'জোড়া চশমা' আগেও পরেছে বাংলাদেশ

আজও শূন্য হাতে ফিরেছেন রাব্বি। ছবি: এএফপি
আজও শূন্য হাতে ফিরেছেন রাব্বি। ছবি: এএফপি
>ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ইনিংসেই শূন্য পেয়েছেন ফজলে মাহমুদ রাব্বি। টেস্ট ক্রিকেটে এক ম্যাচের দুই ইনিংসে শূন্য পেলে মজা করে বলা হয় জোড়া চশমা পেয়েছেন ব্যাটসম্যান। মজার ব্যাপার ক্যারিয়ারের শুরুর এমন চশমা বাংলাদেশ এর আগেও দেখেছে

অভিষেকের আগেই কঠিন দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে ফজলে রাব্বির ঘাড়ে। সাকিবের শূন্যতা পূরণের দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। কাজটা অসম্ভব বলে নিজেই স্বীকার করেছেন এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। তবু কি চাপ এড়ানো যায়? এ চাপেই হয়তো অভিষেক ইনিংসটা মাত্র ৪ বল স্থায়ী হলো।

মিরপুরে গত রোববার শুরুতেই নেমে পড়তে হয়েছিল রাব্বিকে। তাঁকে করা চাতারার বলটাও বেশ ভালো ছিল। অভিষেকের স্নায়ুচাপের মুহূর্তে অমন ক্যাচ তুলে দেওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। বলটাও ছিল দুর্দান্ত রকমের ভালো। আর অভিষেকে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের শূন্য হাতে ফেরাটা তো খুব একটা বিস্ময়কর কিছু নয়। রাব্বিসহ ১৩জন ব্যাটসম্যান এমন দুর্ভাগা। বাংলাদেশের জার্সিতে ওয়ানডে খেলা খেলোয়াড়দের দশ শতাংশই রাব্বির দলে আছেন।

আজ দ্বিতীয় ওয়ানডেতে রাব্বি অবশ্য আরেকটু ‘নির্বাচিত’ দলে ঢুকে পড়েছেন। ২৪তম ওভারের শেষ বলে থেমেছে ১৪৮ রানের দুর্দান্ত উদ্বোধনী জুটি। ২৫তম ওভার পুরোটাই খেলেছেন ইমরুল কায়েস। পরের ওভারেই প্রথম ব্যাট করার সুযোগ মিলেছে রাব্বির। সিকান্দার রাজার ওভারের পঞ্চম বলটিতে কী মনে হলো, অনেকটা এগিয়ে এসে মারতে চাইলেন। কিন্তু বলের লাইন মিস করলেন রাব্বি। ব্রেন্ডন টেলর সে বল গ্লাভসে আটকাতে অনেক বেশি সময় নিয়ে ফেলায় একপর্যায়ে মনে হয়েছিল বেঁচে যাচ্ছেন রাব্বি। কিন্তু তা আর হয়নি, কোনোমতে বলটি নিয়ন্ত্রণে রেখেই স্টাম্প ভেঙে দিয়েছেন টেলর। দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও শূন্য হাতে ফিরতে হলো রাব্বিকে। এবারের ইনিংসটা স্থায়ী হয়েছে পাঁচ বল। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ইনিংসেই শূন্য, রেকর্ড না হোক ব্যতিক্রমী কিছু তো বটে।

কিন্তু, না! বাংলাদেশের পক্ষে এমন কিছু এর আগেও দেখা গেছে, সেটিও তিনবার। ক্রিকেটে যখন বাংলাদেশের হাঁটি হাঁটি পা পা অবস্থা, তখন বাংলাদেশ দলে অভিষেক হয়েছিল হারুনুর রশিদের। ১৯৮৮ সালে দেশের মাঠের এশিয়া কাপের দুই ম্যাচ খেলেছিলেন এই ওপেনার। দুই ম্যাচ মিলে ১৭ বল খেললেও কোনো রান করা হয়নি তাঁর। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শূন্য গড়, শূন্য স্ট্রাইক রেট ও শূন্য রান নিয়ে শেষ হয়েছে তাঁর।

পেস বোলিংয়ের সঙ্গে ব্যাট হাতেও ভালো—এ তকমা নিয়ে আবির্ভাব হয়েছিল ডলার মাহমুদের। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ম্যাচ জেতানো একটি স্পেলও আছে এই পেসারের। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে যে দুইবার রান নিয়েছেন, দুবারই বলের চেয়ে রান বেশি করেছেন আক্রমণাত্মক সব শট খেলে। কিন্তু ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ওয়ানডেতেই শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন ডলার। ২০০৮ সালে অভিষিক্ত ডলারের ৭ ম্যাচের ক্যারিয়ার স্থায়ী হয়েছে ২০০৯ সাল পর্যন্ত।

পেস বোলিং অলরাউন্ডার খোঁজার পথে সবচেয়ে বড় নাম জিয়াউর রহমান। বোলিংয়ের চেয়ে অবশ্য বড় বড় সব শট খেলার জন্য স্থানীয় ক্রিকেটে বিখ্যাত এই অলরাউন্ডার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এর ছিটেফোঁটা টের পাওয়া গেছে, কালেভদ্রে। জিয়ার ক্যারিয়ারের শুরুটাও ছিল বেশ হতাশার। ২০১৩ সালের শ্রীলঙ্কা সিরিজে প্রথম ম্যাচে গোল্ডেন ডাক পেয়েছিলেন। বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া পরের ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগ পায়নি বাংলাদেশ। তৃতীয় ওয়ানডেতে টান টান উত্তেজনার মুহূর্তে নেমে দুই বলে শূন্য রান করে আরেকবার হতাশ করেছেন জিয়া।

একটি মজার তথ্য দেওয়া যেতে পারে। কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকারের ওয়ানডে ক্যারিয়ারও শুরু হয়েছিল জোড়া চশমা পড়ে। কিন্তু তিনি তাঁর ক্যারিয়ার কোথায় গিয়ে শেষ করেছেন, সেটি নতুন করে বলা এক ধরনের বাহুল্যই। ফজলে রাব্বি এই তথ্যটা মাথায় রাখতে পারেন। শুরুটা ভালো না হলেও ক্যারিয়ার তরতর করে এগিয়ে নেওয়ার উদাহরণটা তো থাকছেই।