মেসির চোটনামা

২০০৫ সালে ক্যারিয়ারের প্রথম চোট
২০০৫ সালে ক্যারিয়ারের প্রথম চোট
>

ফুটবল ক্যারিয়ারে মোট ২১ বার চোটে জর্জরিত হয়েছেন লিওনেল মেসি। তাঁর চোটে পড়ার সময় বার্সেলোনার অবস্থা মোটেই ভালো ছিল না।

বার্সেলোনার সামনে বিশাল সূচি। চ্যাম্পিয়নস লিগে ইন্টার মিলান আর লা লিগায় রিয়াল মাদ্রিদ। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলের হাল হকিকত যতই খারাপ হোক না কেন, এল ক্লাসিকো বলে কথা। এই লড়াইয়ে কেউ কাউকে ছড়ে কথা বলে না। কিন্তু ক্লাসিকোর আগেই নিজেদের সেরা অস্ত্র লিওনেল মেসিকে হারিয়ে বসেছে বার্সেলোনা। কবজির ওপরের হাড়ে চিড় ধরায় প্রায় তিন সপ্তাহ মাঠের বাইরে থাকতে হবে আর্জেন্টাইন তারকাকে। এই সময়টায় স্বাভাবিকভাবেই মাঠে মেসিকে পাবে না বার্সা। মেসির এই চোট কিন্তু তাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে ভয় ধরানো অতীতের কথাই।
বার্সেলোনায় লিওনেল মেসির চোটের ঘটনা খুব একটা বেশি নয়। ১৫ মৌসুমে ২১ বার চোটে আক্রান্ত হয়েছেন। চোটের কারণে মোট ৮০ ম্যাচ মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছে। এই ৮০ ম্যাচের মাঝে ৪৮ ম্যাচে জয় পেয়েছে বার্সেলোনা। ১৭ ড্রয়ের পাশাপাশি রয়েছে ১৫ হারও। চোটের কারণে মেসি নেই—এমন ম্যাচের মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগ ম্যাচে জিতেছে বার্সেলোনা। এখানে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যেতে পারে বিভিন্ন মৌসুমে মেসির চোটজনিত অনুপস্থিতি কীভাবে সামাল দিয়েছে বার্সা...

২০০৫-০৬ মৌসুম
বার্সেলোনার হয়ে মেসি প্রথম চোটে পড়েন ২০০৫-০৬ মৌসুমে। ৫ ফেব্রুয়ারি অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ম্যাচে। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে ১ ম্যাচ মাঠের বাইরে থাকতে হয় তাঁকে। বার্সেলোনা হেরেছিল সে একটি ম্যাচই। সে ম্যাচেই হারের মুখ দেখে বার্সেলোনা। ৭ মার্চ চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচে চেলসির বিপক্ষে আবারও হ্যামস্ট্রিংয়ে আঘাত পান মেসি। সেবার আড়াই মাস মাঠের বাইরে থাকতে হয় আর্জেন্টাইন তারকাকে। ওই সময়ে বার্সা ১৭ ম্যাচ খেলে জিতেছিল ৯টিতে। ৫ ড্রয়ের সঙ্গে হেরেছিল ৩ ম্যাচ।
২০০৬-০৭ মৌসুম
পরের মৌসুমে অক্টোবর মাসে মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোতেই চোটে পড়েন মেসি। ডান হাঁটুর চোটে ২ ম্যাচ মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছিল মেসিকে। তবে দুই ম্যাচেই জয় তুলে নেয় বার্সা। ২০০৬ সালের ১২ নভেম্বর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে চোটে পড়েন তিনি। রিয়াল জারাগোজার বিপক্ষে ম্যাচে বা পায়ের কনে আঙুল ভেঙে ফেলেন। সেবারে চোটের কারণে মোট চার মাস মাঠের বাইরে থাকতে হয়। এই চার মাস ১৮ ম্যাচে ১০ জয় তুলেছিল বার্সা। হেরেছিল ৩টিতে। ড্র হয়েছিল ৫ ম্যাচ।

২০০৭-০৮ মৌসুম
সেপ্টেম্বর ১১, ২০০৭; আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে প্রথম চোটে পড়েন মেসি। ডান পায়ের হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে আবারও মাঠ ছাড়তে হয় তাঁকে। কিন্তু এবার কোনো ম্যাচ অবশ্য বাদ দিতে হয়নি মেসিকে। পরের চোট পান বাম ঊরুতে। চোটের কারণে বাইরে থাকা এক মাসে ৬ ম্যাচে ২ জয়, ৩ ড্র আর ১ হারের মুখোমুখি হতে হয় বার্সেলোনাকে। মার্চ মাসে আবারও সেই চোট মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। সেবার ৮ ম্যাচে ৩ জয় ২ ড্র ও ৩ হারে দেখতে হয়েছিল মেসির ক্লাবকে।

২০১০ সালে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ডান গোড়ালির চোট।
২০১০ সালে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ডান গোড়ালির চোট।


