'আমরা পাঁচজন না থাকলেও তো চলতে হবে'

মিরাজ-মোস্তাফিজদের পারফরম্যান্সের প্রশংসা করেছেন মুশফিক। ছবি: এএফপি
মিরাজ-মোস্তাফিজদের পারফরম্যান্সের প্রশংসা করেছেন মুশফিক। ছবি: এএফপি
>পাকিস্তানের মুখোমুখি হওয়ার আগে বাংলাদেশ দলের সিনিয়র খেলোয়াড়েরা তরুণদের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, একদিন তাঁরা থাকবেন না। তখন তো পথ চলতে হবে। এই প্রেরণা থেকেই লড়াইয়ের আত্মবিশ্বাস পেয়েছে তরুণেরা

‘ফ্যাবুলাস ফাইভ’—কথাটা এক সময় ভারতীয় ক্রিকেটে প্রচলিত ছিল। এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটে। তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মুর্তজা, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ—এই হলো বাংলাদেশের ‘পঞ্চপাণ্ডব’—বা ‘ফ্যাব ফাইভ’। দলের বিপর্যয়ে সব সময় চওড়া তাঁদের ব্যাট, ক্ষুরধার বোলিং আর নিজেকে নিংড়ে দেওয়া ফিল্ডিং। কিন্তু একদিন তো সবার সময় ফুরিয়ে আসে। দল থেকে বিদায় নিতে হয়। বাংলাদেশ দলের এই পাঁচ ‘প্রাণভোমরা’ না থাকলে তখন কী হবে!

কথাটা এখন ভাবলেই গায়ে কেমন কাঁটা দিয়ে ওঠে। বাংলাদেশ দল যে এই পাঁচজনের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল—তা সমর্থক মাত্রই জানেন। তাঁরা না থাকলে কী হবে? কাল কিন্তু এই প্রশ্নের জবাব মিলেছে। তামিম ও সাকিব তো ম্যাচের আগে থেকেই নেই। দল ফিল্ডিং করার সময় প্রায় একই সময়ের ব্যবধানে মাঠের বাইরে ছিলেন মাশরাফি ও মুশফিক। অর্থাৎ প্রায় ‘ফ্যাব ফাইভ’ ছাড়া বাংলাদেশ। কত দিন পর এমন দৃশ্য দেখা গেল? তার চেয়েও বড় ব্যাপার, এই চারজন ছাড়াই পাকিস্তানকে চেপে ধরার লক্ষ্য থেকে দল এতটুকু পথচ্যুত হয়নি। অর্থাৎ মোস্তাফিজ, মিঠুন, মিরাজরা যে পরিণত হয়ে উঠছেন তা পরিষ্কার।

এশিয়া কাপের ফাইনাল নিশ্চিতের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে মুশফিক সে কথাই বললেন। ‘ফ্যাব ফাইভ’-এর না থাকার প্রসঙ্গ উঠেছিল মাঠে নামার আগেই। কারণ সাকিব-তামিমের অনুপস্থিতিতে দলের তরুণের ওপর নেতিবাচক মানসিক প্রভাব পড়ুক—সিনিয়র খেলোয়াড়েরা তা চাননি। আর তাই ভবিষ্যতের সেই সময়টা তরুণদের মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যখন সাকিব,তামিম, মুশফিক, মাশরাফি, মাহমুদউল্লাহদের কেউ থাকবে না। মুশফিক বলেন, ‘অনেক সময় হয়তো আমিও দলে থাকব না। আমরা পাঁচজনের কেউই থাকব না। তারপরও তো চলতে হবে। এই একটা কথাই হয়েছিল। আর সবাই সেদিক থেকে আত্মবিশ্বাস পেয়েছে।’

এই আত্মবিশ্বাস মাঠের লড়াইয়ে তরুণেরা কতটুকু কাজে লাগিয়েছে? স্কোরবোর্ড থেকে পরিষ্কার ধারণা মিলবে না। ম্যাচটা দেখে থাকলে তা বোঝা সম্ভব। দ্রুত ৩ উইকেট পড়ার পর দলের ইনিংস-সঞ্জীবনী ফিফটি তুলে নিয়েছেন মোহাম্মদ মিঠুন। সৌম্য ব্যাটিংয়ে খারাপ করলেও বল হাতে পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। দলে একজন বিশেষজ্ঞ বোলার কম থাকতে সৌম্যর ওই ৫ ওভার (১/১৯) দারুণ কাজে লেগেছে। লিটনও ব্যাট হাতে ব্যর্থ এবং উইকেটের পেছনে দুটি ক্যাচ ছাড়লেও প্রয়োজনের মুহূর্তে দারুণ দুটি স্ট্যাম্পিং করেছেন। মিরাজ তো বরাবরই বোলিংয়ের বিশ্বস্ত নাম। কাল তাঁর বোলিং ফিগার ১০-১-২৮-২। পাকিস্তানি টপ অর্ডারে তিন ব্যাটসম্যানের মধ্যে দুজনকে দ্রুত তুলে নিয়ে চাপ সৃষ্টি করেছেন মোস্তাফিজ। মুশফিক তাই দলে অপেক্ষাকৃত তরুণদের প্রশংসা করলেন, ‘আপনারা যদি পারফরম্যান্স দেখেন মোস্তাফিজ, মেহেদি, মিঠুন...এই জুনিয়রেরাই আমাদের আজকের ম্যাচের বড় হিরো।’

কাল এশিয়া কাপের ফাইনালে প্রতিপক্ষ ভারত। এর আগে এশিয়া কাপে দুইবার ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। তৃতীয়বারের চেষ্টায় কি ধরা দেবে শিরোপা? মুশফিক জানালেন, জিততে হলে সেরা ক্রিকেট খেলতে হবে। টপ অর্ডার এখনো ভালো করেনি। কাল টপ অর্ডার এই চ্যালেঞ্জটা নিলে কাজটা সহজ হয়ে যায় বলেই মনে করছেন মুশফিক, ‘আমরা এখনো সেরা ক্রিকেটটা খেলতে পারিনি, তিন বিভাগের কথা যদি বলি। আমাদের টপ অর্ডার এখনো ভালো করেনি। ভারতের বিপক্ষে যদি আমাদের টপ অর্ডার ভালো করে, তাহলে ভালো হবে।’

এশিয়া কাপে গতবার ফাইনালে ভারতের কাছে হেরেছে বাংলাদেশ। রোহিত শর্মার দল এবারও দারুণ খেলে উঠেছে ফাইনালে। মুশফিক কিন্তু তাঁদের হারানোর পথটা দেখতে পাচ্ছেন, ‘ভারত এই টুর্নামেন্টে দারুণ ক্রিকেট খেলছে। কিন্তু তারাও মানুষ, ভুল তারা করবেই। আমরা যদি ভালো স্কোর গড়তে পারি, তাহলে আমরা পরে তাদের চাপে ফেলতে পারব। অথবা আমাদের যদি বড় স্কোর তাড়া করতে হয় তাহলে ভালো শুরু পেলে আমরা জয় পেতে পারি। এই টুর্নামেন্টে আমরা এটাই অর্জন করতে চাই।’