আফগান রূপকথা লিখতে দিলেন না মালিক

জয়ের পর হাসান আলী ও শোয়েব মালিকের উদ্‌যাপন। ছবি: এএফপি
জয়ের পর হাসান আলী ও শোয়েব মালিকের উদ্‌যাপন। ছবি: এএফপি

ম্যাচ শেষে পিচের ওপর বসে। কেঁদেই ফেললেন আফতাব। তাঁকে সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে এলেন শোয়েব মালিক নিজেই। অন্য কেউ এগিয়ে এলে মানাতও না। একটু আগে আফগানিস্তানের স্বপ্নটা যে শেষ করেছেন তিনিই।

এ ম্যাচ নিয়ে বাড়তি আগ্রহ ছিল। দুই দেশের মধ্যকার ইতিহাস আর বর্তমান বৈরী সম্পর্কই এর কারণ। আফগানিস্তানের ক্রিকেটীয় গল্পের অধিকাংশের ভিত্তিই পাকিস্তানে শুরু হয়েছে। দুর্দান্ত এক জয়ের গল্পটা প্রায় লেখাই হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু শোয়েব মালিকের ঠান্ডা মাথার কাছে হেরে গেছে আফগানরা। ৩ বল বাকি থাকতে পাকিস্তানকে ৩ উইকেটের জয় এনে দিয়েছেন মালিক।


আফগানিস্তান ২৫৭ রান তুলে ফেলার পরই সবাই দুর্দান্ত এক গল্প লেখার মকশো করে নিচ্ছিলেন। প্রথমে শ্রীলঙ্কা, এরপর বাংলাদেশ এবং আজ পাকিস্তান—টানা তিন ম্যাচে এশিয়ার তিন বড় দলকে হারানো, যারা আবার র‍্যাঙ্কিং ও রেটিংয়ে অনেক এগিয়ে। আফগানিস্তান ক্রিকেটের জন্য অনন্য এক বিজ্ঞাপন। এর মাঝে পাকিস্তানকে হারানোর গল্পটাই সবচেয়ে বেশি রং ছড়ানো, আবেগ জড়ানো। এমন গল্প লিখতে কার না ইচ্ছে হয়!

২৫৭ তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই ফখর জামানের শূন্য হাতে বিদায় সে। গল্পের প্রথম অধ্যায় বলেই মনে করাচ্ছিল। এবারের এশিয়া কাপে দুই শর বেশি তাড়া করতে নেমে সব দল যে রীতিমতো হাপিত্যেশ করে মরছে। শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের বিপক্ষে আফগানিস্তানের জয়ের ফর্মুলাটা যে একই ছিল। প্রথমে আড়াই শ রানের পুঁজি বানিয়ে শুরুতেই প্রতিপক্ষের উইকেট ফেলে দিয়ে চাপ সৃষ্টি করা।


সে ফর্মুলাতে চাপ সৃষ্টি হয়েছিল। চাপে একপর্যায়ে পাকিস্তান নুয়ে পড়ছে বলেই মনে হয়েছিল। ওভার প্রতি রান চারের নিচে থাকায় লক্ষ্যটা দূরে সরে যাচ্ছিল। কিন্তু হাতে উইকেট ধরে রাখার বুদ্ধিটা ভালোই কাজে লাগিয়েছে তারা। ইমাম-উল-হক ও বাবর আজম চাপ সয়ে নিয়েও দলকে আর কোনো আঘাত পেতে দেননি। এতেই ধীরে ধীরে লড়াইয়ে ফেরে পাকিস্তান। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে আসা ১৫৪ রান পাকিস্তানকে বসিয়ে দেয় চালকের আসনে। কিন্তু এরপরই ম্যাচে ফিরে আফগানিস্তান। মাত্র ৪ রানের মধ্যে আউট হয়ে যান ইমাম (৮০) ও বাবর (৬৬)।


শেষ ১৫ ওভারে ১০০ রানের লক্ষ্য। রশিদ খান ও মুজিব উর রহমানের গোটা আট ওভার তখনো বাকি। পাকিস্তানের কাজটা বেশ কঠিন ছিল। মুজিবকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে হ্যারিস সোহেল ফিরে গেলে কাজটা কঠিন হয়ে যায় আরও। ১৩ রানের ইনিংস খেলতে গিয়ে ৮ বল বেশি খেলেছেন সোহেল।

জয় থেকে ৪২ রান দূরে থাকা অবস্থায় পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ বোল্ড হয়ে গেলে আফগানদের আশা বাড়ে। ম্যাচের তখন আর ৫ ওভার বাকি। রশিদকে এক ছক্কা মেরেই আউট ফেরেন আসিফ। অন্য প্রান্তে আরও একবার সঙ্গীহারা হলেন শোয়েব মালিক।


৪৮ তম ওভারে ১১ রান দিয়ে ফেলেন আফতাব। ফলে শেষ ২ ওভারে ১৮ রানের সমীকরণ পায় পাকিস্তান। প্রথম ২ বলে ২ রানের পর তৃতীয় বলে নওয়াজকে বোল্ড করে দিলেন রশিদ। ৯ বলে দরকার ১৬ রান। নেমে প্রথম বলেই ছক্কা হাসান আলীর। পরের দুই বলে ডট।


শেষ ওভারে ১০ রান দরকার পাকিস্তানের। স্ট্রাইকে শোয়েব মালিক, বল হাতে আফতাব। প্রথম বলে ডট। পরের বলটা ছিল হাফ বলি, ছক্কা! পরের বলে চার মেরে শুধু ফিফটিই পেলেন না মালিক (৫১*), দলকে এনে দিলেন দুর্দান্ত এক জয়।