'আমাদের চোখের পানি কেউ দেখে না'

জয়ের পর ব্রেন্ডন টেলরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় মাহমুদউল্লাহর। তবে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর কণ্ঠে ছিল কিছুটা অভিমানও।  ছবি: প্রথম আলো
জয়ের পর ব্রেন্ডন টেলরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় মাহমুদউল্লাহর। তবে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর কণ্ঠে ছিল কিছুটা অভিমানও। ছবি: প্রথম আলো
এই টেস্ট কেন মনে রাখবেন মাহমুদউল্লাহ? বাংলাদেশকে ২১৮ রানের জয় এনে দিয়েছেন জন্য? দেশের মাটিতে প্রথম সেঞ্চুরি করেছেন জন্য? নাকি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজটা ড্র করতে হয়েছে বলে?


মাঠের মতোই সংবাদ সম্মেলনেও তিনি অভিন্ন চরিত্র। ধীর, স্থির। কথা বলেন স্পষ্ট, তাতে পরিষ্কার চিন্তার ছাপও থাকে। তবু আজ এক সময়ে মাহমুদউল্লাহকে মনে হলো অভিমানী! বাংলাদেশ টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় বড় জয় পেয়েছে তাঁর নেতৃত্বে। ২১৮ রানে জিতেও মাহমুদউল্লাহকে এই প্রশ্নের মুখে দাঁড়াতে হলো— ট্রফিটা জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়ার মধ্যে গৌরবের চেয়ে কষ্টাই কি বেশি নয়? এই সিরিজ শুরুর আগে সবার প্রত্যাশা যে ছিল ২-০। অন্তত ১-০ হলেও মেনে নিত সবাই। কিন্তু ওয়ানডেতে যে জিম্বাবুয়েকে পাত্তাই দেয়নি বাংলাদেশ, তারা বাংলাদেশের মাটিতে এসে সিরিজ ড্র করে যায়, সেটি মেনে নেওয়াটা বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেশ কষ্টকরই।

মাহমুদউল্লাহ নিজেদেরই দোষ দেখছেন। আবার জিম্বাবুয়েকেও প্রাপ্য কৃতিত্ব দিতে ভুলছেন না, ‘সবাই চাচ্ছিল জিম্বাবুয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ জিতুক। আমার মনে হয় জিম্বাবুয়েকেও কৃতিত্ব দিতে হবে, ওরা ভালো ক্রিকেট খেলেছে। ব্যাটিং ও বোলিং দুই বিভাগে ভালো করেছে। প্রথম টেস্টে আমাদের “টেস্ট মেজাজে” ঘাটতি ছিল, যা টেস্ট ক্রিকেটে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ওই জিনিসটা আমরা করতে পারিনি, যা এই টেস্টে করতে পেরেছি। প্রথম টেস্ট শেষে একটা কথা বলেছিলাম, আমাদের টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে সবাই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম। প্রথম টেস্ট হারের পর আমরা খুব আহত হয়েছিলাম। আমরা চেয়েছিলাম তার বহিঃপ্রকাশ মাঠে ঘটাতে। আমার মনে হয় আমরা কিছুটা হলেও করতে পেরেছি।’

সিরিজ ড্র করার পর যে চারদিক থেকে অনেক সমালোচনার তির ছুটে আসছে বা আসবে, সেটাও যেন মাহমুদউল্লাহ জানেন, ‘যদি আপনি ম্যাচ জেতেন তাহলে অবশ্যই আপনার আনন্দ লাগা উচিত। ম্যাচ জিতলে ওইটুকু অধিকার থাকে, আনন্দ প্রকাশ করার। আমরা যখন খারাপ খেলি, ড্রেসিং রুমে মনটা আমাদেরই বেশি খারাপ হয়। আমাদের চোখের পানিটা কেউ দেখে না। আমরা এটা কাউকে বলিও না।’

কিন্তু আফসোসও কি হয় না, প্রথম টেস্টটা ওভাবে না হারলে...। মাহমুদউল্লাহ মানলেন, ‘ প্রথম টেস্টে আমরা খুব বাজে ক্রিকেট খেলেছি। শুরুতে আমাদের লক্ষ্য ছিল দুটি টেস্টেই জেতা। হোম কন্ডিশনে জিম্বাবুয়ে হোক, অস্ট্রেলিয়া হোক কিংবা অন্য যেকোনো দলই হোক, আমরা সব সময় চাই নিজেদের কন্ডিশনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে যেন সিরিজ জিততে পারি। যে ফরম্যাটই হোক আমাদের লক্ষ্য থাকে এমনটাই। সেদিক থেকে বললে, ট্রফিটা ভাগাভাগি করতে খুবই খারাপ লাগছে।’

তবে মাহমুদউল্লাহর জন্য এই টেস্টটা বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ক্রিকেট ক্যারিয়ারেই এই প্রথম দেশের মাটিতে সেঞ্চুরি করলেন। টেস্ট সেঞ্চুরি তো এল আট বছর পর। মাহমুদউল্লাহকে ব্যাপারটি তৃপ্ত করছে, ‘আমার শেষ পাঁচ টেস্টে ভালো পারফরমেন্স ছিল না, কোনো ফিফটি ছিল না। আমি এই সংস্করণটা নিয়ে একটু সমস্যায় ছিলাম। আমি চাচ্ছিলাম পারফরম্যান্স দিয়ে নিজের জায়গাটাকে মূল্যায়ন করতে। কারণ অধিনায়ক হিসেবে সব সময় সামনে থেকে পারফরম করতে হয়। ওই দায়বদ্ধতা আমার মধ্যে ছিল। আলহামদুলিল্লাহ, দলের জয়ে অবদান রাখতে পেরেছি। তবে আমার এখনো উন্নতির অনেক জায়গা আছে। আমি চাই এই সংস্করণে আরও ধারাবাহিক হতে।'