৪ উইকেট পেলে রেকর্ড, ৫ পেলেও রেকর্ড; ৭ পেলে বিশ্ব রেকর্ড!

এই সিরিজে ১৬ উইকেট হয়ে গেছে তাইজুলের। পরের ইনিংসে ৪ উইকেট পেলে রেকর্ডের খাতায় নাম লেখাবেন। আর ৭ উইকেট পেলে নাম লেখাবেন বিশ্ব রেকর্ডে
তাইজুল দাঁড়িয়ে আছেন একগাদা অর্জন আর রেকর্ডের সামনে। ছবি: প্রথম আলো
তাইজুল দাঁড়িয়ে আছেন একগাদা অর্জন আর রেকর্ডের সামনে। ছবি: প্রথম আলো

যে সংবাদ সম্মেলনের জন্য ৪০ মিনিট অপেক্ষা করতে হলো, সেটির আয়ু হলো ৪ মিনিটেরও কম। জিম্বাবুয়ের এবারের বাংলাদেশ সফরে সবচেয়ে ব্যতিক্রমী সংবাদ সম্মেলন হলো আজ। যেদিন জিম্বাবুয়ের সংবাদ সম্মেলনের দৈর্ঘ্য বাংলাদেশেরটিও ছাড়িয়ে গেল। তাইজুল ইসলাম যে এলেন!

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন, কম দিন হয়নি। ওয়ানডে অভিষেকেই হ্যাটট্রিকের অনন্য কীর্তির মালিকের অবশ্য এখন আর রঙিন পোশাকে খেলার সৌভাগ্য হয় না। তাইজুল তাই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন খুব কমই। আর মাঠে যতই দুর্দান্ত খেলুন, গ্ল্যামারের ছটা কম বলেই হয়তো সাংবাদিকেরাও তাঁর পেছনে ছোটে কম। এতে তাইজুলই হয়তো সবচেয়ে খুশি। সংবাদ সম্মেলনে কথা বলার মতো আপদ আর কী! কিন্তু নিজেই যে বারবার নিজেকে এই ঝামেলার মধ্যে ফেলছেন। মাঠে এমন পারফরম্যান্স, নিয়মিত হাজিরা দিয়ে যেতে হচ্ছে।


তাইজুল আজও এলেন। শুধু তো ৫ উইকেট নিয়েছেন বলে নয়, বাংলাদেশের গলার কাঁটা হয়ে থাকা ব্রেন্ডন টেলরকে ফিরিয়েছেন অবিশ্বাস্য ক্যাচে। ১১০ রানে টেলরকে থামাতে না পারলে দিনের শেষ দুটি সেশনে জিম্বাবুয়েই এগিয়ে থাকত। শুধু এই ইনিংসে নয়, তাইজুল সিরিজজুড়েই বাংলাদেশের সেরা খেলোয়াড়। ৬, ৫, ৫...তিন ইনিংসে তাঁর উইকেট হয়ে গেল ১৬টি।

আর চার উইকেট নিতে পারলে দুই টেস্টের সিরিজে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়া বাংলাদেশি বোলার হয়ে যাবেন। নিজের অভিষেক সিরিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯ উইকেট নিয়েছিলেন মেহেদী মিরাজ। ৫ উইকেট নিতে পারলে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে টানা চার ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়বেন। টানা তিন ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তিতে এনামুল জুনিয়র আর সাকিব আল হাসানকে ধরেই ফেলেছেন এর মধ্যে। আর যদি ৭ উইকেট নিতে পারেন? তাহলে তো বিশ্ব রেকর্ডই হয়ে যায়!

দুই টেস্টের সিরিজে ২৩ উইকেট নেওয়ার কীর্তি আছে তাইজুলদের মতো বাঁ হাতি স্পিনারদের শিরোমণি রঙ্গনা হেরাথের। ২০১৪ সালে হেরাথ পাকিস্তানের বিপক্ষে এই কীর্তি গড়েছিলেন। তাইজুল কি পারবেন?

তাইজুলের কথাবার্তা শুনে অবশ্য মনে হলো না রেকর্ড-টেকর্ড নিয়ে খুব একটা ভাবিত। তিনি ভাবছেন দল নিয়ে। নিজের রেকর্ড প্রসঙ্গে যে উত্তরটা দিলেন, তাতে নিজের কথা বললেন, নাকি দলের জয়ের সম্ভাবনার কথা, তা ঠিক বোঝা গেল না, ‘আসলে উইকেটের অবস্থাটা এমন, যদি আমরা নিয়ন্ত্রিত বল করতে পারি, তাহলে অসম্ভব কিছুই না। আমি আশাবাদী।’

সংশয়টা এ জন্যই জাগছে, তিনি 'আমি' নয়; ‘আমরা’য় বিশ্বাসী। তিনি ‘নিজ’ নন, ‘দলে’র জন্য ভাবছেন। আর এ কারণেই তাইজুলের জন্য প্রার্থনা করতে ইচ্ছে করবে আপনার। তাইজুলের নামে যেন রেকর্ডগুলো হয়!

এমন অনেক দিন গেছে, যেদিন তাইজুল ভালো খেলেও আলোতে আসেননি। হয় দল বাজে খেলেছে, নয়তো দলের কেউ একজন এমন খেলেছে, তাইজুলকে ভুলে তাঁকে নিয়েই মাতামাতি। এ নিয়ে তাঁর প্রকাশ্য কোনো আক্ষেপ নেই। তিনি বরং মাইক্রোফোন থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতেই পছন্দ করেন। আজ তো সাংবাদিকদের কেউ কেউ অনুরোধও করে বসলেন, এভাবে এক-দুই কথায় উত্তর না দিয়ে একটু খুলে বললে ভালো হয়। লেখার মতো কিছু না পেলে...তাঁদেরও রুটি-রুজি আছে।

তাইজুল অবশ্য জবাবে কিছু না বলে অপ্রস্তুত হেসে সংবাদ সম্মেলন শেষ করে উঠে গেলেন। আর এই অপ্রস্তুত চলে যাওয়ার পেছনে ঋজু যে ছায়া পড়ল পেছনের দেয়ালে, সেটাকে বেশ প্রত্যয়ী মনে হলো। যেন সেই ছায়া বলছে, যা বলার মাঠেই বলব, বল হাতে!

আরও পড়ুন: