আধডজন ক্যাচ ফেলার ওষুধ খুঁজছে বাংলাদেশ

আজ সংবাদমাধ্যমের সামনে রায়ান কুক। ছবি: বিসিবি
আজ সংবাদমাধ্যমের সামনে রায়ান কুক। ছবি: বিসিবি
>জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশ জিতলেও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাজে ফিল্ডিং। ক্যাচ হাতছাড়া নিয়ে দলের সহকারী কোচ কুকের ভাবনাটা অবশ্য ভিন্ন।

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের এই রোগটা পুরোনো—স্লিপ কিংবা ক্লোজ-ইন ফিল্ডারদের ক্যাচ হাতছাড়া করার দৃশ্য খুব নিয়মিত। টেস্টে বাংলাদেশই যে শুধু ক্যাচ হাতছাড়া করে, তা নয়। অন্য দলও করে। তবে বাংলাদেশের ফিল্ডারদের ক্যাচ হাতছাড়ার মাত্রাটা যেন একটু বেশিই। সব শেষ মিরপুর টেস্টে জিম্বাবুয়ের ফিল্ডাররা সহজ-কঠিন মিলিয়ে বড়জোর তিনটি ক্যাচ হাতছাড়া করেছেন। সেখানে বাংলাদেশের ফিল্ডাররা অন্তত হাফ ডজন! সিলেট টেস্টেও ক্যাচ ফেলার দৃশ্য চোখে বিঁধেছে। বেচারা খালেদ আহমেদ অভিষেক টেস্টে একটা উইকেট পাননি শুধু বাজে ফিল্ডিংয়ের কারণে। তাঁর বলেই ক্যাচ হাতছাড়া হয়েছে তিন-তিনবার।

বাংলাদেশ দলের ফিল্ডিং কোচ হিসেবে যিনিই দায়িত্ব নেন, সংবাদমাধ্যমের সামনে এলে তাঁকে ক্যাচ হাতছাড়ার অসুখ নিয়েই সাধারণত কথা বলতে হয়। আজ চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ দলের সহকারী কোচ রায়ান কুকও যেমন বললেন, ‘ক্যাচগুলো কিছুটা কঠিন ছিল। প্রথম টেস্টে আমরা ৯১ শতাংশ ক্যাচই ধরেছি, যেটি আমি দুর্দান্তই বলব। বিশ্বমানের। তবে দ্বিতীয় টেস্টে কঠিন কিছু ক্যাচ হাতছাড়া হয়েছে। ছেলেরা এটা নিয়ে আলোচনা করেছে। সামনে যেন এটা না হয়, খেলোয়াড়েরা কঠোর পরিশ্রম করছে।’

বছর দুয়েক আগে নিউজিল্যান্ড সফরে অন্তত গোটা বিশেক ক্যাচ হাতছাড়া করেছিলেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। তখনকার সহকারী কোচ রিচার্ড হ্যালসল বাজে ফিল্ডিংয়ের দুটি কারণ খুঁজে পান। বাংলাদেশের ফিল্ডাররা হয় টেকনিক্যালি ভালো নন অথবা ফিল্ডারদের মনঃসংযোগ ঠিক থাকে না। তবে বর্তমান সহকারী কোচ কুক তা মনে করেন না, বাংলাদেশের ফিল্ডারদের মনঃসংযোগে বিঘ্ন ঘটে। তিনি উদাহরণ দিলেন একজন শল্যবিদকে দিয়ে, ‘একজন চিকিৎসক দিনের শেষ অস্ত্রোপচার যেভাবে করেন, দিনের প্রথমটিও সেভাবেই করেন। আপনি আশা করবেন তার মনোযোগ ও পর্যবেক্ষণে ব্যত্যয় ঘটবে না।’

মানুষ হিসেবে ভীষণ ইতিবাচক কুক। সারাক্ষণ বাংলাদেশের ফিল্ডারদের উৎসাহ দিতে থাকেন। ভুল করলেও ভর্ৎসনা করেন না। বরং ইতিবাচক উপায়ে অনুপ্রাণিত করতে থাকেন। এমন ইতিবাচক কোচের চোখে বাংলাদেশ ফিল্ডারদের উন্নতিই ধরা পড়ছে। কুক একটি জায়গায় ঘাটতি দেখেন, ব্যাটিং-বোলিংয়ে আদর্শ তৈরি হলেও, ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের এখনো কোনো নায়ক নেই, ‘ফিল্ডিং নিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের দৃষ্টিভঙ্গি আমাকে মুগ্ধ করেছে। বেশ অগ্রগতি হয়েছে। তবে ফিল্ডিংয়ের মানের কথা বললে, দক্ষিণ আফ্রিকায় অনেকের উদাহরণ আছে। কেউ হয়তো জন্টি রোডস বা হার্শেল গিবসের মতো হতে চায়। এখানকার ক্রিকেটাররা সেই জায়গায় যাওয়ার চেষ্টা করছে। খেলোয়াড়দের তাই আরও ভালো হতে হবে।’

টেস্ট খেলুড়ে শীর্ষ দলগুলোর বিশেষজ্ঞ ফিল্ডারদের দেখা যায়। একটা সময় মার্ক ওয়াহ, মার্ক টেলর, রাহুল দ্রাবিড়, অ্যালিস্টার কুককে দেখা গেছে। এখন আছেন অজিঙ্কা রাহানে। বাংলাদেশে এমন কোনো বিশেষজ্ঞ ফিল্ডার কেন হয় না? কুক পার্থক্যটা দেখেন ক্রিকেটীয় সংস্কৃতিতে, ‘অতীতের ধারা ধরে রেখে এটা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় একেবারে তরুণ বয়স থেকে চার স্লিপ ও গালি দেখে অভ্যস্ত একজন ক্রিকেটার। এখানে উইকেট-কন্ডিশন একটা ব্যাপার। বাংলাদেশে চার স্লিপ রাখার মতো অবস্থা হয়তো নেই। দুই স্লিপ নিয়ে খেলতে হয়। এখানে শর্ট লেগ কিংবা সিলি পয়েন্ট বেশি ফিল্ডার থাকে।’

একটা ক্যাচ হাতছাড়া হলে একজন বোলারের বেদনা বোঝেন কুক। তবে তিনি মনে করেন, দলের কোনো বোলারই এতে ভীষণ দুঃখবোধ নিয়ে থাকেন না। সবাই জানেন, কেউ ক্যাচ ছাড়তে খেলছেন না। সব ফিল্ডার লড়েন বোলারকে সাফল্য এনে দিতে।