ধর্ষণের অভিযোগ ওঠায় আতঙ্কিত নারী ক্রীড়াবিদেরা

>দেশের মহিলা ক্রীড়াঙ্গনে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠায় ক্ষোভে ফুঁসছেন নারী ক্রীড়াবিদেরা। সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীর শাস্তি কামনা করেন তাঁরা।

ক্রীড়াঙ্গনে মেয়েরা কতটুকু নিরাপদ? প্রশ্নটি সব সময়ই থাকে। নতুন করে প্রশ্ন উঠে গেল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ভবনে কিশোরী ভারোত্তোলকের তোলা ধর্ষণের অভিযোগ থেকে। দুই মাস আগে ভারোত্তলন ফেডারেশনের এক অফিস সহকারী এক ভারোত্তোলককে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ ওঠে। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত-বিধ্বস্ত সেই ভারোত্তোলক এখন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ভয়াবহ এই অভিযোগ তোলপাড় ফেলেছে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে। সাধারণত দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসেন বাংলাদেশের নারী ক্রীড়াবিদেরা। একটু ভালোভাবে জীবন ধারণ করার আশায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ক্রীড়া দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এঁরা চালিয়ে যান লড়াই। খেলাধুলার মতো একটি জায়গায় ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধের অভিযোগ ওঠায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন নারী ক্রীড়াবিদেরা। অভিযোগের তদন্ত সাপেক্ষে তাঁরা দোষীর উপযুক্ত কঠোর শাস্তিই দাবি করেছেন।

২০১৫ দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে ভারোত্তলনে সোনা জয় করেছিলেন মাবিয়া। নিজের খেলাতেই একজন নারী ক্রীড়াবিদ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন—এমন অভিযোগে বেশ অবাকই হয়েছেন। তিনি এ ঘটনায় রীতিমতো বিক্ষুব্ধ ও শঙ্কিত। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর শাস্তিরই প্রত্যাশা করেন দেশ সেরা এই নারী ভারোত্তোলক, ‘আমি নিজে কখনো খারাপ কিছুর শিকার হইনি। তবে আমাদের খেলোয়াড়ের অভিযোগ যদি সত্যি প্রমাণিত হয়, সোহাগ আলীর (অভিযুক্ত অফিস সহকারীর নাম) অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত। এমন শাস্তি হওয়া উচিত, আর যেন কেই নারীদের দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকানোর সাহস না পায়। আর আমরাও এখন থেকে আরও বেশি সতর্ক থাকব। এই অভিযোগ ওঠার পর আমাদের পরিবার এখন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।’

আরেক ভারোত্তোলক শাহরিয়া সুলতানা সূচি নারী ক্রীড়াবিদদের জন্য নারী কোচ প্রত্যাশা করেন, ‘আমি সব সময় দেখেছি অনেক পুরুষ কোচই মেয়েদের কোচ হতে আগ্রহী। অথচ, অনেক যোগ্য নারী কোচ আছেন। তাদেরই মেয়েদের ক্রীড়া দলের কোচ করা উচিত। আমি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে ধর্ষণের যে অভিযোগটি উঠেছে, সেটির সুষ্ঠু তদন্ত প্রত্যাশা করি। দোষীদের কঠোর শাস্তি চাই।’
এমন ভয়াবহ অভিযোগের বিষয়টি জানা ছিল না জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের। এই প্রতিবেদকের মুখ থেকে শুনে তিনি রীতিমতো হতাশ ও শঙ্কিত। বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত ও সঠিক বিচার হওয়া উচিত বলে মনে করেন সাবিনা, ‘অন্যদের কথা জানি না। তবে আমাদের ফুটবলে এমন কিছু হওয়ার সুযোগ নেই। আর ভারোত্তলনে যে অভিযোগ উঠেছে, তাঁর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। অভিযোগ প্রমাণিত হলে, কোনোভাবেই যে অপরাধী যেন ছাড় না পায়।’

ক্রীড়াঙ্গন ধর্ষণের অভিযোগ ওঠায় দুই দিন ধরেই খুব হতাশায় আছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্রীড়াবিদ ও সংগঠক, বাংলাদেশ মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুন নাহার ডানা, ‘খুবই ন্যক্কারজনক ঘটনা। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও কঠোর শাস্তি চাই। এখানকার মেয়েরা অনেক দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসে। ওদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। এই সুযোগটা কেউ নিতে চাইলে, শাস্তি পেতেই হবে।’