অথচ তিন বছরে বাংলাদেশের সেরা বোলার মাশরাফিই

গত তিন বছরে মাশরাফিই বাংলাদেশের সেরা বোলার  । ছবি: প্রথম আলো।
গত তিন বছরে মাশরাফিই বাংলাদেশের সেরা বোলার । ছবি: প্রথম আলো।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুর টেস্ট জয়ের চেয়ে এখন আলোচনায় মাশরাফির নির্বাচন করা নিয়ে নাজমুল হাসানের মন্তব্য। তাঁর বক্তব্যে মাশরাফি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ খেলবেন কি খেলবেন না, এটি নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়। মাশরাফির খেলা, না খেলা নিয়ে নাজমুল বলেছেন, ‘(মাশরাফি) আমাদের দলে অধিনায়ক হিসেবে খেলে।’ অথচ পরিসংখ্যান বলছে, গত তিন বছর ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি মাশরাফিই।


জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুর টেস্ট বড় ব্যবধানে জিতেছে বাংলাদেশ। এটির চেয়ে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে মাশরাফি বিন মুর্তজার নির্বাচন করা প্রসঙ্গে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের মন্তব্য। নির্বাচনী প্রচারণা রেখে মাশরাফি কি খেলতে পারবেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ?
আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না বললেও মাশরাফির ভাবনাটা হচ্ছে, বিশ্বকাপ পর্যন্ত অন্তত খেলবেন। আজ বিসিবি সভাপতির কথাতেও সেটিরই ইঙ্গিত আছে। বিশ্বকাপ দিয়েই যদি তাঁর শেষ হয়, দেশের মাঠে মাশরাফির শেষ ওয়ানডে সিরিজ হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই। বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডে গিয়ে খেলবে ৬টি ওয়ানডে। সেটি যদি হয়, দেশের মাটিতে মাশরাফির শেষ ওয়ানডে সিরিজ ক্যারিবীয়দের বিপক্ষেই। এটি এখনো চূড়ান্ত কিছু অবশ্য নয়। তবে এখনো পর্যন্ত সূচি তা-ই বলছে!
সেটি হলে, মাশরাফি এই ওয়ানডে সিরিজটি খেলবেন না? হঠাৎ এই প্রশ্ন উঠেছে যেহেতু মাশরাফি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়ার জন্য মনোনয়নপত্র কিনেছেন। চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়ে গেলে নড়াইল-২ আসন থেকে নির্বাচন করতে হবে তাঁকে। ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাশরাফিও নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত থাকবেন। আর যদি থাকেনই, তবে ৯, ১১ ও ১৪ ডিসেম্বর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে তিনি কীভাবে খেলবেন?
মনোনয়নপত্র কেনার পর থেকেই চুপ আছেন মাশরাফি। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে তাঁকে নিষেধ করা হয়েছে সংবাদমাধ্যমে কথা বলতে। মাশরাফির নির্বাচন-প্রসঙ্গে কথা বলতে চান না তাঁর সতীর্থ এমনকি বিসিবির কোনো কর্তাও। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা বলছেন,ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে না খেলার কোনো কারণই দেখছেন না তিনি। তবে, মনোনয়নপত্র কেনার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে মানুষের নেতিবাচক মন্তব্য নিয়ে তিনি নাকি ভীষণ চিন্তিত।
ক্রিকেটকে বিদায় না জানিয়েই রাজনীতিতে নাম লেখানোর সিদ্ধান্ত কতটা যথার্থ হয়েছে মাশরাফির? এ প্রশ্নে বিসিবি-প্রধান বলেছেন, ‘সে কিন্তু খেলোয়াড় হিসেবে খেলে না, আমাদের দলে অধিনায়ক হিসেবে খেলে।’ বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে সফল অধিনায়ক মাশরাফি। কিন্তু তিনি কি শুধুই অধিনায়ক হিসেবে দলে খেলেন? পরিসংখ্যান বলছে, দলের অন্যতম সেরা পারফরমার হিসেবেই খেলেন মাশরাফি; গত তিন বছরে বাংলাদেশের সেরা বোলার মাশরাফিই। ২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে আজ পর্যন্ত এই তিন বছরে ৩৯ ওয়ানডেতে ৪৮ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবার ওপরে আছেন মাশরাফি। এই সময়ে ২৮ ম্যাচে ৪২ উইকেট নিয়ে দুইয়ে মোস্তাফিজুর রহমান। ৩৫ ম্যাচে ৩৮ উইকেট নিয়ে সাকিব আল হাসান তিনে।
দলকে ধারাবাহিক সাফল্য এনে দিতে অধিনায়কের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়াটা জরুরি। ‘লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট’ যাকে বলে, সেটি না হতে পারলে একজন খেলোয়াড়ের অধিনায়কত্ব চালিয়ে যাওয়া কঠিন। মাইক ব্রিয়ারলির মতো শুধু অধিনায়কত্বের জন্য কাউকে দলে রাখার বিলাসিতা দেখানোর সুযোগ পৃথিবীর কোনো দলেরই নেই। বিসিবিরও নেই। মাশরাফির ক্ষেত্রেও নিশ্চয়ই এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। ক্ষুরধার ক্রিকেট মস্তিষ্ক তো আছেই, বোলার হিসেবেও মাশরাফি সব সময়ই দলে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন বলেই তিনি অধিনায়ক হিসেবে খেলে যাচ্ছে। তবে কাজটা তাঁর জন্য মোটেও সহজ নয়। সাত বার অস্ত্রোপচারের ধকল সামলে ছন্দ ধরে রাখতে হয়েছে। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই নতুন বলে ভালো করার রেকর্ড থাকার পরও ত্যাগ স্বীকার করেছেন। মোস্তাফিজ-তাসকিনদের মতো তরুণদের হাতে ইনিংসের শুরুতে বল তুলে দিয়েছেন। তবুও তরুণেরা মাশরাফিকে টপকে যেতে পারেননি। উইকেটপ্রাপ্তিতে গত তিন বছরের পরিসংখ্যানে মাশরাফিই সবার ওপরে।