বার্ডসলির অপেক্ষা ছিল ১৪ বছরের, মাহমুদউল্লাহর ৮
>
২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যামিল্টন টেস্টে সবশেষ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। টেস্টে দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটা পেতে মাহমুদউল্লাহর লেগে গেল ৮ বছর। টেস্ট ক্রিকেটে অবশ্য এক সেঞ্চুরির পর আরেকটির দেখা পেতে প্রায় ১৪ বছরের অপেক্ষার নজির আছে!
দীর্ঘ অপেক্ষা যখন শেষ হয়, তখন মুহূর্তটা কত মধুর হয়, এখন সেটি সবচেয়ে ভালো বলতে পারবেন মাহমুদউল্লাহ। অপেক্ষাটা যে ৮ বছর ৯ মাসের। টেস্ট ক্রিকেটে আবির্ভাবের পরের বছরই পেয়েছিলেন সেঞ্চুরি। টেস্টে দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটি পেতে মাহমুদউল্লাহর লেগে গেল ৮ বছর ৯ মাস! অপেক্ষা শেষ হতেই মাহমুদউল্লাহ যেন আকাশে উড়তে চাইলেন। যেভাবে উড়েছিলেন ৮ বছর আগে হ্যামিল্টনে।
শুধু উদ্যাপনেই নয়, মিল আছে আরও। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যামিল্টন টেস্ট মাহমুদউল্লাহ সেঞ্চুরি করেছিলেন দলের দ্বিতীয় ইনিংসে, চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে। আজ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টেও তাই। জিম্বাবুয়েকে ফলোঅন না করিয়ে বাংলাদেশ ব্যাটিং করতে নেমেছিল প্রতিপক্ষকে বড় লক্ষ্য ছুড়ে দিতে। বড় লক্ষ্য দিতে গিয়ে এ ইনিংসেও ব্যর্থ বাংলাদেশের টপ অর্ডার। ২৫ রানে নেই ৪ উইকেট। পঞ্চম উইকেটে মোহাম্মদ মিঠুনকে নিয়ে এই বিপর্যয় ঠেকিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। দুজন ১১৮ রান যোগ করায় জিম্বাবুয়ের সামনে ৪৪৩ রানের লক্ষ্য দেওয়া সম্ভব হয়েছে শেষ পর্যন্ত। মিঠুন ৬৭ রানে সন্তুষ্ট হলেও মাহমুদউল্লাহর রানক্ষুধা ছিল তীব্র।
কেন হবে না? ২০০৯ সালের ৯ জুলাই সেন্ট ভিনসেন্ট টেস্টে অভিষিক্ত মাহমুদউল্লাহ প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন নিজের পঞ্চম টেস্টেই। সময়ের স্রোতে পেরিয়েছে আট বছরের বেশি সময়, কেন যেন টেস্টে সেঞ্চুরি সংখ্যা ‘১’ কে ‘২’ করতে পারছিলেন না। অথচ এরই মধ্যে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে।
১১ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে আরও একটি আফসোস বয়ে বেড়িয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমার সব সেঞ্চুরি বিদেশের মাটিতে। দেশের মাঠে সেঞ্চুরি করতে চাই।’ সেই অপেক্ষা আজ ঘুচেছে। টেস্টে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তো বটেই, দেশের মাঠে প্রথমবারের মতো পেয়েছেন সেঞ্চুরির দেখা।
৭০ বলে ফিফটি করেছেন, ১২২ বলে সেঞ্চুরি। টেস্টে দীর্ঘ সেঞ্চুরি-খরা ঘুচিয়ে মাহমুদউল্লাহর উচ্ছ্বাস দেখে কে! মাভুতাকে কভারে ঠেলে দুই রান পূর্ণ হওয়ার আগেই শূন্যে দিলেন লাফ। হেলমেট খুলে খেলেন চুমু। এর পর সেজদা। দীর্ঘ অপেক্ষার অবসানে মাহমুদউল্লাহ সবুজ ঘাসে কপাল ছোঁয়াতেই পারেন। মজার ব্যাপার, অধিনায়ককে দেখে তাঁর সঙ্গী মেহেদী হাসান মিরাজও দিলেন সেজদা! মাহমুদউল্লাহর প্রাপ্তিতে তাঁর আনন্দও যে কম নয়!
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এর আগে দুই সেঞ্চুরির মাঝখানে সবচেয়ে দীর্ঘ অপেক্ষায় ছিলেন, নামটা অনেককে চমকে দিতে পারে, তামিম ইকবাল! ২০১০ সালের জুন মাসে ওল্ড ট্রাফোর্ডে সেই বিখ্যাত সেঞ্চুরির পর (টানা দুই টেস্টে সেঞ্চুরি করেছিলেন তামিম) টেস্টে আরেকটি সেঞ্চুরির দেখা পেতে তামিমকে অপেক্ষা করতে হয় ২০১৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত। মাঝখানে চার বছর ৫ মাসের অপেক্ষা। মোহাম্মদ আশরাফুলও এমন দীর্ঘ খরায় ছিলেন। ২০০৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি করার পর ষষ্ঠ সেঞ্চুরি করতে আশরাফুলকে অপেক্ষা করতে হয় চার বছর তিন মাস।
মাহমুদউল্লাহর ৮ বছরের অপেক্ষা যদি দীর্ঘ মনে হয়, ওয়ারেন বার্ডসলিরটা কী বলবেন? অস্ট্রেলিয়ান বাঁহাতি ওপেনারের সেঞ্চুরির অপেক্ষাটা ছিল ১৩ বছর ৩৪৬ দিনের। এটাই টেস্ট ক্রিকেটে দুই সেঞ্চুরির মাঝখানের দীর্ঘ বিরতির রেকর্ড। ভারতের মুশতাক আলীর অপেক্ষা ছিল ১২ বছর ১৫৯ দিনের।
মাহমুদউল্লাহ সে তুলনায় একটু ‘দ্রুতই’ পেলেন, তাই না?
টেস্টে দুই সেঞ্চুরির মধ্যে দীর্ঘ ব্যবধান
ব্যবধান | ব্যাটসম্যান | দেশ | সাল |
---|---|---|---|
১৩ বছর ৩৪৬ দিন | ওয়ারেন বার্ডসলি | অস্ট্রেলিয়া | ১৯১২-১৯২৬ |
১২ বছর ১৫৯ দিন | মুশতাক আলী | ভারত | ১৯৩৬-১৯৪৮ |
১০ বছর ৩৫১ দিন | ফ্র্যাঙ্ক উলি | ইংল্যান্ড | ১৯১২-১৯২৩ |
১০ বছর ২৩৮ দিন | উপুল থারাঙ্গা | শ্রীলঙ্কা | ২০০৬-২০১৬ |
১০ বছর ২৩ দিন | বিজয় মার্চেন্ট | ভারত | ১৯৩৬-১৯৪৬ |