রোনালদো-জিদানকে ধরে রাখতে পারেনি, স্পেন-রিয়ালকে ধ্বংস করেছেন!

রিয়াল কোচ হিসেবে ৪ মাসও পূর্ণ করা হলো না লোপেতেগির। ছবি: এএফপি
রিয়াল কোচ হিসেবে ৪ মাসও পূর্ণ করা হলো না লোপেতেগির। ছবি: এএফপি
>স্মরণকালের সেরা জাতীয় দলগুলোর একটি এবং ইতিহাসের সেরা ক্লাব দলগুলোর একটি, দুটিই একসঙ্গে সর্বনাশের প্রান্তে চলে গেছে এক সিদ্ধান্তে। বিশ্বকাপের মধ্যেই হুলেন লোপেতেগিকে গোপনে রিয়াল মাদ্রিদের কোচ বানানো। আর যে সিদ্ধান্তের মূল কারিগর ছিলেন ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ

এল ক্লাসিকোতে রিয়াল মাদ্রিদের ৫-১ গোলে হেরে যাওয়ার মূল দায় কার? স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক এএস এমন একটা জরিপ ছেড়েছিল। তাতে ৬৪ শতাংশ ভোট পেয়ে বিপুল ব্যবধানে জয়ে হয়েছেন ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। অভিনন্দন রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতি! যাকে ছাঁটাই করে পেরেজ আপাতত রোষানল থেকে বাঁচতে চাইছেন, সেই হুলেন লোপেতেগিকে এএস পাঠকেরা সবচেয়ে কম দায় দিচ্ছেন (১৪)। তৃতীয় সর্বোচ্চ দায় খেলোয়াড়দের (২২ শতাংশ)।

পেরেজের ওপর রিয়াল সমর্থকদের ক্ষোভ বাড়ছেই। এমনকি এও শোনা গিয়েছিল রিয়াল সমর্থকদের সবচেয়ে প্রভাবশালী একটি অংশ প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল। আপাতত তাদের শান্ত করার চেষ্টা চলছে। পেরেজের ওপর রিয়াল সমর্থকদের ক্ষোভের কারণ, ৫ মাস আগেও এই দলটা এমন ইতিহাস গড়েছিল, যা করে দেখাতে পারেনি কেউ। টানা তিন তিনটা চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়! এ তো অবিশ্বাস্য অর্জন! চ্যাম্পিয়ন লিগ যুগে যেখানে এর আগে টানা দুবারই কেউ জেতেনি এই ট্রফি।

সেই দলটাই ৫ মাসের মধ্যে এমন তলানিতে গিয়ে পৌঁছাল, স্পেনেরই দৈনিকগুলো হিসাব করে দেখিয়েছে, শুধু অক্টোবর মাসের হিসাব ধরলে স্প্যানিশ লিগের ২০তম দলটার নাম হতো রিয়াল মাদ্রিদ! এমন এলোমেলো হয়ে ওঠার মূল দায় পেরেজকে এ কারণে দেওয়া হচ্ছে, রিয়াল সভাপতির কারণেই দল ছেড়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। যেটা আর গুঞ্জন নেই, গতকালই রোনালদো খোলাখুলি এ ব্যাপারে মন্তব্য করেছেন। এমনও বলেছেন, রিয়ালকে ৯ বছর ধরে এত এত কিছু দেওয়ার পরও পেরেজ রোনালদোকে বিক্রয়যোগ্য পণ্য ছাড়া আর বেশি কিছু ভাবেননি। এই সময়েই রোনালদোকে বেচলে ভালো দাম মিলবে ভেবেই তাঁকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

পেরেজ জিনেদিন জিদানকেও রাজি করাতে পারেননি ক্লাবে থেকে যাওয়ার ব্যাপারে। যে জিদান এই দলটাকে নিয়ে কোচ হিসেবে গড়েছিলেন নতুন ইতিহাস। জিদান আগেই মানে মানে কেটে পড়েছেন, কারণ জানতেন, ফল প্রত্যাশিত না হলে ইতিহাস গড়ার এই কীর্তি দুদিন বাদে ভুলে যাবে সবাই। বিদায় বেলায় জিদান সেটি আকারে ইঙ্গিতে বলেওছেন। এই যে ব্যর্থ হলেই ছুড়ে ফেলার সংস্কৃতি, এর জন্যও তো পেরেজ দায়ী!

পেরেজের ওপর সবচেয়ে বড় ক্ষোভটা অন্য কারণে। তিনি একই সঙ্গে স্পেন জাতীয় দল আর রিয়াল মাদ্রিদ দুই দলেরই সর্বনাশ করেছেন। এবার বিশ্বকাপে সেরা দলগুলোর একটি নিয়ে গিয়েও স্পেন কী ধাক্কাটাই না খেল! এর মূল কারণ, বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচ শুরুর আগে আকস্মিকভাবে ফাঁস হয়ে যাওয়া একটি খবর। স্পেনের তখনকার কোচ লোপেতেগি দলের সঙ্গে চুক্তিভঙ্গ করতে চলেছেন। কারণ এরই মধ্যে গোপনে তিনি চুক্তি করেছেন রিয়ালের সঙ্গে। বিশ্বকাপের পর আর জাতীয় দলের দায়িত্বে থাকবেন না, যদিও আরও দুই বছরের চুক্তি ছিল তাঁর।

স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে লোপেতেগিকে কোচ বানানোর মূল কারিগর ছিলেন পেরেজই। পেরেজের কাছে কি তবে স্পেনের জাতীয় দলের চেয়ে নিজের ক্লাব, আরও স্পষ্ট করে বললে নিজের স্বার্থই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ! এই প্রশ্নও উঠেছিল তখন। ফেডারেশন বেশি কিছু না ভেবে বিশ্বকাপেই লোপেতেগিকে ছাঁটাই করে। ওই সংক্ষিপ্ত সময়ে ভারপ্রাপ্ত একজন কোচ এসে আর কীইবা করবেন? ফুটবল কোচের খেলা, কোচই এখানে আসল। স্পেন তাই বিশ্বকাপে ভুগেছে। প্রতিভাদীপ্ত তারুণ্য আর অভিজ্ঞতায় ভরপুর একটা দল নিয়েও পারেনি।

এমন পরিস্থিতিতে হুলেন লোপেতেগি, যে কোচকে কদিন আগেও স্পেনের সবাই সমীহ করত, এখন তাঁরও ক্যারিয়ার সংশয়ের মুখে। আগাম ছাঁটাইয়ের ফলে ক্ষতিপূরণ পাবেন নিশ্চয়ই। তবে যে অসম্মান আর অপমানে ভেতর দিয়ে গেলেন, তার কি কোনো ক্ষতিপূরণ হয়? এই প্রশ্নটাই তুলেছেন লোপেতেগির বাবা হোসে আন্তোনিও লোপেতেগি। তিনি প্রশ্ন করছেন, রিয়াল মাদ্রিদ যেখানে এত বড় রূপান্তরের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিল, মৌসুমে ৫০ গোল করে এমন একজন খেলোয়াড়ের শূন্যতা যেখানে কিছুতেই পূরণ হচ্ছিল না, সেখানে সবকিছুর দায় কেন কোচের ওপরেই ঠেলে দেওয়া হলো?

আসল দায়ী তো একজন। কিন্তু তিনি যে সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে!