সাকিবের 'বয়স হয়ে যাচ্ছে'!

>ক্রিকেটের কোন সংস্করণ তিনি বেশি ভালোবাসেন? অনেকের মনে হতে পারে, সাকিবের প্রিয় সংস্করণের তালিকায় টেস্ট পরেই থাকে। কিন্তু আজ সংবাদ সম্মেলনে মুগ্ধ করা এক উত্তর দিলেন বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক
ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণে সাকিব সব সময়ই উজ্জ্বল। ছবি: প্রথম আলো
ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণে সাকিব সব সময়ই উজ্জ্বল। ছবি: প্রথম আলো

জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ধবলধোলাইয়ের পর বাংলাদেশ দল যখন বিধ্বস্ত, দেশে তখন এক বোমা ফাটালেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। সংবাদমাধ্যমকে বললেন, ‘বেশ কিছু সিনিয়র ক্রিকেটার আছে, তারাও টেস্ট খেলতে চাচ্ছে না। চাচ্ছে না বলতে, যেমন সাকিব টেস্ট খেলতে চায় না।’

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজ খেলতে তখন গায়ানায়। গায়ানার হোটেল পেগাসাসের সুইমিং পুলের পাশে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে দুপুরে খেতে খেতে প্রথম আলোকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন সাকিব। সাক্ষাৎকারের একেবারে শেষ দিকে প্রশ্নটা করা হলো, আসলেই টেস্ট খেলতে চান না? অনেকক্ষণ চুপ থাকলেন। শুধু বললেন, ‘এ প্রশ্নের উত্তরটা না দিই।’

গত বছর সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের টেস্ট সিরিজ থেকে যখন বিশ্রাম নিলেন, তখনো প্রসঙ্গটা উঠেছিল। টেস্টের চেয়ে তাঁর কাছে কি টি-টোয়েন্টিই বেশি প্রিয়? এমনও অপ্রিয় প্রশ্ন সাকিবকে তখন শুনতে হয়েছিল। বিদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট খেলেন নিয়মিত, ইঙ্গিতটা ছিল সেদিকেই। আজ মিরপুর টেস্টের বিজয়ী অধিনায়ক হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে আসা সাকিবের উদ্দেশ্য শেষ প্রশ্নটা ছিল একই প্রসঙ্গে—কোন সংস্করণ আপনার বেশি প্রিয়?

সাকিবের উত্তরে বুঝতে পারবেন, টেস্টের প্রতি তাঁর কতটা দরদ, ‘টেস্ট শুরু হওয়ার আগে সবচেয়ে কষ্ট লাগে। টেস্ট জিতে গেলে সবচেয়ে আরাম লাগে। তৃপ্তির জায়গা এটাই। কালই ড্রেসিংরুমে বলছিলাম, টেস্ট জয়ের যে মজা, তৃপ্তি সেটা অন্য কোনো সংস্করণে নেই। বড় বড় ম্যাচ তো জিতেছি। কিন্তু ওই মজাটা টেস্টের মতো লাগে না। কিন্তু শুরুর আগে অনেক কষ্ট লাগে, টেনশন হয়। পাঁচ দিন খেলা, বয়স হয়ে যাচ্ছে! সব কিছু মিলিয়ে খেলার আগে কষ্ট লাগে। যখন খেলার ভেতরে ঢুকে পড়ি, ব্যাটিংয়ে রান করি, বোলিংয়ে উইকেট পাই তখন অনেক বেশি মজা লাগে। সেটা ওয়ানডে বলি, টি-টোয়েন্টি বলি, (টেস্টে) অনেক বেশি মজা লাগে।’

‘বয়স হয়ে যাচ্ছে’, সাকিবের রসিকতায় হাসিতে ফেটে পড়ে পুরো সংবাদ সম্মেলন কক্ষ। ৩১, কী এমন বয়স! তবুও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক যুগ তো কেটে গেছে। শুরুর সেই তেজ এখনো বজায় থাকবে, ভাবাও ঠিক নয়। তবুও সাকিব টেস্টকে উপেক্ষা করতে চান না। খেলতে চান হৃদয় দিয়ে। সেই হৃদয়ের টান কতটা, বোঝা যায় তাঁর ধূসর হয়ে যাওয়া ‘সবুজ’ ক্যাপটি দেখে। টেস্ট ক্যাপটা এতই ভালোবাসেন বিবর্ণ, রং চটে যাওয়ার পরও সেটি খুলতে চান না।

তবুও মাঝে মাঝে শরীর সায় দেয় না। যেমনটা দিতে চাইনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে। চোটে পড়ে দুই মাস মাঠের বাইরে থাকার পর মাত্র চারটি অনুশীলন সেশন কাটিয়ে একটা টেস্ট খেলা মোটেও সহজ নয়। সাকিব তাই চেয়েছিলেন মিরপুর টেস্ট থেকে ফিরতে। কিন্তু দলের কোচ স্টিভ রোডস নাছোড়। তিনি চেয়েছেন সাকিব খেলুন চট্টগ্রাম টেস্ট থেকেই। কোচের চাওয়া পূরণ করেছেন সাকিব, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম টেস্টটা আমি খেলতে চাইনি। একমাত্র কোচের কারণেই খেলা হয়েছে। আমি কখনই খেলতাম না। আমাকে যতবার বলেছে, বলেছি আমি পারব না। আমার আত্মবিশ্বাসই ছিল না। আপনারা যদি আমার বোলিং দেখেন, আমি তিন-চার ওভারের স্পেল করেছি। আমার শরীরের অবস্থা ওই রকম ছিল না। কিন্তু ও (কোচ) যেটা বলেছে যে, তুমি ম্যাচ খেলেই ফিট হতে পারবা। আমার মনে হয় আমি একমাত্র প্লেয়ার বিশ্ব ক্রিকেটে যে ম্যাচ খেলে ফিট হই। তবে একটা জিনিস ভালো যে আমি যে ছোট ছোট অবদান রাখতে পেরেছি, বিশেষ করে নতুন বলে ব্রেক থ্রু আমার কাছে মনে হয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অবশ্যই সবাই ভালো বোলিং করেছে, তবে ওই অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল এই সিরিজে জিততে।’

এই ছোট ছোট অথচ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ অবদান (১১৫ রান ও ৯ উইকেট) রেখেছেন বলেই তো সিরিজসেরার পুরস্কারটা তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।