যে পাঁচটা জায়গা ভাবাবে বাংলাদেশকে

টেস্টে ওপেনিং জুটি ভালো শুরু এনে দিতে পারছে না বাংলাদেশকে। ছবি: প্রথম আলো
টেস্টে ওপেনিং জুটি ভালো শুরু এনে দিতে পারছে না বাংলাদেশকে। ছবি: প্রথম আলো
>জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ শেষ। টেস্ট সিরিজটা বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত বাঁচিয়েছে। জিম্বাবুয়ের মতো দলের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জেতা হলো না... ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিশ্চয়ই আরও শক্তিশালী দল। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ভালো করতে পাঁচটি জায়গা নিয়ে ভাবতেই হবে বাংলাদেশকে।

‘জিম্বাবুয়ের সঙ্গে টেস্ট সিরিজ না হারা স্বস্তিকর’—কাল ফেসবুকে লিখেছেন ক্রীড়া লেখক ও কোচ জালাল আহমেদ চৌধুরী। এক সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক সে লেখায় তাঁকে উল্টো প্রশ্ন করেছেন, ‘সিরিজ না জেতা কি অস্বস্তিকর নয় ভাই?’ দুটিই সত্য। সিরিজ বাঁচানো গেছে, এটি যেমন স্বস্তিকর। আবার ক্রিকেটের কুলীন সমাজের তলানিতে থাকা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ না জেতা হতাশার। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১-১ সমতা নিয়ে বসে থাকার উপায় নেই। ২২ নভেম্বর থেকে শুরু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সিরিজ শুরুর আগে পাঁচটি জায়গা নিয়ে ভাবতেই হবে বাংলাদেশকে—

টপ অর্ডারের রোগ
ওপেনিং জুটির সমস্যাটা এখনো সমাধান হয়নি। বাংলাদেশ ইনিংস শুরু হতে না হতেই ভেঙে যায় উদ্বোধনী জুটি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চার ইনিংসে মাত্র একবার ৫০ পেরিয়েছে উদ্বোধনী জুটি। সব শেষ ১০ ইনিংসেও তাই, মাত্র একবার ‘ফিফটি’ করতে পেরেছে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি। উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পরপরই তিনে কিংবা চারে নামা ব্যাটসম্যান যে বিপর্যয় সামলাবেন, সেটিও দেখা যাচ্ছে কম। ইনিংসের শুরুতেই ২/৩ উইকেট হারানোর ধাক্কা নিয়ে শুরু হয় বাংলাদেশের ইনিংস। উদ্বোধনী জুটি কিংবা টপ অর্ডারের ধারাবাহিক ব্যর্থতা কতটা ভাবাচ্ছে সেটিই কাল বলছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান, ‘এই টেস্ট যদি দেখেন, ওপেনিংয়ে বেশ সংগ্রাম করেছি। ওই সময়ে দল বেশ চাপে পড়ে গিয়েছিল। আপনার টপ অর্ডার ব্যর্থ হলে, তিনটি উইকেট পড়ে গেলে দল অনেক চাপের মধ্যে পড়ে যায়। টপ অর্ডারে আমি শুধু ওপেনিংয়ের দুজনের কথা বলছি না। এর আগের যে টেস্টটি খেলেছি সেখানে আমরা মুশফিক, রিয়াদের (মাহমুদউল্লাহ) কাছ থেকেও রান পাইনি। এটি আসলে অনেক চিন্তার বিষয়।’ ভুল বলেননি নাজমুল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ভালো করতে হলে শুরুটা দারুণ হতেই হবে বাংলাদেশের। টপ অর্ডার ধারাবাহিক জ্বলে না উঠলে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে বড় মূল্যই দিতে হবে বাংলাদেশকে।

চিন্তার নাম ফিল্ডিং
মিরপুর টেস্টের চতুর্থ দিনেই জিম্বাবুয়েকে ৪৪৩ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দেয় বাংলাদেশ। এত বড় লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরু থেকেই ক্যাচ তুলে দিচ্ছিলেন জিম্বাবুইয়ান ব্যাটসম্যানরা। অথচ বাংলাদেশের ফিল্ডাররা ঠিকঠাক সুযোগটা কাজে লাগাতে পারছিলেন না। বিশেষ করে স্লিপ ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশের দুর্বলতা আরও একবার প্রকট হয়ে উঠেছে। পুরো টেস্টে হাতছাড়া হয়েছে অন্তত হাফ ডজন ক্যাচ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে এক ডজনের কম নয়। ক্যাচ হাতছাড়া নিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ কাল অবশ্য বললেন, উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই, ‘প্রথম টেস্টে স্লিপে বেশ কয়েকটা ফিফটি-ফিফটি সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। এটা নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। অনেক সময় একটা ক্যাচ ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। এই জিনিসটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। আশা করি ভবিষ্যতে আমরা এখানে উন্নতি করতে পারব।’ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ভালো কিছু করতে হলে ফিল্ডিংয়ে উন্নতির যে বিকল্প নেই।

