কী দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়াল পাকিস্তান!

নাথান লায়ন ৬ বলের মধ্যে ৪ উইকেট তুলে নিয়েছেন পাকিস্তানের। ছবি: এএফপি
নাথান লায়ন ৬ বলের মধ্যে ৪ উইকেট তুলে নিয়েছেন পাকিস্তানের। ছবি: এএফপি
>

পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে আবুধাবি টেস্টের প্রথম দিনের খেলা চলছে। প্রথম ইনিংসে ২৮২ রানে গুটিয়ে গেছে পাকিস্তান। ব্যাটিংয়ে নেমে ২ উইকেটে ২০ রান নিয়ে প্রথম দিন শেষ করেছে অস্ট্রেলিয়া

পাকিস্তানের ড্রেসিংরুমে ব্যাট-প্যাড-গার্ড পরার প্রতিযোগিতা হয়ে গেল একচোট। কে কার আগে পরতে পারে! একের পর এক ব্যাটসম্যান যে উইকেটে নেমেছেন আর আউট হয়ে ফিরেছেন। অন্যজন ততক্ষণে ঠিকমতো প্যাড কিংবা গার্ডটাও হয়তো পরতে পারেননি! ১ উইকেটে ৫৭ স্কোরটা চোখের পলকে হয়ে গেল ৫ উইকেটে ৫৭! ৬ বলের মধ্যে পাকিস্তানের টপ-মিডল অর্ডার ধসিয়ে দিয়েছেন নাথান লায়ন।

কিন্তু গল্পটা সেখানেই শেষ হয়ে গেলে এ আর টেস্ট ক্রিকেট কেন! সেখান থেকে পরের সেশনটা পাল্টা প্রতিরোধের গল্প লিখল পাকিস্তান। চা–বিরতিতে গেল ৬ উইকেটে ২০৪ রান নিয়ে। স্কোরটা ৫ উইকেটেই ২০৪ হতে পারত। এই টেস্টে অভিষিক্ত ফখর ৯৪ রানে আউট হয়েছেন। একেবারে চা–বিরতির আগের বলে। চতুর্থ পাকিস্তানি হিসেবে অভিষেক টেস্টে নার্ভাস নাইটিজের শিকার, সব মিলে ৩১তম ব্যাটসম্যান হিসেবে এই দুর্ভাগ্য লেখা হলো ফখরের নামের পাশে। মরিয়া ফখর রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি। ফিরেছেন লাবুশেনের বলে এলবিডব্লুর শিকার হয়ে। পরে সরফরাজ আহমেদও ফিরেছেন ৯৪ রানে। টেষ্ট ক্রিকেটে এক ইনিংসে দুজন ব্যাটসম্যানের নার্ভাস নাইন্টিজে একই স্কোর গড়ে আউট হওয়ার চতুর্থ ঘটনা এটি। ফখর ও সরফরাজের ব্যাটে ভর করে ২৮২ রান তুলতে সমর্থ হয় পাকিস্তান।

এর আগে ষষ্ঠ উইকেটে সরফরাজের সঙ্গে ১৪৭ রান যোগ করেছেন। এই জুটি ঘুরে না দাঁড়ালে পাকিস্তান ১০০ কিংবা এর আশপাশে গিয়েও অলআউট হওয়ার শঙ্কায় পড়ত। এর আগে দিনের নায়ক ছিলেন লায়ন। এক বলের জন্য হ্যাটট্রিক ফসকে গেছে তাঁর। ইনিংসের ২০তম ওভারের শেষ দুই বলে আজহার আলী ও হারিস সোহেলকে আউট করেছেন। নিজের পরের ওভারের প্রথম বলটায় উইকেট পাননি। পেলেই হ্যাটট্রিকটা হয়ে যেত। তবে উইকেট পেলেন ঠিক এর পরের বলে। এবার শিকারের নাম আসাদ শফিক। এক বল বিরতিতে আবার লায়নের উইকেট। আগের তিনজনকে ক্যাচ বানালেন, এবার বাবর আজমকে করে দিলেন বোল্ড। স্কোরবোর্ডে কোনো রান যোগ না করতেই ১০ বলের মধ্যে ৩ থেকে ৬ নম্বর ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ফেলল পাকিস্তান। এর মধ্যে হারিস, আসাদ ও বাবর ফিরেছেন শূন্য রানে।

৫ রানের মধ্যে আগের ম্যাচে প্রত্যাবর্তনের রূপকথা লেখা মোহাম্মদ হাফিজকে হারিয়ে ফেলেছিল পাকিস্তান। দ্বিতীয় উইকেটে সেই ধাক্কা সামলে উঠেছিলেন ফখর ও আজহার আলীর জুটি। এই জুটি ৫০ যোগ করার পরই পাকিস্তানের ইনিংসে সেই ভূমিধস। নিজের চতুর্থ ওভারের পঞ্চম বলে ফিরতি ক্যাচে আজহারকে ফেরান লায়ন। কোনো টেস্ট ম্যাচে এই প্রথম লায়নের বলে আউট হলেন ফর্মের সঙ্গে যুঝতে থাকা আজহার, এর আগে লায়নের ৩৯৭ বল থেকে তুলেছেন ১৬৬ রান।

লায়নের পরের বলে ফিরলেন হারিস, এর কৃতিত্ব দিতে হবে সিলি পয়েন্টের ফিল্ডার ট্রাভিস হেডের দুর্দান্ত ক্যাচকেও। মাঝখানে হল্যান্ডের ওভারটা ভালোমতোই পার করে দিল পাকিস্তান। লায়ন ফিরলেন শিকারে। আসাদ শফিক হ্যাটট্রিকটা হতে দিলেন না ঠিকই, তবে ক্যাচের জোরালো আবেদন উঠল। আম্পায়ার বলে দিলেন না। অস্ট্রেলিয়া রিভিউ নিল। দারুণভাবে কাজে লেগে গেল রিভিউটা। চার বলে তিন উইকেট!

তখনো পাকিস্তানের দুর্দশা শেষ হয়নি, কে জানত। এক বল ঠেকিয়ে বাবর আজম যে শটটা খেললেন, পারলে কোচ মিকি আর্থার তখনই বেত হাতে মাঠে নেমে পড়েন। বাজে শটে বোল্ড। ৭ ওভারে ৪ মেডেন, ১২ রান দিয়ে ৪ উইকেট, স্পিনের এক অনুপম প্রদর্শনী নিয়ে হাজির হলেন লায়ন।

লাঞ্চের পর পাশার দান পাল্টে ফেলেছিল ফখর-সরফরাজের পাল্টা আক্রমণাত্মক খেলা জুটি। এই সুবাদে মোটামুটি তিন শ–র কাছাকাছি স্কোর পেয়েছে পাকিস্তান। প্রথম দিন শেষে প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ২ উইকেটে ২০ রান। উসমান খাজা ও ‘নাইটওয়াচম্যান’ পিটার সিডলকে তুলে নিয়েছেন পাকিস্তানের পেসার মোহাম্মদ আব্বাস।