কাউকে দেখিয়ে দেওয়া নয়, প্রমাণের কিছু নেই

তাঁর সেঞ্চুরিতে কোনো খ্যাপামি নেই। ছবি: প্রথম আলো
তাঁর সেঞ্চুরিতে কোনো খ্যাপামি নেই। ছবি: প্রথম আলো
>ক্যারিয়ারের আট টেস্ট সেঞ্চুরির চারটিই এ বছর। হাথুরুসিংহে কোচ হয়ে আসার পর ধীরে ধীরে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে শুরু করা মুমিনুল এবার যেন ফিরে পেতে শুরু করেছেন...

বুনো শব্দটাই তাঁর অভিধানে নেই। তবু এক টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরি করলে একটু খ্যাপামি তো করা যেতই। মুমিনুল ঠিক কীভাবে উদ্‌যাপন করেছেন, এখন আর মনে পড়ছে না। মনে পড়ার কথাও নয়, তাঁর উদ্‌যাপন যে আলাদা করে চোখে লাগার মতো কিছু নেই। তবে এটুকু মনে পড়ছে, চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও যখন সেঞ্চুরি করলেন, কেতা অনুযায়ী ড্রেসিংরুমের দিকে ব্যাট আলতো করে উঁচিয়ে ধরেছিলেন। খুব ভাবতে ইচ্ছে করছিল, বাংলাদেশের নয়, মুমিনুল ব্যাট উঁচিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার ড্রেসিংরুমের উদ্দেশে!

এ বছর শুরুর চট্টগ্রাম টেস্টে মুমিনুলের জোড়া সেঞ্চুরির কীর্তি লঙ্কান ড্রেসিংরুমে বসে যিনি দেখেছেন, বাংলাদেশের ক্রিকেট তাঁর কাছে ঋণী। তবে এটাও সত্যি, চন্ডিকা হাথুরুসিংহের জমানায় বাংলাদেশ অনেক কিছু যেমন পেয়েছে, হারিয়েছেও। আর এই হারিয়ে ফেলার সবচেয়ে বড় বুক কাঁপুনি নাম ছিল মুমিনুল হক। বাংলাদেশের সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান ভাবা হচ্ছিল যাঁকে, তাঁর নানাবিধ দুর্বলতা আবিষ্কার করে হাথুরু মুমিনুলকে টেস্ট দলেও অপাঙ্‌ক্তেয় করে ফেলেন। মুমিনুল নিজেও পাল্টা জবাব দিতে পারছিলেন না। হু হু করে কমছিল তাঁর ঈর্ষা জাগানিয়া সেই ব্যাটিং গড়।

হাথুরু যে-ই সরে গেলেন, মুমিনুলও যেন ফিরে পেলেন নিজেকে। দীর্ঘ তিন বছর ও ২৩ ইনিংস পর সেঞ্চুরি খরা কাটালেন চট্টগ্রাম টেস্টে দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করে। এ বছর শুরুর সেই সফর দিয়েই হাথুরুর শ্রীলঙ্কা অধ্যায় শুরু হয়েছিল। মুমিনুল এ বছর পেলেন আরও দুটি সেঞ্চুরি। ক্যারিয়ারের আট সেঞ্চুরির চারটিই এক বছরে। আরও স্পষ্ট করে বললে, হাথুরুর রাহু থেকে নিজের ক্যারিয়ার-মুক্তির বছরে!

হাথুরু তাঁর ক্যারিয়ার নিয়ে যা করেছেন, এ নিয়ে মুমিনুল ভেতরে-ভেতরে রাগ পুষে না রাখাটাই অস্বাভাবিক কিছু। তবে চরিত্রটা মুমিনুল বলেই এই কথাগুলো বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে, না, কারও প্রতি তাঁর কোনো দ্বেষ নেই, 'এখানে দেখানোর কিছু নেই। হয়তো এটা আমার জন্য ভালো হয়েছে। মানুষের জীবনে ছোট ছোট কঠিন সময় আসে, ওই লড়াই করার সময়টা থেকে যে যেভাবে পারে শিক্ষা নেয়। আমার কাছে মনে হয় ওই জিনিসটা আমার জন্য ভালো ছিল। আর ওইভাবে চিন্তা কোনো সময় করিনি যে হাথুরুসিংহেকে দেখানোর জন্য ভালো খেলতে হবে। শেষ পর্যন্ত দিন শেষে আমাকেই মাঠে খেলতে হবে বাংলাদেশ দলের জন্য। ওইভাবে চিন্তা না করে সব সময় চিন্তা করি দলের জন্য কীভাবে ভালো করা যায়।'