বাফুফের 'তুরুপের তাস' মেয়েদের ফুটবলে উন্নতি না অবনতি?

ভারতের বিপক্ষে বল দখলের লড়াইয়ে বাংলাদেশ। ফাইল ছবি
ভারতের বিপক্ষে বল দখলের লড়াইয়ে বাংলাদেশ। ফাইল ছবি

বাংলাদেশ ০ - ০ ভারত, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ ( সিনিয়র সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপ পর্ব )

বাংলাদেশ ১ - ৩ ভারত, ৪ জানুয়ারি ২০১৭ (সিনিয়র সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল)

বাংলাদেশ ১ - ৭ ভারত, ১১ নভেম্বর ২০১৮ ( অলিম্পিক বাছাইপর্ব)

২১ মাসের ব্যবধানে বাংলাদেশ ও ভারতের নারী জাতীয় ফুটবল দলের মধ্যকার শেষ তিন লড়াইয়ের বিবরণ। বাংলাদেশের উন্নতি হচ্ছে না অবনতি, বলে দিচ্ছে গোল খাওয়ার পরিসংখ্যানই। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের সাত গোল হজমের ব্যথাটা মূলত সেদিন দেশের মানুষকে স্পর্শ করতে দেননি মুশফিকুর রহিম ও মুমিনুল হক। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে পুরো দেশের চোখ নিজেদের দিকে টেনে নিয়েছিলেন এই দুই ক্রিকেটার।

ক্রিকেট থেকে আবার ফেরা যাক নারী ফুটবলে। বেশ কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের তুরুপের তাস মেয়েদের ফুটবল। দেশের ফুটবলে সীমাহীন ব্যর্থতার মাঝেও মেয়েদের বয়সভিত্তিক ফুটবলের সাফল্যকে দেয়ালে টাঙিয়ে নিজেদের অর্জনের বিজ্ঞাপন হিসেবে প্রচার করছে বাফুফে। মেয়ে ফুটবলে বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তাজিকিস্তানে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব–১৯ বাছাইপর্ব ও মিয়ানমারে সদ্য সমাপ্ত অলিম্পিক বাছাইপর্বে বের হয়ে এসেছে মেয়েদের ফুটবলের ভেতরের কঙ্কালটা।

সদ্য সমাপ্ত অলিম্পিক বাছাইপর্বের তিন ম্যাচে দুই গোল করার বিপরীতে মোট ১৩ গোল হজম করেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। দুই হারের বিপরীতে সবেধন নীলমণি নেপালের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র। এই ভরাডুবির পেছনে মেয়েদের অনভিজ্ঞতা কথা তুলে ধরেছে কোচিং স্টাফ। সন্দেহ নেই অন্যান্য দেশের খেলোয়াড়দের তুলনায় বাংলাদেশের মেয়েদের বয়স তুলনামূলক কম। কিন্তু ২১ মাস আগে এই কৃষ্ণা রানী সরকার, সিরাত জাহান স্বপ্না, মারিয়া মান্দারাই তো সিনিয়র সাফ ফুটবলে ভারতকে প্রায় নাকানি–চুবানি খাইয়েছিল। গত ২১ মাসে বিভিন্ন পর্যায়ে খেলে এই মেয়েদের অভিজ্ঞতা তো আরও বেড়েছে, কমেনি!

গত বছরের শুরুতে কত স্বপ্নই–না দেখিয়েছিল জাতীয় নারী ফুটবল দল। ছয় মাস আমেরিকায় অনুশীলন করে আসা আফগানদের জালে ৬ গোল দিয়ে বাংলাদেশের সাফ মিশন শুরু। আর শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে ড্র করে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। সেমিফাইনালেও আবার প্রতিপক্ষ মালদ্বীপের গলায় গোলের মালা পরিয়ে দেওয়া। আর ফাইনালে ৩-১ গোলে হারলেও সেদিন কিছু ভুল না করলে জিততেও পারত বাংলাদেশ।

ফাইনালে গোলরক্ষক সাবিনা আক্তারের ভুলের খেসারত দিয়েছিল বাংলাদেশ। বাকি দল দেখিয়েছিল অপূর্ব ফুটবলের নিদর্শন। প্রায় ২১ মাসের ব্যবধানে কৃষ্ণা রানী, স্বপ্নাদের তো আরও পরিণত হওয়ার কথা। কিন্তু কিসের কী, গোল হজমের পরিসংখ্যান দেখে মনে হচ্ছে তারা ফুটবলই ভুলে গিয়েছে!

