মিরাজ-মাশরাফিতে মান রক্ষা

নয়ে নামা মিরাজের ব্যাটেই আলো ছড়াল। ছবি: এএফপি
নয়ে নামা মিরাজের ব্যাটেই আলো ছড়াল। ছবি: এএফপি
>দুবাইয়ে এশিয়া কাপের সুপার ফোরে ভারতকে ১৭৪ রানের লক্ষ্য দিতে পেরেছে বাংলাদেশ। মাশরাফি-মিরাজের অষ্টম উইকেট জুটিতে যোগ হওয়া ৬৬ রানের সৌজন্যে স্কোরটা ১৫০ পেরিয়েছ বাংলাদেশের। সর্বোচ্চ ৪২ রান এসেছে মিরাজের ব্যাট থেকে।

১২ ঘণ্টাও বিশ্রামের সময় পায়নি, বাংলাদেশকে ঝটপট মাঠে নেমে পড়তে হয়েছে। যেনতেন ম্যাচ নয়, সুপার ফোরের শুরুতেই প্রতিপক্ষ ভারত। আফগানিস্তানের বিপক্ষে বিধ্বস্ত হওয়ার ‘হ্যাংওভার’ কাটতে না কাটতেই ভারতীয় বোলারদের চ্যালেঞ্জ সামলাতে গিয়ে রীতিমতো খাবি খেয়েছেন সাকিব-মুশফিকেরা! বাংলাদেশকে উদ্ধার করেছেন, সেটিও ঝুঁকি নিয়ে বলা যাচ্ছে না। তবে চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে কিছুটা মান বাঁচিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও মাশরাফি বিন মুর্তজা। দুজনের লড়াইয়ে দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ৪৯.১ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে করতে পেরেছে ১৭৩।

টস হারায় আজও প্রতিপক্ষ অধিনায়কের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করেছে বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাটিং না ফিল্ডিং করবে। টস জিতে ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা বাংলাদেশকে ব্যাটিং করতে পাঠিয়ে যে ঠিকই করেছেন, সেটি বোলাররা ভালোভাবেই প্রমাণ করেছেন। অবশ্য ভারতীয় বোলারদের যতটা কৃতিত্ব, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের দায়ও কম নয়। ২৫ রান করা মাহমুদউল্লাহ শুধু আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তের বলি, বাকি সব বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানকে কাঠগড়ায় তোলা যায় অনায়াসে। বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের আরও অনুশোচনায় পড়ার কথা অষ্টম উইকেট জুটিতে মাশরাফি-মিরাজের ব্যাটিং দেখে। এই জুটি ৬৬ রান যোগ না করলে বাংলাদেশের ১৫০ রানও হতো কি না, সন্দেহ! নয়ে নেমে মিরাজ ৪২ ও আটে নামা মাশরাফি ২৬ রান করে সতীর্থদের দেখিয়েছেন, ‘ভাইয়েরা একটু দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারলে ভারতকে বড় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া কঠিন ছিল না আজ!’ 

পঞ্চম ওভারের তৃতীয় বলে ভুবনেশ্বর কুমারের শর্ট বল পুল করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে কেদার যাদবের ক্যাচে লিটন দাস ফেরেন ৭ রান করে। ওপেনিং জুটি ভেঙেছে ১৫ রানে। পরের ওভারেই নাজমুল হোসেনের কী দরকর ছিল অতি চঞ্চল হওয়ার? উদ্বোধন সঙ্গীকে হারিয়ে তাঁর যেন আর উইকেটে থাকতে ভালো লাগছিল না! পরের ওভারের প্রথম বলেই শরীর থেকে অনেক বাইরের বলটা চালাতে গিয়ে স্লিপে দাঁড়ানো শিখর ধাওয়ানের ক্যাচ! লিটনের মতো তাঁর অবদান ৭ রান! ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ওয়ানডেতেই নাজমুলের স্কোর ৭। ‘৭’ যে একজন ব্যাটসম্যানের জন্য পয়া স্কোর নয়, সেটি তরুণ বাঁহাতি ব্যাটসম্যানও নিশ্চয়ই বোঝেন।

