'অপমানিত' ভারতীয় অধিনায়কের চিঠি বিসিসিআইকে!

ভারতের নারী ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মিতালি রাজ। ছবি: টুইটার
ভারতের নারী ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মিতালি রাজ। ছবি: টুইটার
>মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হেরেছে ভারত। দলের ব্যাটিংয়ে অন্যতম ভরসা মিতালি রাজকে ছাড়াই সেই ম্যাচ খেলেছে ভারত। ব্যাপারটা সবাইকে চমকে দিলেও আসল ঘটনা তখন জানা যায়নি। বিশ্বকাপ শেষে বিসিসিআইকে পাঠানো এক বিস্ফোরক চিঠিতে সবকিছু খুলে বলেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এই নারী ব্যাটসম্যান

তিনি ভারতের নারী ক্রিকেটে ওয়ানডে দলের অধিনায়ক। মেয়েদের ক্রিকেটে অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানও। ওয়েস্ট ইন্ডিজে এবার মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ছিলেন ভারতের বড় ভরসা। কথাটা বোধ হয় পুরোপুরি ঠিক নয়। অন্তত ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট এবং নীতিনির্ধারকদের কাছে। মিতালি রাজ অন্তত এমনটাই মনে করছেন। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিসিআই) ‘পত্র–বোমা’ পাঠিয়েছেন এই ওয়ানডে অধিনায়ক।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে ভারতীয় দল থেকে মিতালির বাদ পড়াটা ছিল বড় চমক। এ নিয়ে মিতালি তখন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি। এমনকি সংবাদমাধ্যমের কাছেও মুখ খোলেননি। পাল্টা ক্ষোভ ঝেড়েছেন সরাসরি বিসিসিআইকে পাঠানো এক মেইলে। নতুন কোচ ও ভারতের সাবেক স্পিনার রমেশ পাওয়ার তাঁকে ‘অপমান’ করছেন বলে বিস্ফোরক অভিযোগ রয়েছে মিতালির সেই চিঠিতে। এমনকি বিসিসিআইয়ের কমিটি অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটরসের (সিওএ) সদস্য ও ভারতের নারী দলের সাবেক অধিনায়ক ডায়না এডুলজির বিপক্ষেও অভিযোগ তুলেছেন মিতালি। এই দুজন এককাট্টা হয়ে তাঁকে ‘ধ্বংস’ করার চেষ্টা করেছেন বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রান করা এই নারী ক্রিকেটার।

বিসিসিআই প্রধান নির্বাহী রাহুল জোহরি ও জিএম (ক্রিকেট অপারেশনস) সাবা করিমকে এই চিঠি পাঠিয়েছেন মিতালি। টানা দুই ফিফটির পরও তাঁকে দল থেকে বাদ দেওয়ার পেছনে শুধু ক্রিকেটীয় কারণ থাকতে পারে বলে মনে করেন না মিতালি। চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘নিজেকে চূর্ণবিচূর্ণ, হতাশ এবং খুব ছোট মনে হয়েছে। ভাবতে বাধ্য হয়েছি ক্ষমতায় থাকা কিছু মানুষের কাছে দেশের জন্য আমার অবদানের কোনো মূল্য নেই। তারা আমাকে ধ্বংস করতে চায়, আত্মবিশ্বাস গুঁড়িয়ে দিতে চায়।’

ভারতের নারী দলের কোচ ও সাবেক স্পিনার রমেশ পাওয়ার। ছবি : এএফপি
ভারতের নারী দলের কোচ ও সাবেক স্পিনার রমেশ পাওয়ার। ছবি : এএফপি

টেস্ট ও ওয়ানডেতে পঞ্চাশের ওপর ব্যাটিং গড়ের এই ব্যাটসম্যান চিঠিতে জানিয়েছেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে ওয়েস্ট ইন্ডিজে পা রাখার পর থেকেই কোচ পাওয়ার তাঁর সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করতে থাকেন। যদিও এর পেছনে কি কারণ, তা মিতালি বুঝতে পারেননি বলে চিঠিতে জানিয়েছেন। মূলত পাওয়ারের বিপক্ষেও বেশি অভিযোগ তুলেছেন মিতালি, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজে নামার পর থেকেই কোচের সঙ্গে সমস্যার শুরু। প্রথমে ছোট ছোট ব্যাপার নিয়ে তাঁর আচরণ ছিল অন্যায্য আর বৈষম্যমূলক। কোচ আমার আশপাশেও থাকতে চাইতেন না। নেটে অন্যদের ব্যাটিং দেখলেও আমি ব্যাট করতে এলেই তিনি সরে যেতেন। কিছু বলতে গেলে উপেক্ষা করে ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে চলে যেতেন। সবাই বুঝেছে যে আমাকে অপমান করা হচ্ছে। তবে আমি মেজাজ হারাইনি।’

মিতালি ভেবেছিলেন, তাঁর সঙ্গে কোচের এই আচরণ দলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই টিম ম্যানেজারকে বিষয়টি জানান। কিন্তু পরিস্থিতি এরপর আরও খারাপ হয়। পাওয়ার তাঁর সঙ্গে এমন আচরণ শুরু করেন যে দলে মিতালির কোনো অস্তিত্বই নেই! এমনকি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগে পাওয়ার তাঁকে মাঠে যেতেও নিষেধ করেছেন। এ নিয়ে চিঠিতে মিতালি লিখেছেন, ‘সন্ধ্যায় টিম মিটিংয়ের পর কোচ আমাকে মাঠে না যাওয়ার নির্দেশ দেন। কারণ, ওখানে নাকি সংবাদমাধ্যম থাকবে। আমি ভীষণ অবাক হই। আমি দলের সঙ্গে থাকলে সংবাদমাধ্যমের কি! ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ একটা ম্যাচে আমাকে মাঠে যেতে নিষেধ করা হয়েছে—এটা ভেবে প্রচণ্ড আঘাত পাই।’

সিওএ সদস্য ডায়না এডুলজিকে নিয়ে মিতালির অভিযোগ, ‘কখনো ভাবিনি আমার বিপক্ষে তিনি নিজের পদটা ব্যবহার করবেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজে কীসের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তার সবই ওনাকে বলেছি। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি সেমিফাইনালে আমাকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় ভীষণ হতাশ হয়ে পড়ি।’ মিতালি চিঠিতে এ কথাও লিখেছেন, ‘২০ বছরের ক্রিকেটজীবনে এই প্রথম এতটা হতাশ হয়েছি। ভেঙে পড়েছি। জানি এই মেইল আমার অবস্থানকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে। তিনি একজন সিওএ সদস্য আর আমি সামান্য এক খেলোয়াড়।’

সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে ছিটকে পড়ে ভারত। তার আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের পাওয়ার প্লে-তে ৩ উইকেটে ৩৮ রান তুলেছিল ভারত। দলের নিয়মিত ওপেনার মিতালি সেই ম্যাচে খেলেছেন মিডল অর্ডারে। যদিও অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে নামার অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। সেই ম্যাচে ৫ উইকেটে ১৯৪ রান তুলেছিল ভারত। পাকিস্তানের বিপক্ষে পরের ম্যাচে নির্বাচকদের মধ্যস্থতায় ওপেন করে ৫৬ রান করেছিলেন মিতালি। কিন্তু ওই ম্যাচের পর থেকেই কোচের ব্যবহার আরও খারাপ হয়ে যায় বলে চিঠিতে অভিযোগ করেছেন মিতালি।