শিলিগুড়িতে ২০ সদস্যের দলে এএফসি অনূর্ধ্ব–১৬ বাছাইপর্বের খেলোয়াড় ছিল ১৫ জন, ৮ জন খেলেছেন একাদশেই। সিনিয়র ফুটবলার বলতে ছিল সাবিনা খাতুন, সাবিনা আক্তার ও মাইনু মারমা। এদের মধ্যে মাইনুকে প্রথমার্ধেই তুলে নেওয়া হয়েছিল। তাই সেবার সাফের শিরোপা হাতে তুলে না নিতে পারলেও সবার ভবিষ্যদ্বাণী ছিল, ‘পরের টুর্নামেন্ট থেকে বাংলাদেশই ফেবারিট।’ ভারতীয় দলের কোচ সাজিদ ধরও বাংলাদেশকে প্রশংসায় ভাসিয়েছিলেন।

বাংলাদেশকে ভবিষ্যৎ ভাবার কারণও ছিল যথেষ্ট। ১৬ বছরের মেয়েরাই যেখানে অভিজ্ঞ কমলা দেবী, বালা দেবীদের ঠেকিয়ে দিচ্ছে অনায়াসে। সময়ের পালাক্রমে এই মেয়েরা পরিণত হয়ে এলে তারাই তো ছড়ি ঘোরাবে। কিন্তু পাশার দান গেল উল্টে। যেখানে অনূর্ধ্ব–১৬ খেলার পর ভারতসহ অন্যান্য প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে খেলেছে মেয়েরা, সেখানে অনূর্ধ্ব–১৯ পর্যায়ে খেলার পর ৭ গোল হজম। তাহলে কি বয়সে পরিণত হওয়ার সঙ্গে মেয়েদের পায়েও মরিচা ধরে গেল!

বিষয়টি মানতে নারাজ বাংলাদেশ দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন, ‘মিয়ানমার খুবই ভালো দল, তবু আমরা তাদের সঙ্গে ভালো খেলেছি। আর ভারতের বিপক্ষে শুরুতেই তিন গোল হজম করায় মেয়েরা বিচলিত হয়ে পড়ে। ফলে গোল ব্যবধান অনেক বেড়ে যায়। আমি এই ম্যাচটিকে অঘটনই বলব। তবে প্রথম দুই ম্যাচের ভুল ত্রুটি শুধরে নিয়েই নেপালের বিপক্ষে ড্র করি। এই বাছাইপর্বের অভিজ্ঞতা সামনের সাফে কাজে দেবে।’

দলটি জাতীয় দল হলেও বেশির ভাগ মেয়ের বয়স ১৮ বছরের নিচে। এর মধ্যে আবার আটজন আছে, যারা অনূর্ধ্ব–১৫ থেকে সিনিয়র জাতীয় দল পর্যন্ত সব দলেই বর্তমানে খেলছে। গলদটা এখানেই বলে মনে করছেন দেশের অন্যতম সেরা কোচ সাইফুল বারি টিটু , ‘একটা মেয়ে জাতীয় দলে খেলার পরে যদি সে আবার অনূর্ধ্ব–১৫ তে খেলে, তাহলে তার পারফরম্যান্স নেমে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ, সিনিয়র পর্যায়ে সে যে রকম প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়, বয়সভিত্তিক পর্যায়ে তার ছিটেফোঁটাও নেই। ফলে, জাতীয় দলে খেলা মেয়ের পুনরায় বয়সভিত্তিক দলে খেলা ঠিক নয়।’