অসাধ্য সাধন করে সেমিতে সুইজারল্যান্ড

দাপট দেখিয়ে জিতল সুইজারল্যান্ড। ছবি: এএফপি
দাপট দেখিয়ে জিতল সুইজারল্যান্ড। ছবি: এএফপি
>দলে নামকরা কিছু প্রতিভার উপস্থিতি থাকলেও ফুটবলে কখনোই বড় কিছু জিততে পারেনি সুইজারল্যান্ড। কিন্তু এবার সেই অপ্রাপ্তি ঘোচানোর পথে বড় একটা ধাপ অতিক্রম করল তারা। পিছিয়ে পড়েও গত বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলা দল বেলজিয়ামকে ৫-২ গোলে বিধ্বস্ত করে উয়েফা নেশনস লিগের সেমিতে উঠল সুইসরা।

দলে আছেন লিভারপুলের তারকা জের্দান শাকিরি। আছেন গ্রানিত শাকা আর স্টেফান লিচস্টাইনারের মতো আর্সেনালে খেলা তারকারাও। রিকার্ডো রদ্রিগেজ, ম্যানুয়েল আকাঞ্জি, রোমান বোর্কি, হারিস সেফারোভিচ, ইয়ান সোমারের মতো তারকারাও ইউরোপে এসি মিলান, বেনফিকা, বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের মতো নামকরা দলে খেলেন। কিন্তু প্রতিভার ছড়াছড়ি থাকলেও সব সময় যেকোনো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা থেকে খালি হাতেই ফিরতে হয় সুইসদের। গত বিশ্বকাপেও সুইডেনের কাছে হেরে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই বাদ পড়েছিল তারা। কিন্তু এবার সে ট্রফি-শূন্যতা যে তারা যেকোনো মূল্যে ঘোচাতে চায়, সেই প্রতিজ্ঞাই দেখা গেল গত রাতের খেলায়। ১৭ মিনিটের মধ্যে দুই গোলে পিছিয়ে পড়ার পরেও বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলা দল, ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর বেলজিয়ামকে ৫-২ গোলে হারিয়ে উয়েফা নেশনস লিগের সেমিফাইনালে উঠেছে তারা।
‘অ্যাওয়ে গোলে’র নিয়মে কাল ম্যাচটি ১-০ বা ২-১ ব্যবধানে জিতলেই যথেষ্ট ছিল সুইসদের জন্য, কিন্তু খেলা শুরুর ১৭ মিনিটের মধ্যে হ্যাজার্ডের জোড়া গোলে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে তারা। না, এডেন হ্যাজার্ড না। ছোট ভাই থরগান হ্যাজার্ডের ছায়ায় গতকাল ঢাকা পড়েছিলেন বড় ভাই এডেন। সুইস ডিফেন্ডার নিকো এলভেদির ভুল পাস ধরে প্রথম গোল, আর দূরপাল্লার এক শটে দ্বিতীয় গোল করে কাল ম্যাচের প্রথমদিকে সুইস সমর্থকদের উন্মাদনা থামিয়ে দেন ছোট হ্যাজার্ড। দুই গোল হজমের পরে সুইসদের সামনে সমীকরণটা অনেক কঠিন হয়ে যায়, সেমিফাইনালে ওঠার জন্য তখন দরকার চার গোল! স্ট্রাইকার হারিস সেফারোভিচের দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকে সে প্রতিবন্ধকতাগুলো কি অসাধারণভাবেই না অতিক্রম করল তারা!
সুইসদের ‘উদ্ধার’ করার এই কাজ শুরু করেন এসি মিলানের লেফটব্যাক রিকার্ডো রদ্রিগেজ। বেলজিয়ামের উইঙ্গার নাসের চাদলি সুইস ডিফেন্ডার কেভিন এমবাবুকে বক্সের মধ্যে ফাউল করলে পেনাল্টি পায় সুইজারল্যান্ড। ঠান্ডা মাথায় সে পেনাল্টি থেকে গোল করে ব্যবধান কমিয়ে আনেন রদ্রিগেজ। এর পর থেকেই হ্যাজার্ডরা হতবাক হয়ে দেখতে থাকেন ‘সেফারোভিচ-শো’। শাকিরির সঙ্গে নিজের রসায়নটা আস্তে আস্তে জমিয়ে তুলছিলেন তিনি, আর এটাই কাল হয়েছে বেলজিয়ানদের। ৩১ আর ৪৪ মিনিটে দুই গোল করে প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগেই সুইজারল্যান্ডকে ৩-২ গোলে এগিয়ে দেন সেফারোভিচ। দ্বিতীয়ার্ধেও সুইস-জাগরণ রুখতে পারেনি বেলজিয়ানরা। ৬২ মিনিটে শাকিরি ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে এবার নিজের দলের হয়ে গোল করে প্রথমার্ধে করা ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করেন এলভেদি। আর ম্যাচ শেষ হওয়ার সাত মিনিট আগে শাকিরির আরেক ক্রসে হেড করে সুইসদের দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের গল্পটার উপসংহার টেনে দেন সেই সেফারোভিচ। ম্যাচ শেষ হয় ৫-২ স্কোরলাইনে।
সেমিফাইনালে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গী হয়েছে ইংল্যান্ড আর পর্তুগাল। সেমিফাইনালের বাকি স্থানটার জন্য লড়বে ফ্রান্স আর নেদারল্যান্ডস। আগামী জুন মাসে উয়েফা নেশনস লিগের সেমিফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে।