দুর্ভাগা আফগানিস্তান...

এশিয়া কাপে নিজেদের সামর্থের প্রমাণ রেখেছে আফগানিস্তান। ছবি: এএফপি
এশিয়া কাপে নিজেদের সামর্থের প্রমাণ রেখেছে আফগানিস্তান। ছবি: এএফপি
>

এশিয়া কাপের প্রতিটি ম্যাচেই দুর্দন্ত ছিল আফগানিস্তান। দুটি ম্যাচ জিতে আর একটি টাই করেও ফাইনাল না খেলতে পারা আফগানিস্তান নিজেদের দুর্ভাগা ভাবতেই পারে। তবে আফগান ক্রিকেটের নতুন যুগের শুরুটা কিন্তু হয়েই গেছে।

ম্যাচটা ছিল নিছক নিয়ম রক্ষার। ফাইনালে আগেই নিশ্চিত হয়ে গেছে ভারতের। বাংলাদেশের কাছে হেরে আফগানিস্তানের বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে এরই মধ্যে। কিন্তু তথাকথিত নিয়ম রক্ষার ম্যাচও যে দর্শকদের স্নায়ুর পরীক্ষা নিতে পারে, কাল সেটিই দেখা গেল দুবাইয়ে। ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসের ৩৬তম ‘টাই’ উপভোগ করলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। সেই সঙ্গে আফগানিস্তানের প্রতি একধরনের সমবেদনাও ছড়িয়ে পড়ল—এবারের এশিয়া কাপে বড় দুর্ভাগা দল যে তারা!

দুর্ভাগা নয়তো কী! বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কাকে রীতিমতো উড়িয়ে দিয়ে সুপার ফোরে উঠেছিল তারা। কিন্তু পাকিস্তান আর বাংলাদেশের বিপক্ষে পরপর দুটি ম্যাচ শেষ ওভারে গিয়ে হেরে বিদায় নিশ্চিত হয় তাদের। কাল শেষ ম্যাচে ভারতকেও তো প্রায় হারিয়ে দিয়েছিল তারা। কিন্তু সেটি হয়নি। জয় না পেলেও ভারতের বিপক্ষে ‘টাই’ জয়ের সমানই তাদের জন্য। মাথা উঁচু করে এশিয়া কাপ শেষ করলেও আফগানিস্তান একটা আফসোস রেখেই যাচ্ছে—ক্রিকেটে সব সময়ই ভালো দল সাফল্য পায় না!

দলটা সদ্যই টেস্ট মর্যাদা পেয়েছে। কিন্তু সীমিত ওভারের ক্রিকেটে এরই মধ্যে নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়ে ফেলেছে তারা। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আফগানরা তো রীতিমতো আতঙ্কের বিষয়। গত জুনেই অ্যাওয়ে সিরিজে ধবলধোলাই হয়ে সেটি খুব ভালো বুঝেছে বাংলাদেশ। এবারের এশিয়া কাপে তারা সবাইকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে ৫০ ওভারের ক্রিকেটটাও তারা খুব ভালো খেলে। এবারের আসরে শ্রীলঙ্কা আর বাংলাদেশকে হারিয়ে আফগান ক্রিকেটাররা ‘চ্যাম্পিয়ন’ হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। তাদের এই ‘দম্ভোক্তি’তে অনেকেই বাঁকা চোখে তাকালেও তারা যে সেই আশাবাদ বিশ্বাস থেকেই রেখেছিল এশিয়া কাপের প্রতিটি ম্যাচে তো তারই প্রামাণ্য প্রমাণ।

আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় শক্তি, দলটা কাউকেই ভয় পায় না। কোনো পরিস্থিতিতেই নিজেদের দুর্বল ভাবে না। বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচের কথাই ধরুন, কঠিন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের বোলারদের ভালো বোলিংয়ের মুখেও আফগান ব্যাটসম্যানরা চোয়াল শক্ত করে লড়লেন—কোনোমতেই উইকেট হারানো যাবে না। ওভারপ্রতি আস্কিং রানরেট বেড়ে যেতে থাকলেও আফগানরা সেই বিশ্বাসে অটল রইলেন। একটা দল নিজেদের সামর্থ্যে কতটুকু আস্থাশীল, এটি তারই প্রমাণ। তারা ধরেই নিয়েছিল, হাতে উইকেট রেখে শেষ ১০ ওভারের চৌহদ্দিতে প্রবেশ করতে পারলেই কিছু একটা করা যাবে। আস্কিং রেটটা তো আর বেড়ে ১৪-১৫ হয়ে যায়নি। মোহাম্মদ নবীর ব্যাটে সেদিন পরিকল্পনামাফিকই এগিয়ে গিয়েছিল তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা পারেনি। বাংলাদেশের সাকিব-মাশরাফি আর সর্বোপরি মোস্তাফিজুর রহমানের বোলিংয়ে কাজের কাজটা করতে না পারলেও দলটি কতটা ভালো, সেটি সবাইকে চোখে আঙুল দিয়েই দেখিয়েছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি শেষ ওভারে হেরে আফগান পেসার আফতাবের কান্নায় সবাই বুঝতে পেরেছিল ক্রিকেটটা দরদ দিয়েই খেলে তারা।

কাল ভারতের বিপক্ষে পাল্টা আক্রমণের পরিকল্পনাটা ভালোই কাজে লেগেছিল। উল্টো মেরে খেললে ভারতের বোলিংও এলোমেলো হয়ে যায়—আফগানরা সেটিই বাকিদের শিখিয়েছে। মোহাম্মদ শেজাদের সাহসী ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি সেই মোহাম্মদ নবী; ভারতকে ২৫৩ রানের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে হুমকিটা ভালোই দিয়েছিল আফগানরা। তবে লোকেশ রাহুল, আম্বাতি রায়ডু আর দিনেশ কার্তিকের ব্যাটিংয়ে শুরুটা ভারত নিজেদের মতো করলেও শেষ রক্ষা হয়নি আফতাব আলম, নবী আর রশিদ খানের বোলিংয়ে। শেষ দিকে কুলদীপ যাদব আর রবীন্দ্র জাদেজা মেরে খেলে ভারতকে প্রায় জেতার দোরগোড়ায় এনে দিলেও রশিদ খানের শেষ ওভারটি ভারতকে জিততে দেয়নি। অবিস্মরণীয় এক টাইয়ে ইতিহাসে নিজেদের নাম লিখেই এশিয়া কাপের অভিযান শেষ করেছে আফগানিস্তান।
এশিয়া কাপে শেষ হলেও আফগান ক্রিকেটে নতুন যুগের সূচনা কিন্তু হলো এখান থেকেই...