই ওপেনার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর ইতিহাস গড়া হয়নি। ৩৫ থেকে ৪১—এই সাত ওভারের মধ্যে দ্রুত ৪ উইকেট হারিয়ে হংকং ছিটকে পড়েছে অবিশ্বাস্য জয়ের ইতিহাস গড়ার পথ থেকে।

তার আগে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়েছিলেন হংকংয়ের দুই ওপেনার নিজাকাত খান ও অংশুমান রাঠ। ভারতের ইনিংসের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই রান তুলেছেন তাঁরা। ১০ ওভার শেষে ভারতের স্কোর ছিল ১ উইকেটে ৫৬। হংকং সেখানে বিনা উইকেটে ৫৬। ২০ ওভার শেষে ভারতের স্কোর যেখানে ১ উইকেটে ১০৯, হংকং সেখানে বিনা উইকেটে ১১০। অর্থাৎ বাকি ১৮০ বলে ১৭৬ রান দরকার ছিল হংকংয়ের।

পরের ১০ ওভার মানে ২১ থেকে ৩০—এর মধ্যে রান তোলায় কিছুটা পিছিয়ে পড়ে হংকং। এই ৬০ বলে এসেছে মাত্র ৩৪ রান। এ সময় দারুণ বোলিং করেছেন কুলদ্বীপ যাদব-ভুবনেশ্বর কুমাররা। শেষ ২০ ওভারে ১৪২ রানের দূরত্বে থাকতে দ্রুত রান তোলার ঝুঁকি নেন হংকংয়ের দুই ওপেনার। এই ঝুঁকি নিতে গিয়েই ৩৫তম ওভারে কুলদ্বীপকে কভার অঞ্চলে ক্যাচ দেন অধিনায়ক অংশুমান (৭৩)। ভীষণ কাঙ্ক্ষিত ব্রেক-থ্রু পেয়ে যায় ভারত। পরের ওভারেই আসে নিজাকাতের উইকেট।

ভারতকে বাগে পেয়েও হারাতে না পারার হতাশা অংশুমানের। ছবি: এএফপি
ভারতকে বাগে পেয়েও হারাতে না পারার হতাশা অংশুমানের। ছবি: এএফপি

ওয়ানডেতে এর আগে দুইবার ‘নার্ভাস নাইন্টিজ’-এ আউট হয়েছেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত নিজাকাত। আজ তাঁকে তৃতীয়বারের মতো এই তেতো স্বাদ উপহার দিয়ে ওয়ানডেতে নিজের উইকেটের খাতা খোলেন অভিষিক্ত পেসার খলিল আহমেদ। ১২ চার ও ১ ছক্কায় ৯২ রানের দারুণ ইনিংস খেলেছেন নিজাকাত। দুই ওপেনারের বিদায়ের পরই মূলত অবিশ্বাস্য জয় থেকে প্রত্যাশিত হারের রাস্তায় নেমে আসে হংকং।

দুই ওপেনারকে তুলে নেওয়ার পর ৪০ ও ৪১তম ওভারে দ্রুত আরও দুটি উইকেট তুলে নেয় ভারত। ক্রিস্টোফার কার্টারকে ফিরিয়েছেন খলিল ও বাবর হায়াতকে তুলে নেন চাহাল। ৪০ ওভার শেষে হংকংয়ের স্কোর ছিল ৩ উইকেটে ১৯৮। অর্থাৎ জয়ের জন্য শেষ ১০ ওভারে চাই ৮৮। তেমন সহজ লক্ষ্য না হলেও একেবারে কঠিন কিছু ছিল না। কিন্তু বড় দলের বিপক্ষে এমন ম্যাচ কীভাবে জিততে হয়, সেই অভিজ্ঞতার অভাবটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে হংকং।

রানের চাকা আটকে দিয়েছিলেন ভারতের বোলাররা। সেই চাপমুক্ত হতে গিয়ে উল্টো উইকেট হারিয়েছে হংকং। ৩৪ ওভার শেষে যে দল বিনা উইকেটে ১৭৪, পরের ১১ ওভারের মধ্যে সেই দলই হারিয়েছে ৬ উইকেট! চাপের ম্যাচ ‘ফিনিশ’ করার বিদ্যা সেভাবে জানা না থাকায় ভারতকে এ সময় আর ভয় ধরাতে পারেনি অংশুমানের দল। উল্টো, ৪৫তম ওভারে দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচটা বলতে গেলে তখনই শেষ করে দিয়েছিলেন চাহাল।

জয়ের জন্য শেষ ৩৯ বলে ৫৬ রান দরকার ছিল হংকংয়ের। হাতে ৪ উইকেট। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান থাকলে এখান থেকেও হয়তো ম্যাচ বের করা যেত। কিন্তু ভারতের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের কুলিয়ে উঠতে পারেনি হংকংয়ের লোয়ার-অর্ডার। বিশেষ করে যুজবেন্দ্র চাহাল (৩/৪৬) ও খলিল আহমেদ (৩/৪৬) দারুণ বোলিং করেছেন। অভিষেকেই নজর কেড়েছেন তরুণ পেসার খলিল।

এই হারে এশিয়া কাপ থেকে বিদায় নিল হংকং। তাদের হারিয়ে কালকের মহারণের প্রস্তুতিটাও সেরে রাখল রোহিত শর্মার দল। বলা যায় ‘ছায়া পাকিস্তান’কে হারিয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের মুখোমুখি হওয়ার মহড়া দিল ভারত। হংকংয়ের এই দলে যে সাতজনই পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত! তবে এশিয়া কাপে ভারতের এই শুভসূচনায় নিশ্চিত হয়েছে সুপার ফোরের চার দল। শ্রীলঙ্কার বিদায় আগেই নিশ্চিত হওয়ায় ‘বি’ গ্রুপ থেকে শেষ চারে উঠেছে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান। আর হংকং দুই ম্যাচ হেরে বিদায় নেওয়ায় ‘এ’ গ্রুপ থেকে শেষ চারের টিকিট পেয়ে গেল ভারত ও পাকিস্তান। তবে দুটি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ দল এখনো নিশ্চিত হয়নি।