ম্যাথুসের একটি চিঠি, 'বিশ্বাসঘাতকতা' এবং হাথুরু!

হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। যখন তিনি অধিনায়ক ছিলেন। ছবি: এএফপি
হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। যখন তিনি অধিনায়ক ছিলেন। ছবি: এএফপি
>

শ্রীলঙ্কার ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দলের নেতৃত্ব থেকে ছাঁটাই হয়েছেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। বোর্ডের প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠানো এক চিঠিতে ম্যাথুস জানিয়েছেন, তিনি বিশ্বাসঘাতকতার শিকার

ভূমিকম্পে ওলট-পালট ঘটবে, তা আন্দাজ করাই যাচ্ছিল। কিন্তু তা যে এত দ্রুত ঘটবে, তা কে জানত! শ্রীলঙ্কা অধিনায়কের পদ থেকে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস বরখাস্ত—এই খবরের রেশ কাটতে না কাটতেই আরেকটি বিস্ফোরণ। তা ঘটিয়েছেন ম্যাথুস নিজেই। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডের (এসএলসি) প্রধান নির্বাহী অ্যাশলে ডি সিলভার কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন ম্যাথুস। সেই চিঠিতে ম্যাথুসের ভাষ্য, তাঁকে ‘বলির পাঁঠা’ বানানো হয়েছে এবং তিনি ‘বিশ্বাসঘাতকতা’র শিকার।

এশিয়া কাপে একটি ম্যাচও জেতেনি শ্রীলঙ্কা। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে তারা স্রেফ উড়ে গেছে। পরের ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে শোচনীয় হার। ফলে, গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয় মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের এই টুর্নামেন্টে পাঁচবারের শিরোপাজয়ীদের। বোঝাই যাচ্ছিল, বড় রকমের রদবদল ঘটতে পারে লঙ্কান ক্রিকেটে। ম্যাথুসের নেতৃত্ব হারানো তারই পরিণতি। ব্যাপারটি মেনে নিলেও চিঠিতে নিজের কিছু যুক্তি উপস্থাপন করেছেন এই অলরাউন্ডার।

চিঠিতে ম্যাথুস লিখেছেন, ‘গত ২১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার এসএলসিতে এক বৈঠকে নির্বাচকমণ্ডলী এবং জাতীয় দলের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা আমাকে শ্রীলঙ্কার ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা বলেন। তাৎক্ষণিকভাবে বিস্মিত হয়েছি এবং আমার মনে হয়েছে, এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে গোটা শ্রীলঙ্কা দলের বাজে পারফরম্যান্সের খেসারত হিসেবে আমাকে বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে। আমি দায় নিতে প্রস্তুত তবে শুধু আমার ওপর দায় চাপালে সেটি বিশ্বাসঘাতকতা এবং আমাকে সরানোর চেষ্টা বলেই মনে হয়।’

ম্যাথুস তাঁর চিঠির পরের লাইনে টেনে এনেছেন নির্বাচকমণ্ডলী এবং দলের হেড কোচের প্রসঙ্গ। ‘আপনি জানেন, নির্বাচকমণ্ডলী এবং হেড কোচের সঙ্গে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতেই সব ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর তাই হারের দায় শুধু অধিনায়কের ওপর চাপানো উচিত—এই যুক্তির সঙ্গে আমি একমত নই। যদিও নির্বাচকমণ্ডলী ও হেড কোচ আমাকে সরে দাঁড়ানোর যে কথা বলেছেন, তা আমি মন থেকেই সম্মান করি।’

এরপর ম্যাথুস তাঁর চিঠিতে ধারাবাহিকভাবে কিছু ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন। সব সংস্করণে পাঁচ বছর নেতৃত্ব দেওয়ার পর গত বছরের জুলাইয়ে তিনি লঙ্কান অধিনায়কের নেতৃত্ব থেকে স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ান। নতুন নেতৃত্ব আসুক—এই ভাবনা থেকেই সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলেন ম্যাথুস। গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত উপুল থারাঙ্গা, থিসারা পেরেরা, চামারা কাপুগেদেরা, লাসিথ মালিঙ্গা ও দিনেশ চান্ডিমালের কাঁধে নেতৃত্ব দিয়ে তেমন কোনো সাফল্য পায়নি শ্রীলঙ্কা। ম্যাথুস তাঁর চিঠিতে এসব ঘটনা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘হাথুরুসিংহে হেড কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর আমার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করে ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত নেতৃত্বভার পুনরায় গ্রহণ করার অনুরোধ করেছিলেন।’

ম্যাথুস জানিয়েছেন, হাথুরুসিংহের অনুরোধে সাড়া না দিতে ম্যাথুসকে পরামর্শ দিয়েছিলেন তাঁর পরিবার ও কাছের বন্ধুবান্ধব। কিন্তু ম্যাথুস দলের হেড কোচের ওপর আস্থা রেখে ভেবেছিলেন, দলকে পথে ফেরাতে তিনি আবার দায়িত্ব নেবেন। কিন্তু এশিয়া কাপের ব্যর্থতা যে তাঁর নেতৃত্ব কেড়ে নেবে, তা বোধ হয় ম্যাথুস কল্পনায়ও ভাবেননি। শ্রীলঙ্কার এই তারকা ক্রিকেটার চিঠিতে এ কথাও জানিয়েছেন, ‘নির্বাচকমণ্ডলী এবং হেড কোচ যদি মনে করেন আমি ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলার মতো ফিট নই এবং দলে জায়গা পাওয়ার মতো যোগ্য নই, তাহলে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়ে নেব। কখনো দলের বোঝা হয়ে থাকতে চাই না।’

ম্যাথুস এই চিঠিতে নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর কথাও জানান। এবং সম্মানের সঙ্গে সরে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য নির্বাচকমন্ডলী ও হেড কোচকে তিনি ধন্যবাদও জানান। ম্যাথুসের এই চিঠি প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেরই ধারণা, নির্বাচকমণ্ডলী ও হাথুরুসিংহে তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন বলে ইঙ্গিত করেছেন সাবেক এই লঙ্কান অধিনায়ক। বাংলাদেশ দলের হেড কোচ থাকতেও খেলোয়াড়দের সঙ্গে হাথুরুসিংহের বিরোধের খবর চাউর হয়েছিল সংবাদমাধ্যমে। বাংলাদেশের কোচ পদ থেকে তাঁর বিদায়ও স্বাভাবিক ছিল না।