ডাবল সেঞ্চুরি যে পরিবারের ঐতিহ্য...

এক ফ্রেমে তিন প্রজন্ম। দাদা হানিফ মোহাম্মদ ও বাবা শোয়েব মোহাম্মদের সঙ্গে শেহজার (মাঝে)। পারিবারিক ঐতিহ্য বজায় রেখে শেহজার করে ফেললেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি। ছবি: সংগৃহীত
এক ফ্রেমে তিন প্রজন্ম। দাদা হানিফ মোহাম্মদ ও বাবা শোয়েব মোহাম্মদের সঙ্গে শেহজার (মাঝে)। পারিবারিক ঐতিহ্য বজায় রেখে শেহজার করে ফেললেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি। ছবি: সংগৃহীত
>দাদা কিংবদন্তি পাকিস্তানি ক্রিকেটার হানিফ মোহাম্মদ। বাবা শোয়েব মোহাম্মদও খেলেছেন পাকিস্তানের হয়ে। দুই চাচা, সাদিক মোহাম্মদ ও মুশতাক মোহাম্মদ পাকিস্তানকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, বড় নাম। এমন এক পরিবারের ছেলে শেহজার মোহাম্মদ পাকিস্তানের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি করে পারিবারিক ঐতিহ্যটা বজায় রাখলেন।

শেহজার মোহাম্মদ খুব করেই মনে করিয়ে দিলেন হানিফ মোহাম্মদকে। পাকিস্তানের কিংবদন্তির এই ক্রিকেটার শেহজারের দাদা। প্রথম শ্রেণির ঘরোয়া ক্রিকেটে ২৬৫ রানের ইনিংস খেলে ‘পারিবারিক ঐতিহ্য’টা ধরে রাখলেন এই তরুণ ক্রিকেটার। শেহজারের আগে তাঁর দাদা, বাবা, আর চাচারা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন। শেহজারের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফার্স্ট ক্লাস সেঞ্চুরিটাই ২৬৫ রানের!

আশি ও নব্বইয়ের দশকের কিছুদিন মিলিয়ে পাকিস্তানের হয়ে ৪৫ টেস্ট খেলেছিলেন শেহজারের বাবা শোয়েব মোহাম্মদ। হানিফ মোহাম্মদের ছেলে বাবার মতো আসনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারলেও পাকিস্তান ক্রিকেটে শোয়েব মোহাম্মদকে মনে রেখেছেন অনেকেই। এখন শোয়েবের ছেলে শেহজার আবির্ভূত হলেন গোটা পরিবারের ঐতিহ্যগত উচ্চতায় নিজেকে তুলে ধরতে।

দুই বছর আগে মারা যাওয়া হানিফ মোহাম্মদ পাকিস্তান ক্রিকেটের এক অনন্য নস্টালজিয়ার নাম। ৫৫টি টেস্ট খেলেছেন দেশের হয়ে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাঁর ৪৯৯ রান এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। ১৯৫৭-৫৮ মৌসুমে বার্বাডোজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৬ ঘণ্টা ব্যাটিং করে ৩৩৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যেটি এখন পর্যন্ত দীর্ঘতম ইনিংস হিসেবে থেকে গেছে। শেহজারের দুই চাচা সাদিক মোহাম্মদ আর মুশতাক মোহাম্মদও পাকিস্তানের হয়ে খেলেছেন, করেছেন ডাবল সেঞ্চুরি। চাচাতো ভাই ইমরান মোহাম্মদ (সাদিক মোহাম্মদের ছেলে) পাকিস্তানের হয়ে না খেললেও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরিটা ঠিকই তুলে নিয়েছেন।

শেহজার এখন পর্যন্ত ৩৬টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন। গত শুক্রবার কায়েদে আজম ট্রফিতে করাচি হোয়াইটসের হয়ে মুলতানের বিপক্ষে তাঁর এই ডাবল সেঞ্চুরি এসেছে ৪৬৪ বলে। ৩০টি বাউন্ডারি ও একটি ছক্কায় সাজানো ছেলের এই ইনিংস আবেগাপ্লুত করেছে বাবা শোয়েব মোহাম্মদকে। পাকিস্তানের একটি টিভি চ্যানেলকে বলেছেন, ‘আজ হানিফ মোহাম্মদ বেঁচে থাকলে খুব খুশি হতেন। শেহজারের ডাবল সেঞ্চুরি মোহাম্মদ পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের জন্য অত্যন্ত আনন্দদায়ক এক মুহূর্ত। এর মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হলো ক্রিকেট মোহাম্মদ পরিবারের সদস্যদের রক্তে প্রবাহিত।’

ডানহাতি ব্যাটসম্যান শেহজার, অফ স্পিনও করে থাকেন বল হাতে। প্রয়োজনে উইকেটরক্ষণে পটু এই ক্রিকেটার এখন অপেক্ষায় দাদা, বাবা, চাচাদের মতোই পাকিস্তান জাতীয় দলের হয়ে খেলার। যদিও ২০০৯ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষিক্ত শেহজার জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার মতো যথেষ্ট কিছু এখনো করে দেখাতে পারেননি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ব্যাটিং গড় ২৩.৬৪। ২৭-এর দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা শেহজারের হাতে সময় আছে যথেষ্ট। কিন্তু প্রতিভা আর সামর্থ্যের ঘাটতিটা কি পুষিয়ে নিতে পারবেন? মোহাম্মদ পরিবারের একজন বলেই হয়তো এখনই নাকচ করে দেওয়াও যাচ্ছে না।