সুপার লিগ খেললেই আর বিশ্বকাপ খেলতে পারবেন না নেইমার-মেসিরা!

নিজের দিকে ধেয়ে আসা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইনফান্তিনো। ফাইল ছবি
নিজের দিকে ধেয়ে আসা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইনফান্তিনো। ফাইল ছবি
>ফুটবল লিকসের প্রকাশিত নতুন প্রতিবেদনের ফলে বেকায়দায় আছেন ফিফা প্রধান জিয়ান্নি ইনফান্তিনো, সাবেক উয়েফা প্রধান মিশেল প্লাতিনি থেকে শুরু করে ম্যানচেস্টার সিটি ও পিএসজির মালিকপক্ষও। শোনা যাচ্ছে, চ্যাম্পিয়নস লিগ বন্ধ করে দিয়ে ইনফান্তিনোর প্রচ্ছন্ন সহযোগিতায় ইউরোপের বড় বড় কিছু ‘মোড়ল’ ক্লাব নিজেদের নিয়ে আলাদা করে ‘সুপার লিগ’ শুরু করতে যাচ্ছে ২০২১ থেকে

আইএসএল এর কথা মনে আছে? আইসিসির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে ভারতে অনুষ্ঠিত এই টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের অর্থের ঝনঝনানিতে মজে গিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ক্ষতি করেছিলেন অনেক ক্রিকেটার। পরে আইসিসি সে টুর্নামেন্টে খেলা বিভিন্ন খেলোয়াড়দের নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। যাদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশের হাবিবুল বাশার, মোহাম্মদ রফিক, আফতাব আহমেদ, তাপস বৈশ্য, শাহরিয়ার নাফিসের মতো বেশ কিছু খেলোয়াড়ও।

ঠিক সেই পথেই হাঁটতে চলেছে ফিফা। কয়েক দিন আগে ফুটবল লিকস তাদের নতুন প্রতিবেদনে ফাঁস করেছে রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, চেলসি, জুভেন্টাস, বায়ার্নের মতো মোট ১১ ক্লাব নিজেরা মিলে ‘উয়েফা সুপার লিগ’ নামের কুলীন গোছের একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে চায়। তারা আর খেলতে চায় না পুরোনো চ্যাম্পিয়নস লিগ। আর এই ব্যাপারে ফিফা প্রধান জিয়ান্নি ইনফান্তিনো প্রচ্ছন্নভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। অথচ কাল এই ইনফান্তিনোই এই সব অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে ঘোষণা করেছেন, ‘সুপার লিগ’-এ যেসব খেলোয়াড় খেলবেন, বিশ্বকাপে আর খেলতে পারবেন না তাঁরা!

‘হয় সুপার লিগ, নয় ফিফার প্রতিযোগিতা। একই সঙ্গে দুই জায়গায় খেলতে পারবে না খেলোয়াড়েরা। উয়েফা সুপার লিগ যদি প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে সেখানে যারা খেলবে, তারা বিশ্বকাপ, ইউরোসহ ফিফা আয়োজিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো টুর্নামেন্টেই অংশ নিতে পারবে না,’ একরকম ‘হুঁশিয়ারি’ই যেন দিয়ে রাখলেন ইনফান্তিনো, যদিও ফুটবল লিকসের প্রতিবেদন অনুযায়ী এই সুপার লিগের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অন্যতম মূল হোতা খোদ ইনফান্তিনোই!

সেই ২০১৬ থেকে এই পরিকল্পনা সম্পর্কে শোনা যাচ্ছিল, কিন্তু এত বিস্তারিতভাবে এবারই প্রথম এই ঘটনা ফাঁস হলো। শোনা যাচ্ছে, ঘটনার মূল কুশীলব ইউরোপের সেরা ১১ ক্লাব—স্প্যানিশ লিগের রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, চেলসি, আর্সেনাল, লিভারপুল ও ম্যানচেস্টার সিটি, জার্মান লিগের বায়ার্ন মিউনিখ, ইতালিয়ান লিগের জুভেন্টাস আর এসি মিলান, ফরাসি লিগের প্যারিস সেন্ট জার্মেই। প্রস্তাবিত ১৬ দলের ‘উয়েফা সুপার লিগে’র বাকি পাঁচ সদস্য হবে আমন্ত্রিত পাঁচ ক্লাব—জার্মানির বরুশিয়া ডর্টমুন্ড, ইতালির ইন্টার মিলান আর এএস রোমা, ফ্রান্সের অলিম্পিক মার্শেই, স্পেনের অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। আর কোনোভাবে এই লিগ যদি শুরু হয়ে যায়, তাহলে হয়তো উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের আর কোনো অস্তিত্বই থাকবে না!

অনুমান করা হচ্ছে, ধনী ও বড় ক্লাবগুলো আরও ধনী হতে আর মাঝারি আর ছোট ক্লাবগুলোকে শুষে নিতেই এই পরিকল্পনা করেছে। এই মহাপরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের চার্লি স্টিলিটানোর মাথা থেকে। এই স্টিলিটানোই যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগের ক্লাবগুলোর সঙ্গে ইউরোপের বিভিন্ন ক্লাবের প্রীতি ম্যাচের আয়োজন করেন। আর এই পরিকল্পনাকে সামনে রেখে পুরো ব্যাপার বাস্তবায়ন করতে রীতিমতো উঠেপড়ে লেগেছেন রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। সঙ্গে আছেন বায়ার্ন মিউনিখের চেয়ারম্যান কার্ল হেইঞ্জ রুমেনিগেসহ ইউরোপীয় ফুটবলের রাঘববোয়ালেরা। যদিও ফুটবল লিকসে ব্যাপারটি উঠে আসায় নিজের ভূমিকা অস্বীকার করেছেন রুমেনিগে। পেরেজের বক্তব্য এখনো জানা যায়নি। আর গোটা পরিকল্পনা তত্ত্বাবধান করছেন ইনফান্তিনো। এ যেন সর্ষের ভেতরেই ভূত!

ফুটবল লিকসের প্রতিবেদনে আরও বেরিয়ে এসেছে, এই মূল ১১ ক্লাব একটা কোম্পানি গঠন করে স্প্যানিশ শেয়ারবাজারে নিবন্ধিত হওয়ার পরিকল্পনা এঁটেছে। বিভিন্ন ভাগে যে কোম্পানির মালিকানা থাকবে ওই ১১ ক্লাবের কাছে। এই কোম্পানির সবচেয়ে বড় শেয়ার থাকবে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে (১৮.৭৭%), দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শেয়ার থাকবে বার্সেলোনার কাছে (১৭.৬১%), তৃতীয় ও চতুর্থ সর্বোচ্চ শেয়ারের মালিকানা থাকবে যথাক্রমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড (১২.৫৮%) ও বায়ার্ন মিউনিখের (৮.২৯%) কাছে।