হারের কষ্টটা বুকে বিঁধছে যুবা ক্রিকেটারদের

ভারতীয় বোলিংয়ের সামনে বুক চিতিয়ে লড়েছিলেন শামীম। কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারেননি। ছবি: রানা আব্বাস
ভারতীয় বোলিংয়ের সামনে বুক চিতিয়ে লড়েছিলেন শামীম। কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারেননি। ছবি: রানা আব্বাস
>অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের সেমিফাইনালে বাংলাদেশ যুবদল আজ ভারতের কাছে হেরেছে ২ রান। আবারও সেই তীরে এসে তরি ডোবার গল্প! দলের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান শামীম দুর্দান্ত ব্যাটিং করে জয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। কিন্তু দিনশেষে তিনিও কাঠগড়ায় উঠবেন নিজের উইকেটটা ছুড়ে দেওয়ার ‘অপরাধে’! ম্যাচ শেষে হারের কষ্টে সংবাদমাধ্যমের সামনে কথাই বলতে পারলেন না শামীম

দলের কেউ কথা বলবেন না? বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ড্রেসিংরুমের সামনে সুনসান নীরবতা দেখে সাংবাদিকদের মনে সংশয়, সিনিয়র দলই যেখানে এমন মুহূর্তে ভাষা হারিয়ে ফেলে, যুবারা আর কী বলবেন! পড়ন্ত বিকেলে, মরে আসা আলোয় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ড্রেসিংরুমটা তখন পরিণত হয়েছে শব বাড়িতে!
দলের প্রতিনিধি হয়ে বিষণ্ন মনে শেষ পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমের সামনে এলেন শামীম হোসেন, যাঁর হাত ধরে আজ বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখেছিল ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠার। যিনি চাপের মধ্যে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে আশার প্রদীপটা জ্বালিয়ে রেখেছিলেন অনেকক্ষণ। ৫৯ রানের ইনিংসটা খেলে তিনি যেমন স্বপ্ন দেখিয়েছেন, আবার তিনিই নিজের মূল্যবান উইকেটটা বিলিয়ে দিয়ে সেই স্বপ্নের জলাঞ্জলি দিয়েছেন। বয়স ১৯ পেরোয়নি বলে যুব দল খেলছেন, এখনো অনেক পথ পড়ে সামনে। তবুও ক্যারিয়ারের উষালগ্নে এমন হারের যন্ত্রণা যেন সহ্য করতে পারছেন না শামীম। কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে এতটুকুই বললেন, ‘এমন হাররে কষ্টটা তো বলে বোঝানো যাবে না। আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেছি ম্যাচটা শেষ করে আসার।’
আসলে কী-ই বা বলার আছে তাঁর? ভারতের মতো শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপকে ১৭২ রানে অলআউট করে দেওয়ার পর যেখানে বাংলাদেশ নিজেদের উঠানে জয়ের আনন্দ করবে, সেখানে তাদের পুড়তে হলো হতাশার যন্ত্রণায়। টপ অর্ডারের যাচ্ছেতাই ব্যাটিংয়ে ৬৫ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর শামীম-আকবর আলীর ষষ্ঠ উইকেট জুটি ৭৪ রান যোগ করে বাংলাদেশকে জয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছিল। কিন্তু হুড়মুড়িয়ে লোয়ার অর্ডার ধসে পড়া কিংবা শেষ ব্যাটসম্যান মিনহাজের পাগলাটে রানআউটে সব এলোমেলো হয়ে গেল।
শামীমের অসহায়, বিষণ্ন মুখটা দেখে মায়াই হচ্ছিল । কৈশোরের ছাপটা এখনো যায়নি। এই বয়সে, এই হারের পর কি না দিতে হচ্ছে সাংবাদিকদের কঠিন সব প্রশ্নের উত্তর! প্রশ্নগুলো এতই কঠিন, শামীমকে দেখে মনে হচ্ছিল তাঁর কাছে এর চেয়ে ভারতীয় বোলারদের খেলা সহজ! ম্যাচটা যদি বাংলাদেশ জিতত, তাহলে প্রশ্নগুলো হয়তো তাঁর কাছে এতটা কঠিন মনে হতো না। সুখের গল্প বলা যে সব সময়ই আনন্দের, সব সময়ই সহজ।
শামীমের বিধ্বস্ত চেহারাটা সংবাদ সম্মেলন বেশিক্ষণ এগোতে দেয়নি। কিন্তু বড় ম্যাচের চ্যালেঞ্জ উতরে যাওয়ার পথ খুঁজে না পেলে শামীমদের বারবার এভাবে যে হতাশায় পুড়তে হবে। বারবার এভাবে কাঁদতে হবে। বারবার সংবাদমাধ্যমের কঠিন সব প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে।