যে চার 'ভালো'তে বদলে যেতে পারে বাংলাদেশের ফুটবল

কোস্টারিকার বিশ্বকাপ তারকা দানিয়েল কলিন্দ্রেস হতে পারেন প্রিমিয়ার লিগের নতুন মৌসুমের সেরা আকর্ষণ। ফাইল ছবি
কোস্টারিকার বিশ্বকাপ তারকা দানিয়েল কলিন্দ্রেস হতে পারেন প্রিমিয়ার লিগের নতুন মৌসুমের সেরা আকর্ষণ। ফাইল ছবি
>

প্রথম আলো ডিজিটাল নতুন ফুটবল মৌসুমের দলবদলে চোখ রেখেছিল নিবিড়ভাবে। দলবদলেই আভআস পাওয়া গেছে বেশ কয়েকটি ইতিবাচক পরিবর্তন। এগুলি বদলে দিতে পারে বাংলাদেশের ফুটবলের চেহারাই।

বাংলাদেশের পেশাদার ফুটবল লিগের দশটি মৌসুমে পেরিয়ে গেছে। কিন্তু দেশের ফুটবলে সেটি সত্যিকার পেশাদারি যোগ করতে পারেনি। তবে ১১তম মৌসুমে এসে কিছুটা ইতিবাচক বদলের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সোমবার শেষ হয়েছে নতুন মৌসুমের দলবদল। এই দলবদলই ইঙ্গিত দিয়েছে আসছে মৌসুম হতে যাচ্ছে এ দেশের ফুটবলের এক স্মরণীয় মৌসুম। নতুন কয়েকটি সংযোজনে বদলে যেতে পারে গোটা ফুটবলেরই চেহারা।

বিশ্বকাপে খেলা ফুটবলার
১৯৮৭ মৌসুমে আবাহনীতে খেলেছিলেন ইরাকের দুই বিশ্বকাপ ফুটবলার। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে খেলার টাটকা স্মৃতি নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন সামির শাকির ও করিম মোহাম্মদ। সে মৌসুমেই মোহামেডানের কোচ কাম খেলোয়াড় হিসেবে একটি ম্যাচ খেলেছিলেন ১৯৭৮ বিশ্বকাপে ইরানের হয়ে খেলা গোলরক্ষক নাসের হেজাজি। ১৯৯৪ সালে নাইজেরিয়ার হয়ে খেলেছিলেন ১৯৮৭-৮৮ মৌসুমে মোহামেডানে খেলা এমেকা ইজিউগো। বহু বছর পর এবার বাংলাদেশের পেশাদার লিগে উড়িয়ে আনা হয়েছে বিশ্বকাপ খেলা ফুটবলারকে। কোস্টারিকার দানিয়েল কলিন্দ্রেস রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলেছেন তাঁর দেশের দুটি ম্যাচে। ৩৩ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার হতে যাচ্ছেন এবারের প্রিমিয়ার লিগের সেরা আকর্ষণ। তিনি যে আগ্রহের কেন্দ্রে থাকবেন, সেটি বোঝা গেছে কিছুদিন আগেই। তাঁর ক্লাব বসুন্ধরা কিংসের হয়ে তিনি নীলফামারীতে মালদ্বীপের নিউ রেডিয়েন্টের বিপক্ষে যে মানের খেলা উপহার দিয়েছেন, তাতে মুগ্ধ সবাই। সে ম্যাচে বসুন্ধরা ৪-১ গোলে হারায় রেডিয়েন্টকে। নিজে গোল না পেলেও দলের দুটি গোলে ছিল তাঁর অবদান।

