ফাইনালের আগেও বাড়তি বিশ্রাম ভারতের

বাড়তি বিশ্রাম নিয়ে ফাইনালে প্রতিপক্ষের চেয়ে এগিয়ে থাকার সুবিধা পাচ্ছে ভারত। ফাইল ছবি
বাড়তি বিশ্রাম নিয়ে ফাইনালে প্রতিপক্ষের চেয়ে এগিয়ে থাকার সুবিধা পাচ্ছে ভারত। ফাইল ছবি
>

ভারত নিজেদের শেষ ম্যাচটা খেলছে ২৮ সেপ্টেম্বরের ফাইনালের তিন দিন আগে। ফাইনালে তাদের সম্ভাব্য যে প্রতিপক্ষ, তারা মাঝখানে বিরতি পাবে শুধু এক দিনের, কাল ম্যাচ খেলে দুদিন পরেই নেমে পড়তে হবে ফাইনালে।

ভারত এবারের এশিয়া কাপে নাকি দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে এসেছে। তাহলে আজ তো তারা সাজাবে তৃতীয় সারির একাদশ! আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটা যে ভারত না খেললেই বাঁচে। অর্থহীন এক ম্যাচ। ভারত তাই চেষ্টা করবে বিশ্রাম দিতে দলের মূল তারকাদের। এবারের এশিয়া কাপে খেলোয়াড়দের পানিশূন্যতা থেকে বাঁচিয়ে ফিট রাখাটাই যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।


ভারত নিজ যোগ্যতাতেই এক ম্যাচ হাতে রেখে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে। এ নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। তবে ফাইনালের আগে ভারত যে বাড়তি বিশ্রাম পাচ্ছে, এ নিয়ে যে–কেউই প্রশ্ন তুলতেই পারে। সুপার ফোরের প্রথম দুই রাউন্ডে চারটি ম্যাচ হয়েছে একই দিনে। কিন্তু তৃতীয় ও শেষ রাউন্ডের ম্যাচ দুটি হচ্ছে ভিন্ন দুই দিনে। আজ ভারত-আফগানিস্তান খেলবে, আগামীকাল মুখোমুখি বাংলাদেশ-পাকিস্তান।

ভারত নিজেদের শেষ ম্যাচটা খেলছে ২৮ সেপ্টেম্বরের ফাইনালের তিন দিন আগে। ফাইনালে তাদের সম্ভাব্য যে প্রতিপক্ষ, তারা মাঝখানে বিরতি পাবে শুধু এক দিনের।

এশিয়া কাপে সব দল অবস্থান করছে দুবাইয়ে। কিন্তু টুর্নামেন্টের পাঁচটি ম্যাচ আয়োজন করা হয়েছে দুবাই থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরের আবুধাবিতে। টুর্নামেন্টের ৬ দলের ৫টিকেই দুবাই-আবুধাবি-দুবাই করতে হয়েছে। কেবল ভারত সব কটি ম্যাচ খেলেছে দুবাইয়ে। এমনকি ফাইনালও দুবাইয়ে। যাত্রার ধকল তাদের নিতেই হয়নি।

এ কারণে সুপার ফোরের সূচি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যেখানে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন বা রানার্সআপের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ভারত গ্রুপের দ্বিতীয় দল হয়ে উঠলেও এ-১ সুবিধা পেত। অথচ ভারত রানার্সআপ হয়ে এ-১ হলে দুটি ম্যাচ তাদের খেলতে হতো আবুধাবিতে। দুবাই-আবুধাবির দূরত্ব আরব আমিরাতের সড়কব্যবস্থায় তেমন কোনো কষ্টসাধ্য দূরত্বে না হলেও প্রশ্ন উঠছে। প্রশ্নটা উঠছে ঠাসা সূচির কারণেই। কখনো টানা দুদিন খেলতে হয়েছে। বেশির ভাগ ম্যাচ এক দিন বিরতিতে। ৪২-৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় খেলে এ-শহর ও-শহর করার ধকল বাড়তি চাপ তো অবশ্যই।

পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ এ নিয়ে সবার আগে প্রশ্ন তোলেন, ‘ভ্রমণ একটা বিষয়। যদি আপনাকে ম্যাচের মধ্যে ভ্রমণ করতে হয়, তবে খেলাটা কঠিন হয়ে যায়। এই আবহাওয়া, টানা খেলা, আমার মনে হয় সবাইকে সমান সুবিধা দেওয়া উচিত, এখানে ভারত-পাকিস্তান কোনো ব্যাপার নয়। যদি আবুধাবিতে ম্যাচ থাকে, তবে সব দলেরই সেখানে খেলা থাকা উচিত। জানি না এসিসি এটা নিয়ে কী করেছে।’

আর বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি মন্তব্য করেন, ‘আমার মনে হয় না কেউ (দল) ভালোভাবে নেবে ব্যাপারটি। এমনকি একজন পাগলও হতাশ হবে। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে গ্রুপ পর্বের আগের দিন কখনো শুনেছেন যে আপনি গ্রুপে দ্বিতীয়? হয়তো কেউ প্রকাশ করবে না, তবে এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়াটা স্বাভাবিক হওয়ার কথা নয়।’

এ নিয়ে যা বিতর্ক হওয়ার হয়েছে। তবে নতুন করে প্রশ্নটা সামনে আসছে, ফাইনালের আগে ভারত দুদিন আর তাদের অন্য প্রতিপক্ষ কেন এক দিন বিশ্রাম পাবে, এমন একটা সূচি করা হলো? আগের চারটি ম্যাচ চারটি দল একই দিনে খেলেও শেষ পর্বটি কেন ভিন্ন দুই দিনে?

এ নিয়ে এখন প্রশ্ন তোলা অবান্তর। বাংলাদেশ এর আগে মন্দের ভালো দিক খুঁজে নিয়েছিল টানা দুদিন ভিন্ন দুই শহরে খেললেও এর পরের ম্যাচটায় অন্তত সেই ধকল নিতে হয়নি। দুবাইয়ে থেকে দুবাইয়েই খেলেছে। আর অলিখিত সেমিফাইনাল হয়ে ওঠা ম্যাচটিতে বাংলাদেশ এই ভেবে সান্ত্বনা পেতে পারে, প্রায় সব শক্তি শুষে নেওয়া শেষ বলে গড়ানো গত ম্যাচটির পর বাড়তি এক দিন বিশ্রাম অন্তত কাজে তো দেবে!

ভারতের সংবাদমাধ্যম এর আগে ব্যাখ্যা দিয়েছিল, দুবাইয়ে ভারতের ম্যাচগুলো হওয়ার কারণ এখানে টিকিট বিক্রি থেকে বেশি আয় হবে। আর এসিসির আয় মানে তো উঠতি দেশগুলোরই উন্নয়নের বাজেট। তবে না বললেও বুঝে নেওয়া যায়, ভারত স্বাগতিক হিসেবে সর্বোচ্চ সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছে। এমনকি থেকেছেও ভিন্ন হোটেলে। এবারের এশিয়া কাপের আয়োজক আরব আমিরাত হলেও মূল স্বাগতিক কিন্তু ভারত-ই।

অবশ্য স্বাগতিক হিসেবে সব দলই বাড়তি সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে। ২০১৬ এশিয়া কাপের ফাইনালের আগে স্বাগতিক বাংলাদেশ চার দিন সময় পেয়েছিল, ভারত পেয়েছিল তিন দিন। যদিও ২০১২ এশিয়া কাপের ফাইনালের আগে পাকিস্তান চার দিন সময় পেয়েছিল, বাংলাদেশ পেয়েছিল দুই দিন।