২০০৯-১০ মৌসুম
পুরো এক মৌসুম চোটমুক্ত থাকার পর মেসি চোটে পড়েন ২০০৯ সালের নভেম্বরে। সে চোটে কোনো ম্যাচ মিস করতে হয়নি মেসিকে।

২০১০-১১ মৌসুম
এই মৌসুমে ডান হাঁটুর চোটের কারণে ১০ দিন মাঠের বাইরে থাকতে হয় মেসিকে। সেবার ২ ম্যাচে ২ জয় পেয়েছিল বার্সেলোনা।

পিএসজির বিপক্ষে ২০১৩ চ্যাম্পিয়নস লিগে চোট
পিএসজির বিপক্ষে ২০১৩ চ্যাম্পিয়নস লিগে চোট


২০১২-১৩ মৌসুম
এক বছরের ব্যবধানে আরেকটি চোটমুক্ত মৌসুম কাটান লিওনেল মেসি। কিন্তু ২০১১-১২ মৌসুম ছিল তার চোট-জর্জর মৌসুম সে মৌসুমে চারবার চোটে পরলেও মাত্র এক ম্যাচ চোটের কারণে মিস করেন মেসি।
ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে দুইবার মাংসপেশির চোটে পড়লেও পিএসজির বিপক্ষে ম্যাচ ডান হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটের কারণে খেলতে পারেননি। সেই ১ ম্যাচে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে বার্সেলোনা। মাংসপেশিতে টান লাগায় মে মাসে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ম্যাচের অর্ধেক পথেই উঠে যান।

২০১৩-১৪ মৌসুম
মৌসুমের শুরুতেই প্রাক-মৌসুম ম্যাচে চোটে পড়েন মেসি। সে চোটের কারণে প্রাক মৌসুমে আর খেলতেই পারেননি তিনি। আগস্টে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ম্যাচে মাংসপেশিতে টান লাগায় এক ম্যাচ মিস করেন মেসি। সে ম্যাচে জয়লাভ করে বার্সা।
ডান হ্যামস্ট্রিংয়ে চোটের কারণে তিন সপ্তাহ মাঠের বাইরে থাকতে হয় মেসিকে। সেবার ২ ম্যাচের দুটিতেই জয় পায় বার্সা। নভেম্বরে বেটিসের বিপক্ষে চোটে পড়ে দুই মাস মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছিল তাঁকে। সেবারও মেসিহীন ৯ ম্যাচের দুটিতে হেরেছিল বার্সা।

২০১৫ সালে লাস পালমাসের বিপক্ষে চোট।
২০১৫ সালে লাস পালমাসের বিপক্ষে চোট।


২০১৪-১৫ মৌসুম
এই মৌসুমের শুরুতেই ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে ম্যাচে চোটে পড়েন মেসি। কিন্তু চোট নিয়েই পুরো ম্যাচ খেলেছিলেন। এতে অবশ্য কোনো সমস্যা হয়নি। মিস করেছিলেন একটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ।

২০১৫-১৬ মৌসুম
নিকট অতীতে সবচেয়ে বাজে চোটের শিকার হয়েছেন ২০১৫-১৬ মৌসুমে। বাম হাঁটুর চোটে দুই মাস মাঠের বাইরে থাকতে হয় মেসিকে। রিয়াল মাদ্রিদকে ৪-০ গোলে হারানোর ম্যাচে আবারও মাঠে ফেরেন মেসি। সেবারও মেসিবিহীন ৯ ম্যাচের একটিতে হেরেছিল বার্সা।

ক্যারিয়ারে প্রথম হাতের ইনজুরিতে পরেছেন মেসি। ছবি: রয়টার্স
ক্যারিয়ারে প্রথম হাতের ইনজুরিতে পরেছেন মেসি। ছবি: রয়টার্স


২০১৬-১৭ মৌসুম
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে আবারও চোটে পড়েন মেসি। এই ইনজুরি তাকে মাঠ থেকে ছিটকে দেয় ১ মাসের জন্য। সেবার ৩ ম্যাচের একটিতে হেরেছিল বার্সা।

২০১৮-১৯ মৌসুম
সর্বশেষ চোটে পড়েছেন সেভিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে। এবার আর পায়ে নয়। হাত ভেঙে ফেলেছেন। এ জন্য প্রায় তিন সপ্তাহ মাঠের বাইরে থাকতে হবে তাঁকে। এই সময় বার্সা কেমন করবে কে জানে!

লিওনেল মেসি তাঁর ফুটবল ক্যারিয়ারে ২১ বার চোটে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে আর্জেন্টিনার জার্সিতে তাঁর চোট মাত্র একবার। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে খেলায় চোটে পড়েছেন সর্বোচ্চ পাঁচবার। বার্সেলোনার ঘরের মাঠ ন্যু ক্যাম্পে চোটে পড়েছেন ৮ বার। মাত্র দুটি মৌসুম চোট-টোট ঝামেলায় ফেলেনি এই তারকাকে।