মাশরাফির বাংলাদেশ থেকে শিখছেন তাঁরাও

ক্রিকেট দলের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন ফুটবলাররা। ফাইল ছবি
ক্রিকেট দলের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন ফুটবলাররা। ফাইল ছবি
>

এশিয়া কাপে শিরোপা জিততে না পারলেও ভারতকে নাকানিচুবানি খাইয়েছে বাংলাদেশ। ক্রিকেটারদের লড়াকু এই মনোভাব থেকে অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন ফুটবলাররা।

কী লড়াকু মনোভাব! কী চোয়াল শক্ত করা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এক দল! ভবিষ্যতের জন্য বড় হুমকি হয়ে ওঠা কোনো চোট-আঘাতও থামিয়ে দিতে পারে না যাঁদের। পিঠের পাঁজরে ব্যথা, সেখানে টেপ লাগিয়েই দুর্দান্ত ব্যাটিং ও উইকেট কিপিংয়ের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। ডান হাতে ব্যান্ডেজ, শুধু বাঁ হাতে ব্যাট ধরেই ক্রিজে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের এই বীরত্বগাথার সামনে শ্রদ্ধায় মাথা নত হবেই! আর লড়াকু দলটিকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা।

গতকাল লিটনের ফিফটির পরের দৃশ্যটাই মনে করে দেখুন। চোয়াল শক্ত করে মুষ্টিমেয় হাতটাকে বুকের বাঁ পাশে কয়েকবার বাড়ি দিলেন। দুহাত প্রসারিত করে ইঙ্গিত দিলেন ইনিংসটাকে আরও বড় করার। ড্রেসিংরুম থেকে মাশরাফির এই ‘পেপ টক’ এরপরও ছোট একটা ভুল করেছিলেন লিটন দাস। কিন্তু অধিনায়কের কাছ থেকে পাওয়া সে বার্তা পরে পাথেয় মেনে চলা লিটন থামলেন ১২১ রানে। লিটন ১২১ করলেও বাকি দশ ব্যাটসম্যান তুলেছেন মাত্র ৯৪ রান। বাংলাদেশের ইনিংস থামল মাত্র ২২২ রানে। এ নিয়ে সমালোচনার স্রোত বইছিল। কিন্তু পরাক্রমশালী ব্যাটিং লাইনআপের ভারতের সামনে ২২২ রানের স্বল্প পুঁজিটাই হয়ে উঠল পাহাড়সমান। বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে প্রতিটা রান আটকে রাখতে চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ।

কে ভেবেছিল শিখর ধাওয়ান, রোহিত শর্মাদের ব্যাটসম্যানদের ২২৩ রান করতে জ্বর দিয়ে ঘাম ছাড়বে? এর চেয়ে বেশি রান করেও পাকিস্তান ৯ উইকেটে হেরেছে কদিন আগেই। ১০ ওভারেরও বেশি বাকি ছিল ম্যাচের। আর কাল ভারতের জয়কে বাংলাদেশের হাতের মুঠো থেকে বের হয়ে যাওয়া জয় বললেও ভুল হচ্ছে না! শেষ বলে গড়ানো ম্যাচে এক রান প্রয়োজন। বলটা একটু লেগের দিকে বেরিয়ে যাওয়ার মুখে কেদার যাদবের প্যাডে লেগে ফাইন লেগে ছুটে গেল। ভারত মেতে উঠল উদ্‌যাপনে।

হ্যাঁ, স্কোর বোর্ডে বাংলাদেশ হেরেছে। কিন্তু খেলার বাইরেও বড়াই করার মতো অনেক কিছুই আছে। যে পরাজয় থেকেই শিক্ষা নিচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় দলের ফুটবলাররা। মাশরাফির দলের থেকেই অনুপ্রেরণা নিচ্ছেন ফুটবলাররা।

আগামী ১ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাওয়া বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের জন্য এখন সিলেটে অবস্থান করছে জাতীয় ফুটবল দল। আজ সকালে অনুশীলন আছে, গতকাল রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর কথা ছিল। কিন্তু চেষ্টা করেও পারেননি তপু বর্মণ। গতকাল রাতে নাকি টিভিই বন্ধ করতে পারছিলেন না সাফে ভুটান ও পাকিস্তানের বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচে গোল করা জাতীয় দলের এই ডিফেন্ডার। শেষ পর্যন্ত লড়াই কত দূর পর্যন্ত গড়ায়, তা দেখতে দেখতেই ম্যাচটি দেখা। বৃথা যায়নি তাঁর জেগে থাকা। শেষ বল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া ম্যাচ থেকে অনেক অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন তপু, ‘মাশরাফির কাছ থেকে প্রত্যেকটা মানুষের শেখার আছে। আমাদের খেলোয়াড়দের তো আরও অনেক বেশি। যেভাবে দলটার মধ্যে দারুণ টিম ফিলিংস তৈরি করেছেন, তা আমাদেরও প্রভাবিত করে। ইউটিউবে রমিজ রাজার প্রশংসা শুনলাম মাশরাফিকে নিয়ে। আমিও তো চাই আমাকে নিয়ে ও আমাদের ফুটবল দলকে নিয়ে এমন প্রশংসা করুক মানুষ।’

টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই বারবার আলোচনায় আসছিল অতিরিক্ত গরমের কথা। এর মধ্যে খেলোয়াড়দের ইনজুরি ও ঠাসা সূচিতে ম্যাচ খেলে মাত্র এক দিনের বিরতিতে ফাইনাল খেলতে নেমে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ভারতকে নাকানিচুবানি খাওয়ানো। এই লড়াকু মানসিকতাটাই নিজেদের মধ্যে আরও বাড়াতে চান বাংলাদেশ দলের গোলরক্ষক আশরাফুল রানা, ‘আমাদের ক্রিকেট দলের সবচেয়ে বড় শক্তি মনে হয় লড়িয়ে মানসিকতা। এই জিনিসটাই ক্রিকেট দলটাকে অনেক এগিয়ে নিয়েছে। এখান থেকে আমরা সবাই শিখতে পারি। আমাদের ফুটবল দলে শক্ত মানসিকতা তৈরি হয়েছে। এখন আরও বেশি প্রয়োজন।’

কে জানে, এশিয়া কাপের এই লড়াকু ক্রিকেট দলকে দেখেও তো বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে দেখা যেতে পারে উদ্যমী এক ফুটবল দলকে! দুই দলের জার্সিতেই তো বাংলাদেশের পতাকা।