পাকিস্তানকে দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটের বিজ্ঞাপন বানাল নিউজিল্যান্ড

দুর্দান্ত জয়ের পর নিউজিল্যান্ডের উদ্দাম উদ্‌যাপন। ছবি: এএফপি
দুর্দান্ত জয়ের পর নিউজিল্যান্ডের উদ্দাম উদ্‌যাপন। ছবি: এএফপি
>

* আবুধাবিতে ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান
* টেস্টে পাকিস্তানের সবচেয়ে ছোট ব্যবধানের হার এটি

একদিকে বাচ্চাদের মতো লাফাচ্ছেন গ্যারি স্টিড, ওদিকে রাগে ক্ষোভে বাতাসে ঘুষি মারছেন মিকি আর্থার। এমন এক ম্যাচের শেষে দুই কোচের এমন প্রতিক্রিয়াই যেন দরকার ছিল। টেস্ট ক্রিকেটকে আরেকটি প্রথমের স্বাদ এনে দেওয়া এক ফলাফলে অমন কিছু মসলা না থাকলে যে চলছিল না। টেস্টের প্রশস্তিগাথা এক দিনে আরও একবার প্রমাণিত হলো, ক্রিকেট হচ্ছে গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। সে সঙ্গে আরেকটি সত্য প্রমাণিত হলো, পাকিস্তানকে নিয়ে কখনো আগ থেকে কিছু বলতে নেই।

আবুধাবি টেস্ট জিততে পাকিস্তানের আজ চতুর্থ দিনে দরকার ছিল ১৩৯ রান, হাতে ১০ উইকেট। ক্রিকেট খেলা অনুসরণ করে এমন সংবাদমাধ্যমগুলোর সবাই তাই তৃতীয় দিনের প্রতিবেদনে পাকিস্তানের জয়ের সম্ভাবনার কথাই বলেছিল। মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে ১৩০ রান তুলে ফেলার পর নিউজিল্যান্ডের পক্ষে কি কেউ বাজি ধরছিল? সম্ভবত না। উইনভিজ নামের স্কোর ও খেলার ফল অনুমান করার ওয়েবসাইট তবু নিউজিল্যান্ডকে আশা দেখছিল। পাকিস্তানের জয়ের সম্ভাবনা ৯৮ শতাংশ বলেছিল উইনভিজ। এর মানে নিউজিল্যান্ডের পক্ষেও জয় সম্ভব, হোক না সেটা ২ শতাংশের কম!

এক সেশন পর ওই দুই শতাংশকেই সত্য প্রমাণ করে ছাড়ল নিউজিল্যান্ড। টেস্ট ক্রিকেটেও প্রথমবারের মতো ৪ রানের ব্যবধানে হারল কোনো দল। অ্যাজাজ প্যাটেলের বলে জয় থেকে মাত্র ৫ রান দূরে থাকতেই এলবিডব্লু হয়ে গেছেন পাকিস্তানকে সকাল থেকে বয়ে নেওয়া আজহার আলী। ৪০ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর নেমে দলের অর্ধেক রানই করেছেন সাবেক অধিনায়ক। কিন্তু ৬৫ রানের চেয়েও বড় হয়ে উঠল আর ৫টি রান করতে না পারা।

এভাবে হারার কারণেই হয়তো পাকিস্তানকে নিয়েই এত বর্ণনা। কিন্তু আবুধাবি টেস্টের মূল আলোটা থাকছে নিউজিল্যান্ডের ওপর। টেস্ট ক্রিকেট টিকে থাকবে কি থাকবে না, এমন প্রশ্নে সবাই নেতিবাচক উত্তর দেন। কারণ, প্রতিপক্ষের মাঠে বিরুদ্ধ কন্ডিশনে ভালো করতে পারছে না কেউই। তাই আবুধাবি টেস্টে জয় থেকে পাকিস্তানের ১৩৯ রান দূরে থাকা গ্যালারির ফাঁকা অংশের সঙ্গে বেশ মানিয়ে যাচ্ছিল।

অ্যাজাজ প্যাটেল ও ইশ সোধি তাই সবাইকে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য করলেন সকালেই। শুরুটা প্যাটেলই করলেন। গতকাল উগ্রমূর্তিতে থাকা ইমাম-উল-হককে এলবিডব্লু করে দিলেন। ৪০ রানে প্রথম উইকেট হারাল পাকিস্তান। এরপর কিছুক্ষণ ৪ এর নামতা পড়ল পাকিস্তান। ৪৪ রানে আউট হলেন হাফিজ, ৪৮ এ হারিস সোহেল। দুজনই লেগ স্পিনার সোদির শিকার।

এরপরই ম্যাচটা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান। আজহার ও আসাদ শফিক মিলে চতুর্থ উইকেট জুটিতে গড়লেন ৮২ রান। নিল ওয়াগনারের বলে উইকেটের ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন শফিক (৪৫), মধ্যাহ্নবিরতিতে গেল দুই দল। তখনো বোঝা যায়নি কী হতে যাচ্ছে।

বাবর আজমের রানআউট দিয়ে শুরু হলো পাকিস্তানের দুর্ভাগ্য। প্যাটেলের তিন বলে সরফরাজ ও বিলাল আউট হতেই কু-ডাক শুনল পাকিস্তান। পরের ওভারে ওয়াগনারের বলে ইয়াসির শাহও ফিরলেন। পাকিস্তানের জিততে দরকার ২১ রান, নিউজিল্যান্ডের ২ উইকেট। কিন্তু হাসান আলীর আত্মাহুতির পর ম্যাচটা রূপ নিয়েছিল এক চরম অপেক্ষার লড়াইয়ে। যে দল আগে ধৈর্য হারাবে, তারাই হারবে। ৭ ওভারের জুটিতে মোহাম্মদ আব্বাসকে নিয়ে ৭ রান তুলেছিলেন আজহার। কিন্তু আর শেষ রক্ষা হয়নি।

টেস্ট ম্যাচের সেরা বিজ্ঞাপন বছরের একেবারে শেষেই দেখল ক্রিকেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউজিল্যান্ড: ১৫৩ ও ২৪৯
পাকিস্তান: ২২৭ ও
১৭১ (লক্ষ্য ১৭৬): (আজহার ৬৫, শফিক ৪৫, ইমাম ২৭, বাবর ১৩; প্যাটেল ৫/৫৯, সোধি ২/৩৭, ওয়াগনার ২/২৭)
ফল: নিউজিল্যান্ড ৪ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: অ্যাজাজ প্যাটেল
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে নিউজিল্যান্ড ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে।