মায়েরা খেলা দেখেন না

আবু জায়েদ আজ উইকেট পেয়েছেন নিজের শহরে প্রথম টেস্টেই। কিন্তু মাঠে ছিলেন না পরিবারের কেউ। ছবি: শামসুল হক
আবু জায়েদ আজ উইকেট পেয়েছেন নিজের শহরে প্রথম টেস্টেই। কিন্তু মাঠে ছিলেন না পরিবারের কেউ। ছবি: শামসুল হক
>আবু জায়েদ সিলেটের ছেলে। এ মাঠে তাঁর আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্ট অভিষেকের পর তিন ইনিংসে দারুণ বোলিং করা জায়েদ দেশে নিজের প্রথম টেস্টটাও খেললেন সিলেটেই

আবু জায়েদের অভিষেক আগেই হয়েছিল। হলো আরও একবার। গত ওয়েস্ট সফরে টেস্ট ক্যাপ পরেছিলেন। ক্যাপ নম্বর ৮৮। সিরিজে তিন ইনিংসে ৭ উইকেট নিয়ে নজরও কেড়েছিলেন। এর মধ্যে দুবার ইনিংসে তিনটি করে উইকেট। ‘সিলডি ফুয়া’ আবু জায়েদ এই প্রথম টেস্ট খেললেন দেশের মাটিতে। নিজের শহরে খেলেছেন বলে ভালো লাগছে। অদ্ভুত ব্যাপার, এখনো ওয়ানডে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা আবু জায়েদ নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচটিও খেলেছেন নিজের শহরে। গত ফেব্রুয়ারিতে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে।

নিজের শহরে প্রথম টেস্ট, সেটাতেই সুযোগ পেয়ে যাওয়া। অন্যপ্রান্তে যদিও সঙ্গ দেওয়ার মতো কোনো পেসার পেলেন না। তবে গ্যালারি থেকে সবচেয়ে বেশি সঙ্গ তিনিই পেলেন। হ্যামিল্টন মাসাকাদজাকে আউট করার পর গ্যালারির গর্জনটা দেখে বোঝাই গেল ‘দেশি ভাই’য়ের প্রতি বাঙালির টান সবখানেই। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনেও এলেন আবু জায়েদ।

নিজের মাঠে খেলার আনন্দের কথা বললেনও, ‘অবশ্যই ভালো লাগছে। প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও সিলেটে আমার অভিষেক হয়েছিল। সেটি এই মাঠেরও অভিষেক ছিল। টেস্টেও একই ব্যাপার হলো। আমি আনন্দিত। উইকেট পেয়ে আরও ভালো লাগছে। নাম লেখা থাকবে যে উইকেট পেয়েছি এখানকার প্রথম টেস্টে। চেষ্টা করব আরও ভালো করতে।’

স্মরণীয় ম্যাচ, পরিবারের কেউ কি এসেছিলেন খেলা দেখতে? আবু জায়েদ জানালেন, ‘বিপিএলের সময় আমার আম্মু এসেছিল। তখন আমার আম্মু বলছে, “মাঠের বদলে বাবা আমি টিভিতেই দেখব। টিভিতে তোকে দেখতে পারি, মাঠে এসে তোকে খুঁজেই পাই না।” উনি বলেছেন “মাঠে আসব না, টিভিতে দেখব। এত ঝামেলা নিতে পারব না।” তাই বাসা থেকে কেউ আসেনি।’

বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটারের মা-ই স্টেডিয়ামে এসে খেলা দেখেন না। এমনকি কেউ কেউ টিভিতে দেখতেও ভয় পান। পাছে ছেলে ব্যথা পায়, সে দৃশ্য কী করে সইবেন? মায়ের মন তো!

মাশরাফি বিন মুর্তজার মা হামিদা মুর্তজা একবার প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘আসলে ও (মাশরাফি) চোটে পড়ার পর থেকেই খেলা দেখি না। মনের ভেতর অজানা এক শঙ্কা কাজ করে। খেলা দেখলেই রক্তচাপ, হৃৎস্পন্দন অস্বাভাবিক বেড়ে যায়! একদম ঠিক থাকতে পারি না। আমার ধারণা, আমি না দেখলেই সে ভালো করবে। দোয়া-দরুদ পড়তে থাকি।’

সাকিব আল হাসানের মা শিরিন আখতার বলেছিলেন, ‘খুব টেনশন কাজ করে...ওর খেলা নিয়মিত দেখি টিভিতেই। মাঠে যেতে ভীষণ ভয় লাগে! শরীরটা কাঁপে। বাসাতেও ভয় লাগে। তখন হাঁটাহাঁটি করি।’

সব মায়ের অনুভূতি বোধ হয় একই রকম। মায়ের মমতার রং পুরো পৃথিবীতেই এক!

কিন্তু শুধু মা তো নন, পরিবারের আরও অনেকে আছে। বন্ধুরাও আছে, আছে আত্মীয়স্বজন। নিজ শহরে খেলা হলে বাড়তি চাপে পড়তে হয়। সবার আবদার টিকিটের। এ নিয়ে আবু জায়েদ আগে বেশ ঝামেলাতেও পড়েছিলেন, গত বিপিএলে। সবার টিকিটের আবদার মেটাতে গিয়ে হিমশিম খাওয়ার দশা। এ নিয়ে তখন পত্রিকায় বেশ লেখালেখি হয়েছিল। এতে কাজ হয়েছে। বাস্তবতা এখন সবাই বোঝে।

আবু জায়েদ সে কথাই বললেন, ‘এখন টিকিটের চাপ নাই। মাঝখানে সবাইকে বলেছিলাম, “ভাই খেলতে আসি, টিকিট দেওয়ার জন্য আসি না। সব মিলে আমাকে দুইটা বা পাঁচটা টিকিট দেয়। তাহলে আমি কীভাবে টিকিট জোগাড় করে দেব?” এরপর শ্রীলঙ্কা সিরিজের সময় থেকে কেউ আর টিকিট চায় না। এর জন্য ধন্যবাদ সাংবাদিকদেরও।’

টিকিট না হয় না-ই দিলেন, সিলেটবাসীর আবদার কিন্তু কম নয়। এমনিতে এই টেস্টে খালেদ আহমেদের অভিষেক হবে বলে অনেকে প্রত্যাশা করেছিলেন। খালেদও সিলেটের। এ কারণে আবু জায়েদের কাছে প্রত্যাশা বাড়ছে। টিকিট না দিন, উইকেট এনে দিন!