আক্ষেপ হয়েই রইল এশিয়া কাপ

এবারও হলো না! ছবি: এএফপি
এবারও হলো না! ছবি: এএফপি
  • বাংলাদেশ ৪৮.৩ ওভারে ২২২/১০
  • ভারত ৫০ ওভারে ২২৩/৭
  • ভারত ৩ উইকেটে জয়ী
  • সপ্তমবারের মতো ভারত এশিয়া কাপ জিতল, তৃতীয়বারের মতো রানার্স আপ বাংলাদেশ
  • ১২১ রানের ইনিংস খেলে ম্যান অব ফাইনাল লিটন দাস, শিখর ধাওয়ান ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট

আরও একটি ফাইনাল। আরও একটি আক্ষেপের গল্প বাংলাদেশের জন্য। অথচ দুবাইয়ের রাতটা অন্য রকম হওয়ার কথা ছিল। সেই সম্ভাবনা ছিল ব্যাটিংয়ে। ছিল বোলিংয়ে। ছিল জান লড়িয়ে দেওয়া ফিল্ডিংয়ে। বিনা উইকেটে ১২০ থেকে ২২২ রানে অলআউট হওয়ার প্রায়শ্চিত্ত বাংলাদেশ প্রায় করেই ফেলেছিল। বোলাররা শুরু থেকে প্রতিটা রানের জন্য ভারতকে লড়াই করতে বাধ্য করেছে। কিন্তু টুর্নামেন্টের ট্রফিটা যে বাংলাদেশের জন্য অধরা থেকে যাবে বলেই নিয়তি ঠিক করে রেখেছে! শেষ ওভারে ম্যাচটা টেনে নিয়ে গিয়ে, ভারতের সেরা ব্যাটসম্যানদের আগেই সাজঘরে ফিরিয়েও বাংলাদেশ পারল না। শেষ বলে বাংলাদেশকে হারিয়ে সপ্তমবারের মতো এশিয়া কাপ জিতল ভারত।

শেষ ওভারে মাত্র ৬ রান দরকার ছিল ভারতের। এবার এশিয়া কাপে শেষ ওভারে ৮ রান লাগে এমন পরিস্থিতিতেও বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। কিন্তু এবার মোস্তাফিজের ১০ ওভার আগেই ফুরিয়ে গিয়েছিল। শেষ ওভারে কে? নিদাহাস ট্রফির ফাইনালের ফাইনাল ওভার করা সৌম্য সরকারই তো এগিয়ে আসছেন! এমন পরিস্থিতিতে পেসাররাই বেশি কার্যকর। কিন্তু সৌম্যকে ফিরিয়ে মাহমুদউল্লাহর সোনালি হাতের ওপর ভরসা খুঁজতে চাইলেন অধিনায়ক। মাহমুদউল্লাহ চেষ্টা করেছেন। শেষ বল অবধি নিয়ে গেছেন ম্যাচ। ১ বলে ১ রান দরকার ভারতের, বাংলাদেশ রান আটকাতে পারলেও সুপার ওভার। কিন্তু শেষ বলটা একটু লেগের দিকে বেরিয়ে যাওয়ার মুখে কেদার যাদবের প্যাডে লেগে ফাইন লেগে ছুটে গেল। ভারত মেতে উঠল উদ্‌যাপনে।

আরও একবার হতাশায় মোড়ানো রাত বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য, আরও একবার একটুর জন্য না-পারার আক্ষেপ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ পুরুষ দলের ষষ্ঠ ফাইনাল ছিল আজ। এর আগে ৫ ফাইনালে কোনোবারই জেতা হয়নি। আজও গল্পের শেষটা হ্যাপি এন্ডিং হলো না! কখনো প্রতিপক্ষের টেল এন্ডের বীরত্ব, কখনোবা বাংলাদেশের টেল এন্ডের চাপ নিতে না পারা কখনোবা ভাগ্যদেবীর কোনোভাবেই বাংলাদেশের দিকে মুখ না ফেরানো আগের পাঁচবারই হতাশ করেছে। আজ ২২২ রান করে ম্যাচের প্রথমার্ধেই হতাশার রেণু ছড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। শেষ বলের জয়ে আরেকটি এশিয়া কাপের ট্রফি নিয়ে ভারত যখন দুবাই ছাড়ার পরিকল্পনায় ব্যস্ত, তখন বাংলাদেশের ভাবনায় ব্রুসের সেই গল্প। দানে দানে সাতে যদি কিছু হয়!

ছয়েই হতে পারত। ২২২ রানে আটকে গিয়েও আশা জেগেছিল, যখন রোহিত শর্মা ৪৮ রানে ফিরে গেলেন। ইনিংসের তখনো ২০০ বল বাকি ছিল, ভারতের জয়ের জন্য দরকার ১৪০ রান। সমীকরণটা আপাতদৃষ্টিতে সহজ মনে হতে পারে। কোহলিবিহীন এই দলে রোহিতই যে ছিলেন সবচেয়ে বড় আতঙ্ক। আর নিকট অতীতে বাংলাদেশকে বারবার হতাশ করার দায়িত্বটা যে ওয়ানডেতে তিনটি দ্বিশতকের মালিক। সেই রোহিত আউট, একটু নড়েচড়ে বসতে তাই আপত্তি ছিল না। ফর্মে থাকা শিখর ধাওয়ান ও আম্বাতি রাইডুও বিদায় নিয়েছেন এর আগেই। বাকি সাত উইকেট তুলে নেওয়ার কাজটা কঠিন হতে পারে, অসম্ভব নয়।

অনেক দিন পর রুবেলের বলে দেখা গিয়েছিল পুরোনো সেই গতির ঝলক। লাইন–লেংথ ধরে রেখে ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করে রোহিতকে আউট করার পরও দায়িত্ব শেষ বলে মেনে নেননি। ভারতের পরের ব্যাটসম্যানদের রান তোলার কাজটাও কঠিন করে তুলেছিলেন। কিন্তু এ সুযোগটা নিতে পারেননি অন্য বোলাররা। ব্যাটিংয়ে লিটন দাস যেমন একা পড়ে গিয়েছিলেন বোলিংয়েও রুবেল কাউকে পেলেন না সঙ্গী হিসেবে।

মহেন্দ্র সিং ধোনি ও দিনেশ কার্তিক প্রথমে একটু রয়ে সয়ে খেললেও খানিক পরে আঁটসাঁট হয়ে বসা চাপটাকে আলগা করে নিয়েছেন। কবজি ও পায়ের ব্যবহারের সঙ্গে বাংলাদেশি বোলারদের টানা ছয়টি বল এক জায়গায় ফেলতে না পারার ব্যর্থতাও সেখানে প্রভাব ফেলেছে। এই এশিয়া কাপে নিজের বোলার সত্তাকে ফিরে পাওয়া মাহমুদউল্লাহ কার্তিককে যখন ফেরালেন, তখনো আশা ছিল। জয় থেকে তখনো ৮৬ রান দূরে ভারত। পথের কাঁটা শুধু ধোনি আর কেদার যাদব। রবীন্দ্র জাদেজা আফগানিস্তানের বিপক্ষে ফিনিশারের চাপটা নিতে পারেননি, আজ পারবেন সে নিশ্চয়তা কোথায়!

তবে বিশ্বাসটা দৃঢ় হয়েছে ৩৭তম ওভারে। মোস্তাফিজের বলে খোঁচা দিয়ে বসলেন ধোনি। এক প্রান্তে উইকেটে মাত্র আসা জাদেজা, অন্যদিকে পায়ে ক্র্যাম্প হওয়া যাদব। রান ও বলের সমীকরণে বলের সংখ্যা ২০ বেশি হতে পারে কিন্তু চাপটা তখন ভারতের দিকেই। একটু পরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে যাদবের মাঠ ছাড়াতে চাপটা বেড়েছে আরও। তখনো ১২ ওভারে ৫৬ রান করতে হবে ভারতকে। স্বীকৃত ব্যাটসম্যান বলতে শুধু জাদেজা।

কিন্তু ভুবনেশ্বর নেমে সেটাই করলেন, যা বাংলাদেশের মিডল অর্ডারের কেউ করতে পারেননি। জাদেজার ওপর রান তোলার দায়িত্বটা দিয়ে নিজের উইকেট অক্ষুণ্ন রাখলেন । আর মাত্র ২২৩ রানের লক্ষ্যটাও আশা বাঁচিয়ে রেখেছে ভারতের। শুধু স্ট্রাইক রোটেট করেই লক্ষ্যটা হাতের নাগালে নিয়ে আসলেন দুজন। মাত্র ১১ রান দূরে থাকতে আরেকবার আশা জেগে উঠল। রুবেলের বলে উইকেটের পেছনে ধরা পড়লেন জাদেজা। তবে ব্যাটসম্যান কিংবা মুশফিক বুঝলেও আম্পায়ার বুঝতে পারেননি, সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের পক্ষে আনতে রিভিউর সাহায্য নিতে হয়েছে। পরের ওভারেই ভুবনেশ্বরকে ফিরিয়ে রোমাঞ্চ ছড়ালেন মোস্তাফিজ। সঙ্গে দীর্ঘশ্বাসও, একটু বেশিই দেরি হয়ে গেল কি?

শেষ ওভারে ৬ রান দূরে ছিল ভারত। কিন্তু মূল বোলারদের কারও হাতে বল দেওয়া যাচ্ছে না। নিদাহাস ট্রফির মতোই মেহেদী হাসান মিরাজে ভরসা পেল না বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহর ঘাড়ে পড়ল সে দায়। প্রথম তিন বলে এল চার রান। চতুর্থ বলে ডটের পর পঞ্চম বলে ১ রান। শেষ বলের উত্তেজনার সামনে সবাই। কী হয়, কী হয়! কিন্তু মাহমুদউল্লাহ বলটা ফেললেন লেগ স্টাম্পে। পায়ের ক্রাম্প নিয়েও ফেরত আসার যাদবের সে বল পেছনে ঠেলে দিতে কোনো অসুবিধা হলো না। আরেকটি ফাইনাল আরেকটি আক্ষেপের গল্প লিখেই শেষ করল বাংলাদেশ।