বাংলাদেশের ফিল্ডাররা নিয়মিত হাতছাড়া করেছেন ক্যাচ। ছবি: প্রথম আলো
বাংলাদেশের ফিল্ডাররা নিয়মিত হাতছাড়া করেছেন ক্যাচ। ছবি: প্রথম আলো

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফর্ম
গত মাসে ভারতের বিপক্ষে দুটি টেস্টই হেরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। একটি ইনিংস ও ২৭২ রানে, আরেকটি ১০ উইকেটে। বড় ব্যবধানে হারলেও টেস্টে ক্যারিবীয়দের প্রাপ্তি ছিল রস্টন চেজের লড়াই। ভারতের বিপক্ষে টেস্টে তেমন ভালো না করতে পারলেও উইন্ডিজকে অনুপ্রাণিত করতে পারে ওয়ানডে সিরিজে তাদের লড়াই। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ভারতের দেওয়া ৩২২ রানের লক্ষ্য প্রায় ছুঁয়েই ফেলেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা টাই হয়েছে। সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডে অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজই জিতেছে। ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ভালো করা আর গত জুলাইয়ে দেশের মাঠে বাংলাদেশকে সিরিজের দুই টেস্টেই উড়িয়ে দেওয়ার স্মৃতি নিয়ে ক্যারিবীয়রা চট্টগ্রামে শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সফর।

ক্যারিবীয়দের ভারত সফর
কদিন আগে বিসিবির প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন বলছিলেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের যে খেলোয়াড়েরা শুধুই টেস্ট খেলেন তাঁদের রেখে দেওয়া হয়েছিল চেন্নাইয়ে। প্রায় এক মাস অনুশীলন করে তাঁরা এসেছেন বাংলাদেশ। প্রায় দেড় মাস ভারত সফরে থাকায় উপমহাদেশের কন্ডিশন সম্পর্কে ভালো একটা ধারণা পেয়েছেন। এটিই তাঁরা কাজে লাগাতে চাইবেন বাংলাদেশের বিপক্ষে। বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ কাল তাই বলছিলেন, ‘এটা ওদের কিছুটা হলেও সহায়তা করতে পারে। এখানকার কন্ডিশন অবশ্য কিছুটা ভিন্ন। আমরা যদি আমাদের হোম কন্ডিশনটা আমাদের মতো করে খেলতে পারি তাহলে ম্যাচের ফল আমাদের পক্ষে আসতেও পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমরা কতটা ভালো ক্রিকেট খেলছি। ওরা অনেক ভালো দল। আমরা মানসিকভাবে ও শারীরিকভাবে তৈরি থাকতে হবে কঠিন উইকেটে খেলতে।’

ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস আক্রমণ
জিম্বাবুয়ের চাতারা-জার্ভিসকে খেলতেই নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড় বাংলাদেশের! সিরিজে জিম্বাবুইয়ান পেসার জার্ভিসের ১০ উইকেট প্রাপ্তি সেটাই প্রমাণ করে। জিম্বাবুয়ের তুলনায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস আক্রমণ নিশ্চয়ই আরও কঠিন হবে। দুদিন আগে সৌম্য সরকার যেমন বলছিলেন, ‘অবশ্যই একটু কঠিন হবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলাররা খুব জোরে বোলিং করে। আমাদের উইকেটে জোরে বল খেলা একটু কঠিন। আমাদের ওই চিন্তা না করে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। গতি-সুইং, এসব আমাদের সামলাতে হবে।’ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস আক্রমণ নিয়ে ভাবতে চান না, ‘এভাবে চিন্তা করছি না। ওদের যে পেস বোলিং আক্রমণ আছে, সবাইকে আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজে খেলেছি। ওরা কেমন বোলিং করতে পারে, জানা আছে । আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেট এবং বাংলাদেশের উইকেট একও নয়।’