সাফজয়ী কিশোর ফুটবলাররা হারিয়ে যাবে না তো!

মালদ্বীপের বিপক্ষে মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়েই খেলেছিল নাজমুল। ছবি: সংগৃহীত
মালদ্বীপের বিপক্ষে মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়েই খেলেছিল নাজমুল। ছবি: সংগৃহীত
>

পাকিস্তানকে টাইব্রেকারে হারিয়ে অনূর্ধ্ব ১৫ কিশোর সাফ ফুটবলে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু এই প্রতিভাবান কিশোরেরা হারিয়ে যাবে না তো ?

নেপাল থেকে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবলের শিরোপা জিতে এসেছে বাংলাদেশের কিশোর ফুটবল দল। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে চলছে এই কিশোর প্রতিভাদের বন্দনা। সেই সঙ্গে দেখা দিয়েছে শঙ্কাও, দারুণ প্রতিভাবান এই ফুটবলারদের আমরা হারিয়ে ফেলব না তো!
শঙ্কাটা মোটেও অমূলক কিছু নয়। এটিই বাংলাদেশের ফুটবলের রীতি। বয়সভিত্তিক ফুটবলে আমরা বরাবরই ভালো করি। সব সময়ই দেশের প্রত্যন্ত প্রান্ত থেকে উঠে আসা প্রতিভাবান খেলোয়াড়ে ঠাসা থাকে এই দলগুলি। কিন্তু দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থার অবহেলায় বেশির ভাগ প্রতিভাই হারিয়ে যায়। যেমনটা হারিয়ে গেছে ২০১৫ সালে সিলেটে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাজয়ী দলটির খেলোয়াড়েরা, হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে গত বছর কাতারে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলে ইয়েমেনের সঙ্গে দুর্দান্ত খেলা আর কাতারকে ২-০ গোলে হারানো কিশোরেরা। বাফুফে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভুলে যায়, আর ক্লাবগুলি থাকে নির্বিকার। প্রতিভা গুলিকে অঙ্কুরে নষ্ট করে দেওয়ার ব্যাপারে কোনো প্রতিযোগিতা থাকলে নিশ্চিতভাবেই ‘সেরা’দের তালিকায় থাকত বাংলাদেশ!

নেপালে প্রথম ম্যাচেই মুগ্ধ করেছিল বাংলাদেশের কিশোর ফুটবলাররা। যে মালদ্বীপ এখন সিনিয়র পর্যায়ে বাংলাদেশের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে, তাদের অনূর্ধ্ব-১৫ দলকেই ৯-০ গোল হারায় কিশোররা। সে ম্যাচে নাজমুলের সেই মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে বীরদর্পে খেলে যাওয়ার দৃশ্যটি আবেগতাড়িত করেছে এ দেশের ফুটবলপ্রেমীদের। অথচ, এই দলটির সঙ্গে নাকি কোনো ফিজিও কিংবা চিকিৎসক পাঠানো হয়নি। এটি যদি তাঁর দৃঢ়তা হয়, তাহলে সেমিফাইনাল আর ফাইনালে ভারত আর পাকিস্তানের বিপক্ষে টাইব্রেকারে পাঁচটি শট ঠেকানো গোলরক্ষক মেহেদী হাসানের প্রতিজ্ঞা আর আত্মবিশ্বাসের কথা বলতেই হয়। এই ছেলেগুলি কেন হারিয়ে যাবে। কেন বাফুফে আলাদাভাবে বিনিয়োগ করে এদের ভবিষ্যতের তারকা হিসেবে গড়ে তুলবে না?

ফিজিও ছাড়া নেপাল যাওয়া এই দলটি প্রস্তুতির সময় পেয়েছে মাত্র আড়াই মাস। কোনো প্রস্তুতি ম্যাচ খেলারও সুযোগ হয়নি তাদের। কোচ, জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক ফুটবলার মোস্তফা আনোয়ার পারভেজ গড়ে পিটে নিয়েছেন এই ফুটবলারদের। বাকিটা কিশোরেরা পুষিয়ে দিয়েছে নিজেদের প্রতিভা দিয়ে। শেষ পর্যন্ত দেশের জার্সির অমর্যাদা করেনি তারা। দারুণ একটা সাফল্যই উপহার দিয়েছে দেশের ফুটবলকে।

সাফল্য বলে কথা! বাফুফে কি আর চুপ করে থাকে। আগের মতোই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কিশোর ফুটবলারদের নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার। তাদের সঙ্গে বিশেষ চুক্তি করার। ঠিক যেমনটি তারা দিয়েছিল ২০১৫ সাফজয়ী দলকে, ২০১৭-তে কাতারকে হারানো দলকে। তবে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগের কণ্ঠে অবশ্য প্রতিশ্রুতি রক্ষারই প্রতিজ্ঞা পাওয়া গেল, ‘দলটি আগামীকাল সকালেই সিলেটে চলে যাবে। ওদের নিয়ে আমাদের বিশেষ পরিকল্পনা আছে। ওদের সঙ্গে চুক্তিও হবে।’

সোহাগ যখন এ কথা বলছিলেন তখন পাশে বসা ছিলেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। দেশের ফুটবলকে সামনের দিনগুলিতে এগিয়ে নিতে তরুণ প্রতিভা খুঁজে বের করার যে কোনো বিকল্প নেই, সেটি সালাউদ্দিন ছাড়া ভালো আর কে বোঝেন? তিনি কি সেমিফাইনাল ও ফাইনালের বিজয়ের নায়ক গোলরক্ষক মেহেদীর সেই আর্তিটা শুনেছেন? সে বলেছিল, ‘আমরা আর কিছু চাই না, বাফুফে যেন আমাদের ধরে রাখে। তারা যেন আমাদের উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে।’
একটি শিরোপা বিনিময়ে অতি প্রয়োজনীয় এই আশাটা কি করতে পারে না মেহেদীরা ?