আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কতটা কঠিন?

>৩০ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছে ফজলে রাব্বির। যাঁকে নিয়ে গত কদিনে ভীষণ আলোচনা, অভিষেকেই তিনি ফিরেছেন শূন্য রানে। রাব্বি অবশ্য মনে করিয়ে দিলেন অভিষেকে শূন্য রানে ফেরা তাঁর কাছে নতুন নয়।

ব্যাটের গ্রিপ খুলতে খুলতে ফজলে রাব্বি ফিরছিলেন ড্রেসিংরুমের দিকে। গ্রিপ বদলাতে হবে, ব্যাটকে দিয়ে কথা বলাতে হবে, ঘোচাতে হবে দুঃখটাও। সদা হাস্যোজ্জ্বল ফজলে রাব্বি দুঃখের গল্পও বলেন হাসিমুখে। আজ দুপুরে অনুশীলন শেষে ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে পরিচিত সাংবাদিকদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময়ের সময় পুরোনো দুঃখের কথাও বললেন হাসতে হাসতে। 

অভিষেকেই শূন্য রানে আউট হয়েছেন রাব্বি, তবু মাশরাফির সমর্থন পাচ্ছেন তিনি। ছবি: প্রথম আলো
অভিষেকেই শূন্য রানে আউট হয়েছেন রাব্বি, তবু মাশরাফির সমর্থন পাচ্ছেন তিনি। ছবি: প্রথম আলো

দুঃখটা হচ্ছে অভিষেক নিয়ে। অভিষেকটা তাঁর সব সময়ই ধূসর। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ড্রেসিংরুমের ছায়া-শীতল সিঁড়ির সামনে রাব্বি চটজলটি স্মৃতির পাতা উল্টে ঘুরে আসেন তাঁর সব অভিষেক ম্যাচে। আর সেখানে দেখতে পান আফসোস আর আক্ষেপে ভরা সব গল্প! ২০০৪ সালের ২৩ জানুয়ারি রংপুরের ক্রিকেট গার্ডেনে রাজশাহী-বরিশাল বিভাগের একদিনের ম্যাচ দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে তাঁর অভিষেক। অভিষেকেই পেলেন ইয়া বড় শূন্য! প্রথম ম্যাচেই শুধু শূন্য নয়, রাব্বিকে 'ডাক' পিছু ছাড়েনি পরের দুই ম্যাচেও! ক্যারিয়ার শুরু যাঁর 'হ্যাটট্রিক ডাক' দিয়ে, সেটির সঙ্গে পরিচয় আরও অনেকবার।
২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও রাব্বির অভিষেক হয়েছে শূন্য রানে। শুধু টি-টোয়েন্টি অভিষেকে করেছিলেন ১৭ রান। অবশ্য ২২ এপ্রিল ২০১৩ সালে বগুড়ায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ গেমসের এই ম্যাচটি যে স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি, সেটি পরে জেনেছেন। ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগ বলতে যে টুর্নামেন্টের কথা সবার আগে আসে, সেই বিপিএলেও রাব্বির শুরু শূন্য দিয়ে। ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর জহুর আহমেদেই বিপিএল অভিষেকে বরিশাল বুলসের হয়ে খুলনা টাইটানসের বিপক্ষে ফেরেন কোনো রান না করেই।
অভিষেকে শূন্য রান করার ধারা রাব্বি ধরে রেখেছেন প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচেও। কত স্বপ্ন, কত আশা নিয়ে পরশু মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ম্যাচটি খেলতে নামলেন রাব্বি। সব শেষ চাতারার লাফিয়ে ওঠা বলটায়। আন্তর্জাতিক আঙিনায় অভিষেকে কি ঘাবড়ে গিয়েছিলেন রাব্বি? বাংলাদেশ দলের এ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের দাবি অবশ্য ভিন্ন, 'ম্যাচে সবচেয়ে সেরা বলটাই হতে হলো আমার বিপক্ষে!'
তবে স্নায়ুচাপে যে ভুগেছেন, সেটি অস্বীকার করেননি রাব্বি, 'ঘরোয়া ক্রিকেটের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের একটা পার্থক্য তো আছেই। অনেক দর্শকের সামনে বিপিএলেও খেলেছি। তবুও একটা পার্থক্য আছে। পরে উপলব্ধি হয়েছে, এটা যে আন্তর্জাতিক ম্যাচ, সেটি ভেবে চাপ নেওয়াই যাবে না। বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করাই বাদ দিয়েছি। শূন্য রানে আউট হয়েছি, তাতে আমার যতটা দুঃখ, সেটির চেয়ে দুঃখ মানুষের। গত কদিনে মোবাইল, ফেসবুক, সামাজিক যোগাযোগের সব মাধ্যম বন্ধ করে রেখেছি।'
একটু নিরিবিলি থাকতে চান। পুরো মনোযোগ রাখতে চান শুধু নিজের ব্যাটিংয়ে। রাব্বি এই পথ চলায় পাশে পাচ্ছেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাকে। একজন অভিষিক্ত ক্রিকেটার কী ধরনের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যান, অধিনায়কের সেটি ভালোই জানা, 'প্রথমত ক্যামেরা। একটা খেলোয়াড় যখন জানে যে টিভিতে খেলাটা দেখা হচ্ছে তখন এমনি চাপ চলে আসে। দেশের মাঠে খেলা হলে দর্শকের একটা চাপ তো থাকেই। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একটা ব্যাপার তো আছে। সংবাদমাধ্যম আছে, সতীর্থরা আছে, পরিবার আছে। এসব তো ঘরোয়া ক্রিকেটে থাকে না। কেউ হয়তো ঠিকঠাক খোঁজও রাখে না। ঘরোয়া ক্রিকেটের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ব্যবধান অনেক। এমনকি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের সঙ্গেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ব্যবধান অনেক বড়।'
ব্যবধানটা অনেক বড় বলেই এক ম্যাচ দিয়ে রাব্বিকে ছুড়ে ফেলার পক্ষে নন মাশরাফি। অধিনায়ক বিষয়টা দেখতে চান রাব্বির চোখে, 'ব্যক্তিগতভাবে অবশ্যই মনে করি ওর আরেকটি সুযোগ পাওয়া উচিত। একটা ম্যাচ দিয়ে বিচার করা কঠিন। যদি প্রশ্ন করারই প্রয়োজন হতো, তাহলে শুরুতেই প্রশ্ন করতে পারতেন, তাকে দলে নেওয়া হলো কেন? তখন বলতে পারতেন এটা একটা ভুল। কিন্তু দলে নেওয়ার পর অবশ্যই মনে করি তাকে সুযোগ দেওয়া উচিত। আবার সবার চিন্তা ভাবনাও গুরুত্বপূর্ণ। একা দায়িত্ব নিয়ে খেলানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। যে বলে সে আউট হয়েছে সেটাতে দোষ দেওয়ার কিছু নেই। আমরা নিকট অতীতে সব খেলোয়াড়কে এভাবে সমর্থন করেছি। আবার আমাদের বিলাসিতা করার সুযোগও নেই। তাকে পূর্ণ সমর্থন দিতেই হবে। যত দূর সম্ভব তাকে সহযোগিতা করতে হবে।'
রাব্বির আর কী লাগে! অধিনায়কের হাতটা থাকছে তাঁর কাঁধে। যে হাতের স্পর্শ পরশপাথরের মতো সেটি কে না জানেন!