'রশিদ খান' হয়ে উঠলেন জুবায়ের, আগের মতোই দুর্দান্ত তুষার

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তুষারের ২৯তম সেঞ্চুরি। সৌজন্য ছবি
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তুষারের ২৯তম সেঞ্চুরি। সৌজন্য ছবি

২০তম জাতীয় লিগ শুরু হয়েছে আজ। জাতীয় লিগের প্রথম দিনে সেঞ্চুরি করেছেন তুষার ইমরান, আরিফুল হক ও সাদমান ইসলাম। ৫ উইকেটে পেয়েছেন পেসার শফিউল ইসলাম ও লেগ স্পিনার জুবায়ের হোসেন।


ফতুল্লার সবুজ উইকেটে ঢাকা বিভাগের বিপক্ষে তোপ দাগার কথা ছিল চট্টগ্রামের পেসারদের। কিন্তু তোপ নয়, ঢাকার ব্যাটসম্যানদের ঘূর্ণিতেই কাবু করে ফেললেন চট্টগ্রামের স্পিনাররা। বিশেষ করে জুবায়ের হোসেন। জাতীয় দলের বাইরে থাকা এ লেগ স্পিনার অবশ্য কাগজে–কলমে এবার চট্টগ্রামের, যদিও তিনি ঢাকা বিভাগেরই (জামালপুর থেকে উঠে আসা) সন্তান। অনেক দিন পর দুর্দান্ত জুবায়েরকে দেখা গেল আজ। জাতীয় লিগের প্রথম দিনে তাঁর দুর্দান্ত বোলিংয়ে ভালো অবস্থানে আছে চট্টগ্রাম। 


সবুজ উইকেটে টস জিতে ঢাকা বিভাগকে ব্যাটিং করতে পাঠান চট্টগ্রামের অধিনায়ক। শুরুতে পেসাররা প্রত্যাশিত সাফল্য না পেলেও ঢাকাকে ধসিয়ে দেওয়ার কাজটা করেন চট্টগ্রামের স্পিনাররা। ঢাকা অলআউট ২৩৮ রানে। রনি তালুকদার ৫৯ ও তাইবুর রহমান ৬৩ রান করেছেন । চট্টগ্রামের বোলারদের মধ্যে বেশি সফল জুবায়ের। পেয়েছেন ৬১ রানে ৫ উইকেট। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে জুবায়ের ৫ উইকেট পেলেন প্রায় ৪ বছর পর। সবশেষ পেয়েছিলেন ২০১৪ সালের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, চট্টগ্রাম টেস্টে। বিরতিটা এত বেশি হয়ে গেছে ২৩ বছর বয়সী লেগ স্পিনারের স্মৃতিতেও সেটি নেই, ‘উইকেট ছিল সবুজ। মূলত পেস বোলিং-সহায়ক। তবুও ভালো লাগছে, অনেক দিন পর ৫ উইকেট পেলাম। কত দিন পর ৫ উইকেট পেয়েছি, সেটা অবশ্য মনে করতে পারছি না। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটই তো খেলতে নামলাম দেড় বছর পর।’

দুবাই থেকে ফিরেই আরিফুলের সেঞ্চুরি। সৌজন্য ছবি
দুবাই থেকে ফিরেই আরিফুলের সেঞ্চুরি। সৌজন্য ছবি

একজন লেগ স্পিনারের হাহাকার বাংলাদেশ ক্রিকেটে বহু পুরোনো। সেই হাহাকারটা বাড়ে যখন আফগানিস্তানের রশিদ খান, ভারতের কুলদীপ যাদব কিংবা পাকিস্তানের শাদাব খান আলো ছড়ান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। মাঝে জুবায়ের বাংলাদেশ ক্রিকেটে এসেছিলেন লেগ স্পিনারের শূন্যতা পূরণ করতে। কিন্তু তিনিও প্রত্যাশার প্রতিদান দিতে ব্যর্থ। জুবায়ের অবশ্য নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন। জুবায়ের আত্মবিশ্বাসী, সেই হারিয়ে যাওয়া পথটা খুঁজে পেতে খুব বেশি সময় লাগবে না তাঁর, ‘আজ ৫ উইকেটের তিনটাই পেয়েছি গুগলিতে। আমার বোলিংয়ের সবচেয়ে দুর্বলতা ছিল ওভারে এক-দুইটা খারাপ বোলিং করে ফেলি। আজ চেষ্টা করেছি এটা নিয়ন্ত্রণ করতে। ব্যাটসম্যানদের সামনে খেলিয়েছি। আজকের বোলিংয়ে সবচেয়ে তৃপ্তির জায়গা এটাই—অ্যাকুরেসি ভালো ছিল। এটা ধরে রাখতে পারলে ভালো কিছুই হবে।’

