ব্রাজিলের সব রেকর্ড ভেঙে দেবেন নেইমার!

নেইমারকে কেন্দ্র করেই পরিচালিত হয় ব্রাজিলের আক্রমণ। ছবি: এএফপি
নেইমারকে কেন্দ্র করেই পরিচালিত হয় ব্রাজিলের আক্রমণ। ছবি: এএফপি
>উরুগুয়ের বিপক্ষে কাল প্রীতি ম্যাচে নেইমারের গোলে জিতেছে ব্রাজিল। এই ম্যাচ দিয়ে দেশের হয়ে সর্বোচ্চসংখ্যক ম্যাচ খেলার তালিকায় দশে উঠে এলেন নেইমার। তাঁর বয়স ও পারফরম্যান্স বলছে, একদিন দেশের সব রেকর্ড ভেঙে দেবেন

রাশিয়া বিশ্বকাপের পর্দা নেমেছে সেই কবে। কিন্তু নেইমারকে নিয়ে ‘ট্রল’ চলছেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেইমার যেন মানুষের বিনোদনের খোরাক! তবে জাতীয় দলের জার্সিতে নেইমার কিন্তু একের পর এক নিশানা ভেদ করে চলছেন। তাঁকে পছন্দ করেন না—এমন ফুটবলপ্রেমী পর্যন্ত জানেন, নেইমার একদিন ব্রাজিলের সব রেকর্ড ভেঙে দিতে পারেন।

একটা সহজ সমীকরণ দেওয়া যাক—আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাতাশে পা রাখবেন নেইমার। অর্থাৎ জাতীয় দলে চোখ বুজে আরও পাঁচ-ছয় বছর খেলার সুযোগ আছে। এর মধ্যে ব্রাজিলের হয়ে সর্বোচ্চ গোল আর সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ড দুটি দখলের সুযোগ রয়েছে পিএসজি তারকার। ম্যাচ খেলার হিসাবে কাল রাতে যেমন তাঁর পেছনে পড়লেন গিলমার। নামটা চেনা চেনা লাগছে? চিনতে পারলে ঠিকই ধরেছেন। ‘পেলের গোলরক্ষক’খ্যাত গিলমার বিশ শতকে ব্রাজিলের সেরা গোলরক্ষক ছিলেন। ব্রাজিলের প্রথম দুটি বিশ্বকাপজয়ী এই গোলরক্ষককে পেছনে ফেলে কাল সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার তালিকায় দশে উঠে এসেছেন নেইমার।

গিলমার ৯৪ ম্যাচ খেলেছেন দেশের হয়ে। নেইমারের হলো ৯৫। তাঁর সামনে বেশ বড় বড় সব নাম—রোনালদিনহো (৯৭), রোনালদো (৯৮), দালমা সান্তোস (৯৮), রবিনহো (১০০), ক্লদিও তাফারেল (১০১), লুসিও (১০৫), দানি আলভেজ (১০৭), রবার্তো কার্লোস (১২৫) ও সবার শীর্ষে থাকা কাফু (১৪২)। ফিটনেস ধরে রাখতে পারলে বাকি পাঁচ-ছয় বছরে কাফুকে ধরে ফেলা সম্ভব নেইমারের জন্য। আর একটি ব্যাপার মনে রাখা দরকার, এখনকার তারকা খেলোয়াড়েরা ভীষণ ফিটনেস–সচেতন হওয়ায় ক্যারিয়ার এমনিতেই তেত্রিশ-চৌত্রিশ বছর টানতে পারেন। সে ক্ষেত্রে নেইমার যে একদিন কাফুকে পেছনে ফেলবেন, সেই আশা করতেই পারেন তাঁর ভক্তরা।

এবার আসা যাক গোলের হিসাবে। এ নিয়ে তিন বছর আগেই বলে রেখেছেন রোমারিও, ‘শুধু বয়সের জন্যই সে অনেক রেকর্ড ভেঙে ফেলবে। পেলেকে টপকে সে একদিন ব্রাজিলের সর্বোচ্চ গোলদাতা হবে। এ জন্য আপনাকে শুধু হিসাব করতে হবে, ব্রাজিলের হয়ে এরই মধ্যে তার গোলসংখ্যা আর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কয় বছর বাকি আছে।’

বলা বাহুল্য, উক্তিটা নেইমারকে নিয়ে। ব্রাজিলের হয়ে এরই মধ্যে তিনি তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা। ৯৫ ম্যাচে ৬০ গোল। আর তিন গোল করলেই টপকে যাবেন রোনালদোকে এবং ১৮ গোল করলে পেছনে পড়বেন পেলে। তখন নেইমারই হবে ব্রাজিলের সর্বোচ্চ গোলদাতা।

২৬ বছর বয়সী ফরোয়ার্ডের জন্য আনুমানিক বাকি পাঁচ-ছয় বছরের সম্ভাব্য ক্যারিয়ারে ১৮ গোল করা মামুলি ব্যাপার। আর ফরোয়ার্ডটির নাম নেইমার বলেই এখনই বাজি ধরা হয়—অলৌকিক কিছু না ঘটলে নেইমারই হতে যাচ্ছেন ব্রাজিলের সর্বোচ্চ গোলদাতা।

তা হলে ব্রাজিলের জার্সিতে সর্বোচ্চ ম্যাচ ও সর্বোচ্চ গোলের মূল দুটি রেকর্ডই হয়ে যাবে নেইমারের। তা না হয় হলো, কিন্তু নেইমার তবু ব্রাজিলের সর্বকালের সেরা হতে পারবেন কি?

ভ্রুকুটির কিছু নেই। গোলসংখ্যায় হয়তো ব্যাপারটা সে রকমই। তবে ব্রাজিলিয়ানদের কাছে সাফল্যই শেষ কথা। আর নেইমার ঠিক এখানেই পিছিয়ে।

না, নেইমার যে একদমই সফলতার মুখ দেখেননি, তা কিন্তু নয়। ২০১৩ ফিফা কনফেডারেশনস কাপ জিতেছেন, ২০১৬ রিও অলিম্পিকে জিতেছেন সোনাও। কিন্তু তাতে কি মন ভরবে ব্রাজিলের সমর্থকদের? বিশ্বকাপ জয়ই শেষ কথা, সেখানে নেইমারের এখনো কোপা আমেরিকা জয় বাকি।

ব্রাজিলের জার্সিতে শীর্ষ ১০ গোলদাতার তালিকায় যাঁরা আছেন, এর মধ্যে শুধু নেইমারের হাতেই বিশ্বকাপ ওঠেনি। সর্বোচ্চসংখ্যক ম্যাচ খেলা ১০ জনের তালিকায় নেইমারের সঙ্গে আছেন শুধু রবিনহো, তাঁরও জেতা হয়নি বিশ্বকাপ। রবিনহোকে কিন্তু অনেকে ভুলে যেতেও বসেছেন। নেইমার জানেন, চিরস্মরণীয় হয়ে থাকতে হলে, ব্রাজিলের ইতিহাসে অমরত্ব পেতে হলে জিতবে হবে বিশ্বকাপ।

২০২২ কাতার বিশ্বকাপেই হয়তো সেই প্রশ্নের উত্তর মিলে যাবে।