সৌম্য-ইমরুলকে উড়িয়ে আনা নিয়ে মাশরাফির প্রশ্ন

>
মাশরাফি বিন মুর্তজা। প্রথম আলো ফাইল ছবি
মাশরাফি বিন মুর্তজা। প্রথম আলো ফাইল ছবি

উদ্বোধনী জুটির ব্যর্থতা কাটিয়ে তুলতে দুবাইয়ে ডাক পড়েছে সৌম্য–ইমরুলের। বিষয়টি জানেন না অধিনায়ক মাশরাফি।

ম্যাচের পর ম্যাচ টপ অর্ডার যেভাবে ভেঙে পড়ছে, তা নিয়ে প্রচণ্ড হতাশা আছে। বেশ কবারই বললেন, শুরুতেই এভাবে উইকেট পড়ে গেলে কাজটা খুব কঠিন হয়ে যায়। ‘১০ ওভারের মধ্যে ২-৩টি উইকেট পড়ে গেলে তো সমস্যা। প্রথম ম্যাচে (শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে) আমরা রিকভার করতে পেরেছিলাম। কারণ, একটা পার্টনারশিপ হয়েছিল। আজ তো সেটাই হলো না’—এ কথা বলার সময় মাশরাফির দীর্ঘশ্বাস পড়ে।

সমস্যাটা যে শুধু এই এশিয়া কাপেরই নয়, আরও পুরোনো, সেটিও মনে করিয়ে দেন মাশরাফি, ‘সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকেই মিডল অর্ডারকে খেলা বানাতে হচ্ছে। আমি তখনো বলেছি, সব সময় তো আর মিডল অর্ডার পারবে না।’


ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে পারেওনি। টপ অর্ডারের ব্যর্থতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যর্থ হয়েছে মিডল অর্ডারও। ৬৫ রানে পড়ে গেছে ৫ উইকেট। মাশরাফি ঠিকই বলেছেন, ৩০ ওভার পরই ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছে বাংলাদেশ। মিরাজকে সঙ্গ দিয়ে তিনি যেটি করেছেন, তা তো আসলে মান বাঁচানোর চেষ্টা।


এই সমস্যা নিয়ে হতাশা আছে, বিরক্তি আছে। তবে তা সমাধানের জন্য খোঁজা উপায়টা যে মাশরাফির পছন্দ হচ্ছে না, ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে তাঁর কথা থেকে তা বুঝতে কোনো সমস্যাই হলো না। ওপেনিংয়ে টানা ব্যর্থতার দাওয়াই হিসেবে উড়িয়ে আনা হচ্ছে ইমরুল কায়েস ও সৌম্য সরকারকে। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ চলাকালীনই বিসিবি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিয়েছে এই ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্তের কথা। শুধু ব্যতিক্রমীই নয়, একটু বিস্ময়করও বটে!
তার চেয়েও বেশি বিস্ময়কর, ইমরুল ও সৌম্যকে উড়িয়ে আনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অধিনায়ককে না জানিয়েই নেওয়া হয়েছে!

এত দিন ধরে যাঁরা এখানে আছেন, তাঁরাই যেখানে পারছেন না, সৌম্য-ইমরুল কি উড়ে এসেই পারবেন? এক সাংবাদিকের এই প্রশ্নের জবাবে মাশরাফি বললেন, ‘ওরা যে আসছে, আমি সিওর না। আমি মাঠে ছিলাম। তাই পুরোপুরি ক্লিয়ার না। আমার সঙ্গে আলোচনা হয়নি।’

সৌম্য ও ইমরুল দুজনেরই সর্বশেষ ওয়ানডে গত বছর অক্টোবরে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইস্ট লন্ডনে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে এঁরা দুজনই শুরু করেছিলেন বাংলাদেশের ইনিংস। ব্যর্থও হয়েছিলেন দুজনই। ইমরুল করেছিলেন ১, সৌম্য ৮। মাঝখানে সৌম্য আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে রান পেলেও ওয়ানডে দলে ফেরার মতো কিছু করেননি। ইমরুলের ক্ষেত্রে তো কোথাও রান পেয়েছেন, সেটিও বলার উপায় নেই। যে–কারও মনে তাই প্রশ্ন জাগতে বাধ্য, ‘খারাপ খেলায় বাদ পড়েছিলেন যাঁরা, কী করে আবার তাঁরা ফিরছেন দলে?’


অধিনায়ক এই প্রশ্নের জবাব দেবেন কী, উল্টো তাঁর মনেই তো এই প্রশ্ন। ভরা সংবাদ সম্মেলনে সেটি প্রকাশও করে দিলেন, ‘ওরাও কিন্তু এমন পারফর্ম না করেই দল থেকে বের হয়েছে। আবার এসে এই ধরনের টুর্নামেন্টে এত চাপ নিয়ে...আমি জানি না ওরা টেকনিক্যালি কী কাজ করেছে। যে সমস্যার কারণে দলের বাইরে গিয়েছিল, সেগুলো ঠিক করে আসছে কিনা। এটা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে আফগানিস্তানের ম্যাচ যদি চিন্তা করেন, আমার মনে হয় তাঁদের (সৌম্য ও ইমরুল) আরও কঠিন বোলার মোকাবিলা করতে হবে।’

সুপার ফোরে বাংলাদেশের পরের ম্যাচটিই আফগানিস্তানের সঙ্গে। গ্রুপ পর্বে যাদের কাছে ১৩৬ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। আফগানদের সঙ্গে দ্বিতীয় দেখায় যেকোনো ব্যবধানে হারলেই বাংলাদেশের ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে। খুবই স্বাভাবিক যে মাশরাফি এখনই আশা ছাড়তে রাজি নন, ‘আমরা তো এখনো টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাইনি। একটা দিন সময় পাচ্ছি চিন্তাভাবনা করার। এখনো ফাইনাল খেলা সম্ভব। হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কামব্যাক করার সুযোগ আছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে যদি জিততে পারি, পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচটা ফিফটি-ফিফটি হয়ে যাবে।’

তার আগে তো আফগানিস্তানের সঙ্গে জিততে হবে। বাংলাদেশ যে রাতে ভারতের কাছে নিঃসহায় আত্মসমর্পণ করেছে, সেই রাতেই পাকিস্তানকে কাঁপিয়ে দিয়েছে আফগানিস্তান। একটু এদিক-ওদিক হলে জিতেও যেতে পারত আফগানরা। দুর্দান্ত শুরুর পর এই এশিয়া কাপকে হঠাৎই বাংলাদেশের জন্য ‘দুর্গম গিরি, কান্তার মরু’ বলে মনে হচ্ছে!