তরুণেরা পারেন না, কিন্তু অভিজ্ঞরা পারেন—এই ছবিটাই বাংলাদেশ দলে দেখা যাচ্ছে অনেক দিন ধরে। চিত্রটা আজও দেখতে আশায় বুক বেঁধেছিলেন দুবাই স্টেডিয়ামে উপস্থিত হাজারো বাংলাদেশি দর্শক। তৃতীয় উইকেটে ২৬ রানের জুটি গড়ে সাকিব আল হাসান-মুশফিকুর রহিম ভালো কিছুর ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন। কিন্তু হায়, সাকিবেরও যে ‘মরিবার হলো সাধ’! রবীন্দ্র জাদেজাকে এক ওভারে দুবার বাউন্ডারি মারলেন। কিন্তু বাউন্ডারি মারার নেশা তাঁর এতটাই পেয়ে বসল যে তৃতীয়টিও মারতে চাইলেন সুইপ শটে। একবারও কি তাঁর ভাবনায় এল না, বারবার সুইপ শট খেলছেন বলে মহেন্দ্র সিং ধোনির বুদ্ধিতে স্লিপ থেকে সরিয়ে ওই বলেই স্কয়ার লেগে আনা হয়েছে শিখর ধাওয়ানকে? ঠিক শিখরের হাতেই ক্যাচটা তুলে দিলেন বাঁহাতি অলরাউন্ডার। অন্যদের কী বলবেন, এই ভুলে সাকিব নিজেই ভীষণ হতাশ! জমল না মুশফিক-মিঠুনের চতুর্থ উইকেট জুটিও (১৮)। জাদেজার বলে এলবিডব্লু হয়ে মিঠুনের একই পরিণতি—ড্রেসিংরুমে ফিরলেন ৯ রান করে।

তবুও বাংলাদেশের আশা, লড়াকু মুশফিক তো আছেন। কিন্তু আজ বুঝি বাংলাদেশের কারও বীরত্ব দেখার দিন নয়। জাদেজাকে অহেতুক রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে শর্ট থার্ডম্যানে চাহালের ক্যাচ হয়ে ফিরে এলেন থিতু হয়ে যাওয়া মুশফিক (২১)। ৬৫ রানে ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশকে উদ্ধার করবেন কে—প্রশ্নটা যখন দুবাইয়ের বাতাসে, মান বাঁচাতে খানিকক্ষণ লড়লেন ময়মনসিংহের দুই ‘ম’—মাহমুদউল্লাহ ও মোসাদ্দেক। দুজনের ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে এল ৩৬ রান। কিন্তু দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের, জুটিটা ভাঙল আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে। উইন্ডিজ আম্পায়ার গ্রেগনি ব্রাফেটের মনে হয়েছে ভুবনেশ্বরের বলে মাহমুদউল্লাহ নিশ্চিত এলবিডব্লু। মাহমুদউল্লাহ যতই বলুন বল আগে তাঁর ব্যাটে লেগেছে, রিভিউ হারিয়ে ফেলার পর সেটি আর প্রমাণের সুযোগ নেই।

মাহমুদউল্লাহ ফিরতেই বাংলাদেশের অলআউট হওয়া সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল, কিন্তু অষ্টম উইকেটে মিরাজ-মাশরাফির প্রতিরোধে সেটি বিলম্বিত হলো। দুজনের ব্যাটিংয়ে দুবাইয়ে বাংলাদেশের দর্শকেরা একটু আনন্দের উপলক্ষ পেলেন। শেষমেশ মিরাজ-মাশরাফির ব্যাটিং আফসোসই বাড়িয়েছে বাংলাদেশের। টপ কিংবা মিডল অর্ডার থেকে যদি এমন সার্ভিস পাওয়া যেত, বাংলাদেশের স্কোরটা কী দুর্দান্তই না হতো!