বিদেশি ফুটবলারের এশিয়ান কোটা
এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (এএফসি) এই নির্দেশনাটি এত দিন বাংলাদেশের ফুটবলে উপেক্ষিতই ছিল। এএফসির নির্দেশনা আছে তার সদস্য দেশের ঘরোয়া ফুটবলের ক্লাবগুলি যতজন বিদেশি ফুটবলারকে দলে নেবে, তাদের একজনকে অবশ্যই হতে হবে এশিয়ান। দেরিতে হলেও এটি এবার বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। ক্লাবগুলোও এশিয়ান কোটায় খেলোয়াড় দলে নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। এখনো পর্যন্ত এশিয়ান কোটায় যে সব ফুটবলারকে বিভিন্ন ক্লাব নিয়েছে, তারা সবাই অত্যন্ত উঁচুমানের। কিরগিজস্তান জাতীয় দলের ড্যানিয়েল ট্যাগোকে নিয়েছে চট্টগ্রাম আবাহনী। ঢাকা আবাহনী লিমিটেডে এসেছেন আফগান জাতীয় দলের মাশি সাইগানি। কিরগিজস্তানের আরেক ফুটবলার বখতিয়ার দুশোবেখ এসেছেন বসুন্ধরা কিংসে। কয়েকটি ক্লাবে আছেন উজবেকিস্তান, কোরিয়া ও জাপানের ভালো মানের ফুটবলার। এশিয়ান কোটা বাস্তবায়িত হওয়ায় এবার নিম্নমআনের গা জোয়ারি আফ্রিকান ফুটবলারের সংখ্যা অনেকটাই কমতে বাধ্য। এবার প্রতিটি ক্লাব বিদেশি নিবন্ধন করাতে পারবে চারজন। মাঠে নামাতেও পারবেন চারজনকেই।

উঁচুমানের বিদেশি কোচ
এবারই প্রথম বাংলাদেশের ফুটবলে নাম লিখিয়েছেন ব্রিটিশ কোচ স্টুয়ার্ট হল। উয়েফা প্রো-লাইসেন্সধারী এই কোচ সর্বশেষ কাজ করেছেন কানাডার হ্যালিফেক্স কাউন্টি ইউনাইটেডের হয়ে। এর আগে সেন্ট ভিনসেন্ট, গ্রানাডা ও জাম্বিয়া জাতীয় দলের কোচ ছিলেন। এ ছাড়া কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে ইংল্যান্ড, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, তানজানিয়া ও কেনিয়ায়। ৫৮ বছর বয়সী এই কোচ ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ভারতের ক্লাব পুনে এফসির দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর সহকারী কোচ তানজানিয়ান ডেনিস কিতাম্বি। ডেনিস সর্বশেষ কাজ করেছেন কেনিয়ান প্রিমিয়ার লিগের ১২ বারের চ্যাম্পিয়ন এফসি লেপার্ডের সহকারী কোচ হিসেবে।

স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রজোনকেও নিয়োগ দিয়ে চমক দেখিয়েছে বসুন্ধরা কিংস। যিনি গত মৌসুমে মালদ্বীপ প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ন ক্লাব নিউ রেডিয়েন্টের কোচ ছিলেন। ৪১ বছর বয়সী ব্রুজোন মালদ্বীপ ছাড়াও এর আগে ভারতীয় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আইএসএলের দল মুম্বাইয়ের কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। স্প্যানিশ ক্লাব মায়োর্কার সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতাও আছে তাঁর। শেখ জামালে আছেন পরীক্ষিত নাইজেরিয়ান জোসেফ আফুসি, মোহামেডানে ইংলিশ কোচ ক্রিস্টোফার ইভান্স। ব্রাদার্সও পেরু থেকে একজন কোচ আনার কথা ভাবছে।

৬ ভেন্যুতে এবারের প্রিমিয়ার লিগ
প্রতিবারই শোনা যায় কয়েকটি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে প্রিমিয়ার লিগ ফুটবল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই গড়াই প্রায় সবগুলো ম্যাচ। তবে এবার দৃশ্যটা হয়তো বদলাতে যাচ্ছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে ৬ ভেন্যুতে হবে প্রিমিয়ার লিগের ১১ তম আসর। ভেন্যু গুলো হলো—বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম, চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়াম, ময়মনসিংহ, নীলফামারী, গোপালগঞ্জ ও নোয়াখালী। এর মধ্যে চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়াম চট্টগ্রাম আবাহনীর হোম ভেন্যু, আরামবাগের ময়মনসিংহ, নীলফামারীতে বসুন্ধরা কিংস, গোপালগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা, নোফেল স্পোর্টিং ক্লাব নোয়াখালীতে। বাকি ক্লাবগুলোর হোম ভেন্যু বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। একাধিক ভেন্যুতে খেলা হওয়ায় এবার প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে মানুষের আগ্রহ ছড়িয়ে পড়বে গোটা দেশজুড়েই।

 প্রথম আলো ডিজিটাল নতুন ফুটবল মৌসুমের দলবদলে চোখ রেখেছিল নিবিড়ভাবে। দলবদলেই আভআস পাওয়া গেছে বেশ কয়েকটি ইতিবাচক পরিবর্তন। এগুলি বদলে দিতে পারে বাংলাদেশের ফুটবলের চেহারাই।