বাংলাদেশকে পেলেই জ্বলে ওঠেন টেলর

টেস্টে বাংলাদেশকে পেলেই জ্বলে ওঠেন ব্রেন্ডন টেলর। আজ টেস্টের তৃতীয় দিনে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন জিম্বাবুয়ের এই ব্যাটসম্যান। ব্যক্তিগত ৯৪ রানে ‘জীবন’ পেয়েছিলেন তিনি। আজ বেশ কিছু ক্যাচ ফসকেছে বাংলাদেশ
সেঞ্চুরির পর ব্রেন্ডন টেলর। ‘জীবন’ পাওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন তিনি। ছবি: এএফপি
সেঞ্চুরির পর ব্রেন্ডন টেলর। ‘জীবন’ পাওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন তিনি। ছবি: এএফপি

মিরপুর টেস্টের প্রথম দুই দিন মিলিয়ে ব্যাটিং করেছেন ৫৮৯ মিনিট। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস ঘোষণার সময় মাঠ ছেড়েছেন। এরপরই আবার নেমে পড়তে হয়েছে কিপিং গ্লাভস হাতে। বিশ্রামের সময় বলতে গেলে মাঝের রাতটুকু। আজ সকাল থেকে আবারও উইকেটের পেছনে। রাতের বিশ্রামকে পাল্টা যুক্তি হিসেবে উপস্থাপন করা যায়, কিন্তু তারপরও টানা ব্যাটিংয়ের পর টানা কিপিংয়ের ধকল মুশফিকুর রহিম অস্বীকার করতে পারবেন না। আর এই ধকলের সুবিধা নিয়েই কি সেঞ্চুরি তুলে নিলেন ব্রেন্ডন টেলর?

প্রশ্নটা উঠছেই। আর এই প্রশ্নের মোড়কের মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রশ্নটাও নতুন নয়—এত দীর্ঘ সময় ব্যাটিংয়ের পর মুশফিকের কিপিং করাটা কি খুব বেশি জরুরি? দলে যখন লিটন দাসের মতো কিপার আর মোহাম্মদ মিঠুনের মতো বিকল্প আছেন। এই প্রশ্ন উঠছে কারণ টেলর ব্যক্তিগত ৯৪ রানে থাকতে তাঁকে ‘জীবন’ দিয়েছেন মুশফিক। জিম্বাবুয়ের ইনিংসের ৯১তম ওভারে তাইজুলের বলে টেলরের ক্যাচ ছেড়েছেন মুশফিক। স্টাম্পিং-ও কি ছিল? ক্রিকইনফোর ধারাভাষ্য কিন্তু বলছে, দুটি সুযোগই ছিল!

মুশফিকের ক্লান্তির কারণেই এই দুটি সুযোগ নষ্ট। তবে এ নিয়ে খুব বেশি কাটাছেঁড়ার করার সুযোগ টেলর নিজেই দেননি। আর মুশফিকও মনে মনে টেলরকে ধন্যবাদ দিতে পারেন। সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পর টেলর ইনিংস যে আর লম্বা করেননি। লম্বা করেননি—কথাটা বলতেই হচ্ছে। ১১০ রানে টেলরের ফিরে যাওয়া যে আসলে তাঁর নিজের ও তাইজুলের ‘যৌথ প্রযোজনা’র ফসল। যেখানে তাইজুলের কৃতিত্বই বেশি।

মিরাজের কৃতিত্ব শুধু বলটা লেংথে রেখেছিলেন। টেলর স্লগ সুইপের গন্ধ পেয়ে ওই শট খেলার ঝুঁকিটাই নিয়েছেন। এর আগেও একই শট খেলায় মিড উইকেট অঞ্চলে ফিল্ডার রেখেছিলেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। ওত পেতে থাকা তাইজুল শূন্যে লাফিয়ে উড়ে আসা বলটি যেভাবে তালুবন্দী করলেন তা ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে থাকবে অনেক দিন। টেলর ফেরায় বাংলাদেশের সমর্থকেরা নিশ্চিতভাবেই হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন। জিম্বাবুয়ের এই ব্যাটসম্যান যে বাংলাদেশের ‘পুরোনো শত্রু’।

‘পুরোনো শত্রু’ না বলে বরং ‘পরীক্ষিত প্রতিপক্ষ’ বলাই শ্রেয়। টেস্টে আজ নিজের পঞ্চম সেঞ্চুরি তুলে নিলেন টেলর। এর মধ্যে চারটি সেঞ্চুরিই বাংলাদেশের বিপক্ষে! আর এই চার সেঞ্চুরির মধ্যে আগের তিনটি ছিল তাঁর ঘরের মাঠে। এবার করলেন বাংলাদেশের মাঠে এবং নিশ্চিতভাবেই দলের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনের মুহূর্তে। জিম্বাবুয়ে ৪০ রানে ২ উইকেট হারানোর পর উইকেটে এসেছিলেন টেলর। একপর্যায়ে ১৩১ রানে ৫ উইকেট পড়লেও এক প্রান্ত ধরে রেখেছিলেন তিনি। এরপর ষষ্ঠ উইকেটে পিটার মুরের সঙ্গে ১৩৯ রানের জুটিতে ফলোঅন এড়ানোর পথ দেখিয়েছেন দলকে। টেলর ফেরার পর বাকিরা নিজেদের দোষেই সেই পথ হারিয়ে ফেলেছে।

বাংলাদেশকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেলেই যেহেতু জ্বলে ওঠেন, সংবাদ সম্মেলনে তাই টেলরের কাছে প্রশ্নটা অবধারিতই ছিল। বাংলাদেশের মুখোমুখি হওয়া নিশ্চয়ই উপভোগ করেন ? টেলরের জবাব, ‘না! হ্যাঁ, বাংলাদেশের বিপক্ষে হয়তো বেশি টেষ্ট ম্যাচ খেলেছি। কিন্তু তাঁদের স্পিনারদের জন্য অন্যতম কঠিন দল বলেই মনে হয়।’

আজকের আগে সর্বশেষ পাঁচ বছর আগে টেস্ট সেঞ্চুরির মুখ দেখেছিলেন টেলর। সেটি ২০১৩ সালে হারারেতে বাংলাদেশের বিপক্ষেই। টেলরের মোট পাঁচ টেস্ট সেঞ্চুরির মধ্যে আগের চারটি ছিল দেশের মাটিতে। বিদেশের মাটিতে প্রথম তিন অঙ্কের দেখা পেলেন আজ। এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে টেলর মনে করিয়ে দিয়েছেন জিম্বাবুয়ে এই টেস্টে এখনো অনেক পথ পিছিয়ে, ‘ভালো লাগছে (বিদেশের মাটিতে প্রথম সেঞ্চুরির জন্য)। গত কয়েক বছর ধরেই এখানে (বাংলাদেশ) বিশ্বমানের স্পিনারদের বিপক্ষে খেলা বেশ কঠিন ব্যাপার। তাই রোমাঞ্চিত হচ্ছি। তবে আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে। বাংলাদেশ ৫০০ তুলেছে, এখান থেকে হারা কঠিন।’

জিম্বাবুয়ে কিন্তু আরও আগেই গুটিয়ে যেতে পারত। তা হয়নি ক্যাচ মিসের মহড়ার জন্য। অভিষিক্ত খালেদ আহমেদের বলেই দুটি ক্যাচ ছেড়েছেন ফিল্ডাররা। মুরকেও কভার অঞ্চলে ‘জীবন’ দিয়েছেন নাজমুল ইসলাম। ৮৩ রান করা মুর এই ‘জীবন’ কাজে লাগিয়ে সেঞ্চুরি না পেলেও টেলর তা কাজে লাগিয়েছেন। শেষ দিকে মিরাজের বলে জার্ভিস ও চাকাভাও শর্ট লেগ ও স্লিপে ‘জীবন’ পেয়েছেন।

কাল জিম্বাবুয়েকে ফলোঅনে পাঠালে কিন্তু আবারও ক্যাচ মিস মহড়ার সুযোগ নেই। এমনিতেই শেরেবাংলার উইকেটে টেস্টের ‘চতুর্থ ও পঞ্চম দিনে আরও বেশি বাঁক’ আশা করছেন মুর। সম্ভাব্য এই অনুকূল পরিস্থিতিতে আবারও ক্যাচ মিসের মহড়া মানে টেলরের মতো ‘পরীক্ষিত প্রতিপক্ষ’কে সুযোগ করে দেওয়া—আর টেলর বাংলাদেশের বিপক্ষে সুযোগ কাজে লাগাতে সিদ্ধহস্ত তা তো জানা কথাই।