ক্রিকেট ওভাবে হয় না, মাশরাফির এক জবাব

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের লড়াইটা একতরফা তাতে কিছু আসে যায় না মাশরাফির। ছবি: শামসুল হক
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের লড়াইটা একতরফা তাতে কিছু আসে যায় না মাশরাফির। ছবি: শামসুল হক
>দুই দলের প্রথম ১০ মুখোমুখি লড়াইয়েই জিতেছিল জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশ সেখানে জিতেছে দুই দলের সর্বশেষ দেখা হওয়া টানা ১১ ওয়ানডে। শুধু বাংলাদেশ বলে নয়, জিম্বাবুয়ে আসলে ব্যর্থতার চক্করে পড়ে গেছে। মিরপুরের ম্যাচটি ছিল ওয়ানডেতে তাদের টানা ১১তম হারও। সর্বশেষ ২২ ওয়ানডের মাত্র চারটি জিতেছে তারা

গত ম্যাচে ভরা গ্যালারি দেখে ক্রীড়া সাংবাদিকদের কেউ কেউ বিস্মিত! রূঢ় সত্যটা হলো, বাংলাদেশ বনাম জিম্বাবুয়ে লড়াই এখন আর আগের মতো টানে না। এটাও ঠিক, বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে জিম্বাবুয়ের নামটা এমনভাবে জড়িয়ে আছে, পুরোনো বন্ধুকে ভুলে যাওয়া কঠিন। কিন্তু বাস্তবতা হলো বাংলাদেশের ক্রিকেট যেখানে সাফল্যের কয়েকটি সিঁড়ি ভেঙে উঠে গেছে ওপরে, সেখানে জিম্বাবুয়ে নেমে গেছে কয়েক ধাপ। একসময় যে লড়াই জিম্বাবুয়ের দিকে প্রবলভাবে ঝুঁকে ছিল, সেই ম্যাচেই বাংলাদেশ এখন ঝুঁকিমুক্ত বাজি। দুই দলের প্রথম ১০ মুখোমুখি লড়াইয়েই জিতেছিল জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশ সেখানে জিতেছে দুই দলের সর্বশেষ দেখা হওয়া টানা ১১ ওয়ানডে।

শুধু বাংলাদেশ বলে নয়, জিম্বাবুয়ে আসলে ব্যর্থতার চক্করে পড়ে গেছে। মিরপুরের ম্যাচটি ছিল ওয়ানডেতে তাদের টানা ১১তম হারও। সর্বশেষ ২২ ওয়ানডেতে মাত্র চারটি জিতেছে তারা।ব্যর্থতায় এমন নুয়ে থাকা একটা দলের বিপক্ষে খেলা দেখতে আসতেও তো মনের জোর লাগে। রীতিমতো পাঁড় সমর্থক হতে হয়। গত ম্যাচের ভরা গ্যালারির আসল কারণ অবশ্য পাঁড় ভক্তরাই শুধু নয়, ৮ মাসের দীর্ঘ বিরতির পর বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদ পাওয়া। চট্টগ্রামে এখনো ক্রিকেটের উত্তাপ লেগেছে বলে মনে হলো না। শহরের অলিগলির চায়ের দোকানের সামনের ভিড়ে, উষ্ণ কাপে আলতো চুমুক দেওয়ার অপেক্ষায় থাকা ঠোঁটগুলোতে নির্বাচনী আলাপই বরং বেশি।
এ তো গেল দর্শক তরফের হিসাব। বাংলাদেশ দল নিজেদের কীভাবে উজ্জীবিত করে? মাশরাফি উত্তরটা সহজেই দিলেন। মনে করিয়ে দিলেন, ক্রিকেটের ফল শুধু র‍্যাঙ্কিং আর শক্তিমত্তা মেপে হয় না। হলে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের এ মাঠেই বাংলাদেশ হংকংয়ের বিপক্ষে হারত না।
বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেছেন, ‘প্রতিপক্ষ চিন্তা করে খেলা কঠিন। (এশিয়া কাপে) মুশফিক দেড় শ করেছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। পাকিস্তানের বিপক্ষে তো প্রায় সেঞ্চুরিই করেছিল। তা হলে তো জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই শ রানের ইনিংস খেলা উচিত ওর। আসলে ক্রিকেট খেলাটা ওভাবে হয় না। আপনি কখনো খুব সাধারণ বলেও আউট হয়ে যেতে পারেন। আবার খুব ভালো বোলার, যেমন মোস্তাফিজ, তাহলে তো ওর প্রতিটা ম্যাচেই ৫-৬টা করে উইকেট পাওয়ার কথা। আসলে ক্রিকেট খেলা ওভাবে হয় না। যেটা করা উচিত, আপনার যদি ফর্ম ভালো থাকে, চেষ্টা করতে হবে ফর্ম ধরে রাখা, পেশাদারি দৃষ্টিভঙ্গিতে খেলা। শরীর, মানসিকতা, ঠিকমতো মানিয়ে নিতে না পারলে পারফর্ম করা কঠিন।’

