১৪ বছর ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে বাংলাদেশ দলে

>

এক যুগের বেশি সময় ধরে ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি নিয়মিত মুখ। ফজলে রাব্বী অবশেষে ডাক পেলেন জাতীয় দলে। যখন তিনি সুখবরটা পেলেন, খুলনা থেকে জাতীয় লিগের ম্যাচ খেলে ফিরছিলেন বরিশাল নিজের বাড়িতে।

বরিশালের হয়ে জাতীয় লিগের দ্বিতীয় রাউন্ড খেলতে ফজলে রাব্বী গিয়েছিলেন খুলনায়। ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’র প্রভাবে শেষ দিনের খেলা মাঠেই গড়ায়নি। ম্যাচ ড্র। একটু আগেভাগেই মিলে গেল ছুটি। রাব্বী খুলনা থেকে রওনা দিলেন বাড়ি। বাড়ি তাঁর বরিশালে। এমনিতে বাড়ি ফেরার আনন্দ, সেই আনন্দ বেড়ে দ্বিগুণ, বহুগুণ হলো খবরটা পেয়ে। যেনতেন খবর নয়, প্রথমবারের মতো সুযোগ পেয়েছেন বাংলাদেশ দলে।

অবশেষে জাতীয় দলে সুযোগ পেলেন ফজলে রাব্বী। ছবি: ফেসবুক
অবশেষে জাতীয় দলে সুযোগ পেলেন ফজলে রাব্বী। ছবি: ফেসবুক

সন্ধ্যায় মুঠোফোনে যখন তাঁর সঙ্গে কথা হচ্ছে তখন বাতাসের শোঁ শোঁ আওয়াজ। ফেরির ভেপুর শব্দ। সেই শব্দের চেয়ে জোরালো হলো ফজলের হাসি। কতটা খুশির ঢেউ তাঁর মনে খেলা করছে, বোঝা গেল তাঁর কথায়, ‘যেন ঈদে মায়ের কোলে ফিরছি! এমন আনন্দে বাড়িতে আর কখনো ফেরা হয়নি। ফেরার পথে বিরাট সুখবর পেলাম। অনেক ভালো লাগছে, আমার জন্য দোয়া করবেন।’

জিম্বাবুয়ে সিরিজে বড় পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বাংলাদেশ যাবে না, সেটি কালই জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন। সন্ধ্যায় ১৫ জনের যে দল দিয়েছে বিসিবি, তাতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কোনো আভাস নেই। একটি মাত্র নতুন মুখ—ফজলে রাব্বী। ‘দেশের মাঠে শ্রীলঙ্কা ও আয়ারল্যান্ড সফরে ‘‘এ’’ দলের হয়ে সে ভালো করেছে। গত কয়েক বছর ধরে ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত ভালো করছে। যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী ব্যাটসম্যান। সঙ্গে ওর বাঁ হাতি স্পিনটাও পাব’——ফজলে রাব্বীকে দলে নেওয়ার ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন মিনহাজুল।

ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত ভালো করছে বলতে, এই তো গত সপ্তাহেও বগুড়ায় জাতীয় লিগের প্রথম পর্বে রংপুরের বিপক্ষে মাত্র ৫ রানের জন্য ডাবল সেঞ্চুরি পাননি। গত আগস্টে ‘এ’ দলের হয়ে আয়ারল্যান্ড সফরে আনঅফিশিয়াল ওয়ানডে সিরিজে ২টি ফিফটি পেয়েছিলেন। সিরিজে তাঁর স্ট্রাইকরেট ছিল যথেষ্ট আকর্ষণীয় ১১৫.২৫। স্টাইলিশ বাঁ হাতি টপ অর্ডার রাব্বী সবচেয়ে বড় গুণ যতক্ষণ উইকেটে থাকেন, রানের চাকা সচল রাখতে পারেন। তাঁর আদর্শ কেন তামিম ইকবাল, বোঝাই যাচ্ছে । তবে রাব্বীকে একাদশে নেওয়া হলে তামিমের জায়গায় নয়, চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে চোটে পড়া সাকিব আল হাসানের জায়গায় অর্থাৎ তিনে খেলানো। সাকিবের অনুপস্থিতি যে সহজেই পূরণ করার নয়, সেটি মানেন তিনি। তবে তাঁর লক্ষ্য একটাই, সুযোগ পেলে নিজের জায়গাটা পোক্ত করা, ‘সাকিব ভাইয়ের বিকল্প পাওয়া সম্ভব নয়। তিনি শুধু দেশের নয়, বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার। চেষ্টা করতে পারি দলে যেন নিজের একটা জায়গা করে নিতে।’

রাব্বী কত দূর যেতে পারবেন, সেটি এখনই বলার উপায় নেই। তবে এতটুকু আসতে তাঁকে অনেক ধৈর্য আর সাধনাই করতে হয়েছে। ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক ৩০ বছর বয়সী এ ব্যাটসম্যানকে জাতীয় দলের দুয়ারে পা রাখতে লেগে গেল ১৪ বছর। তিনি অবশ্য এশিয়া কাপের আগে ৩১ জনের প্রাথমিক দলেও ছিলেন। দীর্ঘ পথ হেঁটে যখন ১৫ জনের দলে জায়গা করে নেওয়া গেছে, রাব্বী পরের সুযোগগুলো হাতছাড়া করতে চান না, ‘সব খেলোয়াড়ের স্বপ্ন থাকে জাতীয় দলে খেলার। দীর্ঘদিন ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলে যাচ্ছি, একটা সময় তো আশাই হারিয়ে ফেলেছিলাম। তবে গত তিন-চার বছর ধারাবাহিক ভালো খেলায় মনে মনে একটা আশা তৈরি হয়েছে। চেষ্টা করব যেখানে সুযোগ পাই, সেটি কাজ লাগাতে।’

বাংলাদেশ দল:
মাশরাফি বিন মুর্তজা (অধিনায়ক), মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকুর রহিম, ইমরুল কায়েস, রুবেল হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ মিঠুন, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, নাজমুল ইসলাম অপু, আবু হায়দার, আরিফুল হক, মেহেদী হাসান মিরাজ,সাইফউদ্দিন ও ফজলে রাব্বী।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের সূচি:

তারিখ ভেন্যু
২১ অক্টোবর ঢাকা
২৪ অক্টোবর চট্টগ্রাম
২৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম
* প্রতিটি ম্যাচ শুরু দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে