সাত দিনে তিন হ্যাটট্রিকে ঘুচল ছয় বছরের খরা

এই বলটা দিয়েই তুলে নিয়েছি ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিক—এ কথাই কি বলতে চাইলেন সিলেটের স্পিনার এনামুল। ছবি: প্রথম আলো
এই বলটা দিয়েই তুলে নিয়েছি ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিক—এ কথাই কি বলতে চাইলেন সিলেটের স্পিনার এনামুল। ছবি: প্রথম আলো
>জাতীয় লিগে এর আগে গত ছয় বছরে কোনো হ্যাটট্রিকের নজির ছিল না। কিন্তু এবার গত সাত দিনের মধ্যে তিন হ্যাটট্রিক দেখেছে জাতীয় লিগ

জাতীয় লিগ এর আগে হ্যাটট্রিকের দেখা পায়নি গত ছয় বছর। সেই খরা যে সাত দিনের ব্যবধানে এভাবে ঘুচবে তা জানত কে! গত বৃহস্পতিবার আগের রাউন্ডের ম্যাচে ছয় বছরের এই হ্যাটট্রিক খরা ঘুচিয়েছেন রাজশাহীর পেসার দেলোয়ার হোসেন। এরপর টানা দুই দিনে জাতীয় লিগ দেখল টানা দুই হ্যাটট্রিক!

পরশু রাজশাহীর বিপক্ষেই হ্যাটট্রিকের দেখা পান বরিশালের বাঁহাতি স্পিনার মনির হোসেন। আর কাল মৌসুমের হ্যাটট্রিকসংখ্যা তিনে নিয়ে গেলেন এনামুল হক জুনিয়র। ঢাকা মহানগরের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিক তুলে নিয়েছেন এই বাঁ হাতি স্পিনার।

বিসিএলে উত্তরাঞ্চলের বিপক্ষে ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়ে সর্বশেষ মৌসুমটা শেষ করেছিলেন আবদুর রাজ্জাক। দ্বিতীয় ইনিংসে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। আর প্রায় ছয় মাস পর ঢাকা মহানগরের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়ে এবারের জাতীয় লিগ শুরু করলেন এনামুল হক জুনিয়র। চলমান শেষ রাউন্ডের খেলায় রংপুরের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে রাজ্জাক নিলেন ৪ উইকেট, ঢাকার বিপক্ষে এনামুল ৫ উইকেট নিয়ে ছুঁয়ে ফেললেন রাজ্জাককে (ইনিংসে দুজনেরই ৩৪ বার করে ৫ উইকেট)।

বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হওয়ার পথে রাজ্জাক পেরিয়েছিলেন এনামুলকে। যেন সাপলুডু খেলায় ব্যস্ত দুই বাঁহাতি স্পিনার!

এত দিন শুধু একটা জায়গায় পিছিয়ে ছিলেন এনামুল—ক্যারিয়ারে হ্যাটট্রিক ছিল না কোনো। সেই অপ্রাপ্তিও ঘুচে গেল কাল। কক্সবাজার থেকে মুঠোফোনে এনামুল বললেন, ‘অনেক দিন ধরে খেলছি। একটা হ্যাটট্রিক ছিল না। সেটি হয়ে গেল। সকালে উইকেটে বল ঘুরছিল। পরপর দুই বলে উইকেট পাওয়ার পরই মনে হচ্ছিল, হ্যাটট্রিকটা হয়ে যাবে।’ নিজের পারফরম্যান্স নিয়েও আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আত্মবিশ্বাসী এনামুল, যার কারণ তাঁর ফিটনেস, ‘আমি অনেক দিন ধরেই ফিটনেস নিয়ে কাজ করছি। অনেক বেশি পরিশ্রম করে যাচ্ছি। এবার লিগ শুরুর আগে বিপ টেস্টেও আমার স্কোর ছিল ১২। এটা কিন্তু বেশ ভালো। এখান থেকে আমি আরও বেশি আত্মবিশ্বাস পেয়েছি। ফিটনেসের দিক দিয়ে আমি অন্য বোলারদের চেয়ে নিজেকে এগিয়ে রাখব।’

জাতীয় লিগের শেষ রাউন্ড শুরুর আগে এনামুলকে কক্সবাজার থেকে ছুটতে হয়েছে নিজের শহর সিলেটে। বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে ম্যাচ দিয়ে যে শহরের অভিষেক হয়েছে টেস্টে। সেই উৎসবের আবহেও তাঁর কণ্ঠ থেকে ঝরেছিল জাতীয় দলে ফেরার আকুতি। কাল আরও একবার জানালেন সেই স্বপ্নের কথা, ‘নিজেকে ফিট রাখতে আমার এই যে এত পরিশ্রম, নিজের স্কিল নিয়ে কাজ করে যাওয়া সবকিছুর পেছনে কারণ একটাই। আমি জাতীয় দলে ফিরতে চাই। অনেক সময় পারফরম্যান্স ঠিক থাকলেও ফিটনেসের কারণে ঘরোয়া পারফরমাররা সুযোগ পায় না। আমি সেই সুযোগ রাখতে চাই না।’

সেটি না হয় রাখলেন না এনামুল, কিন্তু তারুণ্যের জয়গানে বত্রিশ ছুঁই ছুঁই ‘বুড়ো’এনামুল নির্বাচকদের ভাবনায় আসবেন তো? জাতীয় দলের হয়ে লম্বা সময় খেলতে পারবেন এমন ক্রিকেটারদের প্রতিই যেখানে নির্বাচকদের ঝোঁক! এনামুল অবশ্য আশা ছাড়ছেন না, ‘তরুণ প্রতিভার সঙ্গে ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরমারদেরও একটু গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে আমার মনে হয়। যা হোক, আমার কাজ আমি করে যাব, আর ডাকের অপেক্ষায় থাকব।’