রিয়াল মাদ্রিদের সমস্যাটা যেখানে

দলের শুরুই লোপেতেগির চিন্তার কারণ। ছবি: রয়টার্স
দলের শুরুই লোপেতেগির চিন্তার কারণ। ছবি: রয়টার্স

রিয়াল মাদ্রিদ এখন বিশাল বিপাকে। জিনেদিন জিদান, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর বিদায়। হুলেন লোপেতেগি তিনটি চ্যাম্পিয়নস লিগে জেতা দল নিয়েও কিছু করতে পারছেন না। দলে তরুণ তারকাদের সঙ্গে সঙ্গে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের মিশেল, তবুও যেন অন্ধকারে হাতরে বেড়াচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদ। পাঁচ ম্যাচে মাত্র দুই গোল। ৩১৯ মিনিট ধরে কোনো গোল নেই, উল্টো নিজেদের জালে জড়িয়েছে ৪ বার। ২০০৭ সালের পর এমন সময় আর আসেনি রিয়ালে। কেন এমন হচ্ছে?

সেভিয়ার সঙ্গে ৩-০ গোলে পরাজয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে কাসেমিরো বলেছিলেন, আমাদের শুধু প্রথমার্ধটাই খারাপ হয়েছে, ফলাফল ৩-০। বর্তমান রিয়াল মাদ্রিদের অবস্থা অনেকটা এ রকমই। লোপেতেগির অধীনে রিয়াল মাদ্রিদের খেলার স্টাইলে পরিবর্তন এসেছে অনেক। ডাইরেক্ট ফুটবল থেকে ঘুরে রিয়াল মাদ্রিদ প্রবেশ করেছে পজেশনাল বেসড পাসিং ফুটবলে। রিয়াল মাদ্রিদের সমস্যাটা বুঝতে গেলে আগে পজেশনাল ফুটবল সম্পর্কে জানা লাগবে।

পজেশনাল ফুটবল হলো বলের ওপর আধিপত্য রেখে খেলা। শুধু আধিপত্য রেখে খেলা নয়, সে সঙ্গে বলকে সব সময় প্রেস করা। বল যদি নিজেদের খেলোয়াড়দের পায়ে থাকে, তবে বল নিজেদের কাছে রেখে ছোট ছোট পাসে এগিয়ে যাওয়া। আর বল যদি বিপক্ষ দলের কোনো খেলোয়াড়ের পায়ে চলে যায়, তবে বলের জন্য নিচে নেমে যাওয়া না, বরং বলের সঙ্গে লেগে থাকতে হবে। কোচ লোপেতেগির ট্যাকটিকস এমনই। বলের জন্য ক্রমাগত আক্রমণভাগের খেলোয়াড়রা প্রেস করতে থাকবে এবং প্রতিপক্ষের ভুলের সুযোগ নিয়ে বা বল কেড়ে নিয়ে আরেকটা আক্রমণ করবে। এই হচ্ছে কোচ লোপেতেগির অধীনে রিয়াল মাদ্রিদের বর্তমান খেলার বৈশিষ্ট্য।

ডিফেন্সে একটু ভুল দলকে আবারও চিন্তায় ফেলতে পারে। ছবি: রয়টার্স
ডিফেন্সে একটু ভুল দলকে আবারও চিন্তায় ফেলতে পারে। ছবি: রয়টার্স

কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদের খেলার সমস্যাটা শুরু হয় প্রথমে। ম্যাচের শুরুতে খেলোয়াড়দের মুভমেন্ট হয় খুবই মন্থর। মন্থর গতির কারণে রিয়াল মাদ্রিদ শুরুতেই গোল হজম করে ফেলে। যে গোল আর শোধ করে উঠতে পারে না রিয়াল মাদ্রিদ। এই মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদ প্রথমার্ধে গোল হজম করেছে আটটি, আর বিপরীতে দ্বিতীয় অর্ধে মাত্র একটি (অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ের গোলসহ ধরলে অবশ্য তিনটি)। গোল ব্যবধান চিন্তা করলে প্রথম অর্ধে গোল ব্যবধান -২। ছয় গোল করার উল্টো দিকে হজম করতে হয়েছে মোট ৮ গোল। অন্যদিকে দ্বিতীয়ার্ধে +১০। ১১ গোলের বদলে মাত্র এক গোল হজম (অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ের গোল সহ ধরলে অবশ্য +৮)।

বিষয়টি স্পষ্ট, রিয়াল মাদ্রিদ এই মৌসুমে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পরছে প্রথমার্ধে, গোল হজম করে তা আর শোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। যে কারণে সেভিয়ার সঙ্গে ম্যাচেও ফিরতে পারেনি, আবার মস্কোর বিপক্ষেও প্রথম মিনিটের গোলও শোধ করতে পারেনি। কারণ অল আউট ডিফেন্স। প্রতিপক্ষ এগিয়ে গিয়েই রক্ষণাত্মক খেলা শুরু করে। বক্সের চারপাশে ৮/৯ জন খেলোয়াড় রেখে দেয়। লোপেতেগির মূল চ্যালেঞ্জ এখন দলকে প্রথমার্ধেই জাগিয়ে তোলা, দ্বিতীয়ার্ধের মতো খেলানো।