মাশরাফির প্রেরণায় শাহাদাতের ফিরে আসা

লম্বা বিরতির পর বিসিবির কোনো দলে ফিরলেন শাহাদাত হোসেন। ফাইল ছবি
লম্বা বিরতির পর বিসিবির কোনো দলে ফিরলেন শাহাদাত হোসেন। ফাইল ছবি
>জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচে বিসিবি একাদশে সুযোগ পেয়েছেন শাহাদাত হোসেন। শাহাদাত সবশেষ বাংলাদেশ দলে খেলেছেন ২০১৫ সালের মে মাসে। চোট, গৃহকর্মী নির্যাতনের মামলায় পথটাই তাঁর বেঁকে যেতে বসেছিল। বিসিবি একাদশে সুযোগ পাওয়াটা তাঁকে নতুন করে আশা দিচ্ছে।

বিসিবির কোনো দল, তা সে জাতীয় দলই হোক কিংবা বোর্ডের নামের কোনো একাদশ, এমন দলে সবশেষ কবে খেলেছেন? শাহাদাত হোসেন অনেক চেষ্টা করে এতটুকু মনে করতে পারলেন, ‘২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে মনে হয়...।’ শাহাদাতকে ভুলেই গেছেন, তিনি ২০১৫ সালের মে মাসে পাকিস্তানের বিপক্ষেও টেস্ট খেলেছেন। ঢাকা টেস্টে বোলিং করতে গিয়ে ধপাস করে সেই যে পড়লেন, আর উঠতে পারলেন না! আক্ষরিক অর্থেই আর উঠতে পারেননি।

চোট কাটিয়ে ফিরতে ফিরতে আরেক ঘটনা। শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের মামলায় প্রথমে সস্ত্রীক পালিয়ে থাকতে হলো। পরে জেলও খাটলেন। লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নাম তোলা বাংলাদেশের একমাত্র পেসার শাহাদাতের ক্যারিয়ারটার পাশেই বড় প্রশ্নচিহ্ন বসে গিয়েছিল। সেই শাহাদাত যে আবার ফিরবেন বিসিবির কোনো দলে, কল্পনা করা কঠিনই ছিল একটা সময়। ৩২ বছর বয়সী পেসার অবশেষে ফিরেছেন। চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচে বিসিবি একাদশে আছেন তিনি।

জাতীয় দল না হোক, বিসিবির কোনো দলে এই ফেরাটা বড় সুযোগ হিসেবেই দেখছেন শাহাদাত, ‘কিছুক্ষণ আগে জানলাম। কবে খেলা হবে সেটাও জানি না। তবে এটা অবশ্যই আমার জন্য বড় পাওয়া, বড় সুযোগ। বিসিবির কোনো দলে ফেরা মানে নতুন করে এগিয়ে যাওয়ার একটা সুযোগ। আমি চেষ্টা করব এই সুযোগটা কাজে লাগাতে।’

ছন্দে ফিরতে শাহাদাত অনেক চেষ্টাই করে যাচ্ছেন। জীবনের কালো অধ্যায়টা পেছনে ফেলে চেষ্টা করছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত হতে। এই জাতীয় লিগে তিন ম্যাচে নিয়েছেন ১১ উইকেট। উইকেটসংখ্যায় আহামরি কিছু নয়। তবে ফতুল্লায় ঢাকা বিভাগের হয়ে চট্টগ্রামের বিপক্ষে শাহাদাতের বোলিংটা বিশেষ দৃষ্টি কেড়েছে নির্বাচকদের। ওই ম্যাচে নেন ৮ উইকেট। 

এই ডাক পাওয়াতেই ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরে গেল, এখনই এতটা ভাবা বাড়াবাড়ি। তবে নিজের ঘুণ ধরতে শুরু করা নিকট অতীত বিবেচনায় নিলে শাহাদাতের নিজের জন্যই বিসিবির কোনো দলে ডাক পাওয়া বড় খবর।

নিজেকে ফিরে পেতে শাহাদাতকে ভীষণ সহায়তা করেছেন একজন। তিনি মাশরাফি বিন মুর্তজা। বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়কের প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই শাহাদাতের, ‘মাশরাফি ভাই আমাকে ভীষণ অনুপ্রাণিত করেছেন। অনেকভাবে সহায়তা করেছেন। বলেছেন, তোর যদি খেলার ইচ্ছে থাকে গুরুত্বের সঙ্গে খেল। তিনি কিছু স্কিল ট্রেনিং দিয়েছেন আমাকে। সে অনুযায়ী কাজ করেছি। পরিশ্রম করেছি। ফলও পেয়েছি। মাশরাফি ভাইয়ের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা। চেষ্টা করব যেখানেই সুযোগ পাই সেটি যেন কাজে লাগাতে পারি।’

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বিসিবি একাদশে আছেন মিজানুর রহমান, জাকির হাসান, আফিফ হোসেন, ইবাদত হোসেনদের মতো কিছু নতুন মুখ। আছেন ওয়ানডে সিরিজের চমক ফজলে মাহমুদও। নাজমুল হোসেন শান্ত, মোসাদ্দেক হোসেন, নুরুল হাসান, আবু হায়দার, রুবেল হোসেনরাও পাচ্ছেন ঝালিয়ে নেওয়া সুযোগ। তবে নিঃসন্দেহে নতুন-পুরোনো মুখের ভিড়ে বিসিবি একাদশে সবচেয়ে বড় চমক শাহাদাতের ফেরা।

তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচের বিসিবি একাদশ:

ফজলে মাহমুদ রাব্বি, মিজানুর রহমান, নাজমুল হোসেন, জাকির হোসেন, মোসাদ্দেক হোসেন, আরিফুল হক, আফিফ হোসেন, নুরুল হাসান, ইবাদত হোসেন, আবু হায়দার, রুবেল হোসেন ও শাহাদাত।