মাশরাফি মানছেন, জিম্বাবুয়ে ঠিক আগের সেই দল নেই। কিন্তু সেটি মনে করে মাঠে নামার আগেই জিতে গেছি, এই মানসিকতার ফাঁদে পড়াও বোকামি, ‘ওই সময়ে জিম্বাবুয়ে অন্য রকম দল ছিল। বাংলাদেশের ক্রিকেটও তখন সবে পেশাদার যুগে প্রবেশ করছে। আমরা যে ওদের হালকাভাবে, ছোট করে দেখছি তা না। ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। বিশেষ করে তাদের সব সিনিয়র ক্রিকেটাররাই এসেছে। ওরা সেরাটা খেললে আমাদের জন্য কঠিন হবে। আমরা চেষ্টা করছি এশিয়া কাপে যে মানসিকতা নিয়ে খেলেছি, এখানেও যেন সেভাবেই খেলি। আর সেভাবে দেখলে আমরা তো এখানেও হংকংয়ের মতো দলের কাছে হেরেছি। ওটাও আমাদের মাথায় আছে। কোনো সুযোগ দিতে চাই না।’

এ তো গেল বাংলাদেশের হিসাব। আর জিম্বাবুয়ে? একের পর এক পরাজয়ে ক্লান্ত একটা দলকে মানসিকভাবে চাঙা রাখাই তো সবচেয়ে কঠিন কাজ। জিম্বাবুয়ে কোচ লালচাঁদ রাজপুত বলতে পারতেন বাংলাদেশরই কথা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১১তম দেখায় বাংলাদেশ যে জয়টা পেয়েছিল, সেটা ছিল টানা ৪৭ ম্যাচ জয়হীন থাকা এক দলের জয়। যেটি এখনো সবচেয়ে বেশি ম্যাচ ধরে জয়ের দেখা না পাওয়ার রেকর্ড হয়ে আছে। বাংলাদেশ সেই দুঃসময় পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে। জিম্বাবুয়েও নিশ্চয়ই পারবে।

রাজপুতের কথায় সেই আশাবাদ থাকল। আফগানিস্তানের কোচ থাকার সময় তাদের টেস্ট মর্যাদা পেতে বড় ভূমিকা রাখা এই কোচ আজ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একটা কথাই বললেন। যতটা মনে হচ্ছে, জিম্বাবুয়ে কিন্তু ততটা খারাপ খেলছে না। খেলায় কুড়িয়ে নেওয়ার মতো আশার নুড়িপাথর অনেক আছে। সেগুলো এখন শুধু জড়ো করে কলসিতে ফেলার পালা। তৃষ্ণা মেটানোর জলের খোঁজ মিলে যাবে তখুনি।