ফতুল্লায় জুবায়ের যখন ঘূর্ণি জাদু দেখাচ্ছেন রাজশাহীতে তখন সবুজ উইকেটে তোপ দাগছেন শফিউল ইসলাম। জাতীয় দলের বাইরে থাকা এ পেসারের দারুণ বোলিংয়ে খুলনা বিভাগ অলআউট ২১০ রানে। সবুজ উইকেটে কেমন ব্যাটিং করবেন, সেটি নিয়ে ভাবনার অন্ত ছিল না তুষার ইমরানের। ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে রানের বন্যা বইয়ে দেওয়ার পরও খুলনার এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের সামনে খোলে না জাতীয় দলের দরজা। এবারও রাজশাহীর বিপক্ষে সেঞ্চুরি দিয়ে জাতীয় লিগ শুরু করেছেন তুষার। অথচ খুলনা দলে খেলছেন এনামুল হক, আফিফ হোসেন, নুরুল হাসান, সৌম্য সরকারের মতো তারকা ব্যাটসম্যানরা। তুষারের ১০৪ রানের সৌজন্যেই খুলনার স্কোরটা কোনোমতে ভদ্রস্থ হয়েছে। প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং করতে নেমে ১ উইকেটে ১২২ রান তুলে দিন শেষ করেছে রাজশাহী। দলের অবস্থান ভালো নয় বলে তুষার তৃপ্ত হতে পারছেন না তাঁর সেঞ্চুরি নিয়ে, ‘সবুজ উইকেটে কীভাবে ব্যাটিং করতে হয়, সেটা আমার অজানা নয়। এর আগেও ব্যাটিং করেছি এমন উইকেটে। জাতীয় লিগে রান করলেই অনেকে বলেন ন্যাড়া উইকেটে ব্যাটিং করেছি। কিন্তু আজ যে উইকেটে সেঞ্চুরি করেছি, সেটা দেখা উচিত। সকালে উইকেট ছিল বোলিংবান্ধব, ৫৫ রানে ৫ উইকেটে পড়ে যাওয়াই সেই যে আমরা ব্যাকফুটে চলে গেছি আমি সেঞ্চুরির পরও সেটি কাটিয়ে উঠতে পারিনি।’

অনেক দিন পর দুর্দান্ত জুবায়েরকে দেখা গেল । ছবি: ফেসবুক
অনেক দিন পর দুর্দান্ত জুবায়েরকে দেখা গেল । ছবি: ফেসবুক

তুষার তৃপ্ত না হতে পারলেও আরিফুল হক সেঞ্চুরি করে বেশ খুশি। এশিয়া কাপে বাংলাদেশ দলে থাকলেও খেলা হয়নি একটি ম্যাচও। তবে দুবাইয়ের কন্ডিশনে আর ভ্রমণ ঝক্কি নিশ্চয়ই ছিল। সে সব অবশ্য স্পর্শ করেনি আরিফুলকে। আগের দিন ঢাকায় ফিরেই পরের দিন বগুড়ায় প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলতে নেমে করেছেন সেঞ্চুরি। তাঁর অপরাজিত ১১৭ রান ও নাঈম ইসলামের ৯২ রানের সৌজন্যে রংপুর ৫ উইকেটে ৩০০ রান করে দিন শেষ করেছে।

জাতীয় লিগের প্রথম দিনটা সবচেয়ে ভালো কাটার কথা সাদমান ইসলামের। তরুণ এ ওপেনারের ১৫৭ রানের সুবাদে সিলেটের বিপক্ষে ঢাকা মহানগর দিন শেষ করেছে ৪ উইকেটে ৩৩২ রান তুলে।