রোডসের সঙ্গে সাকিবের জমেছে বেশ

অনুশীলনে সাকিব কথা বলছেন রোডসের সঙ্গে। ছবি: প্রথম আলো
অনুশীলনে সাকিব কথা বলছেন রোডসের সঙ্গে। ছবি: প্রথম আলো
>একটা দলের সাফল্যে কোচ-অধিনায়কের রসায়নটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাকিব-রোডসের রসায়নটা কেমন?

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে স্টিভ রোডসের রসায়নটা জমেছে বেশ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেট টেস্টের আগে বলেছিলেন, ‘সাকিব হলো সবচেয়ে সেরা ট্যাকটিক্যাল অধিনায়ক।’ এমন কৌশলী অধিনায়ককে ছাড়া সিরিজ খেলতে চান কোন কোচ! রোডস তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্ট থেকেই সাকিবকে চেয়েছেন। চোটে পড়ে দুই মাস মাঠের বাইরে থাকার পর মাত্র চারটি অনুশীলন সেশন করে টেস্ট খেলা মোটেও সহজ নয়। সাকিব তাই খেলতে চাননি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্ট। কিন্তু রোডস যে নাছোড়বান্দা!

কাল সংবাদ সম্মেলনে সাকিবই বললেন, কোচের অনুরাধে তিনি খেলেছেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম টেস্টটা আমি খেলতে চাইনি। একমাত্র কোচের কারণেই খেলাটা হয়েছে। আমাকে যতবার বলেছে, বলেছি পারব না। আমার বিশ্বাসটাই ছিল না। আপনারা যদি আমার বোলিং দেখেন, আমি ৩-৪ ওভারের স্পেল করেছি। আমার শরীরের অবস্থা ওই রকম ছিল না। কিন্তু কোচ যেটা বলেছে যে, তুমি ম্যাচ খেলেই ফিট হতে পারবা।’

বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নিয়ে রোডস সাফল্য পাচ্ছেন একের পর এক। ছবি: প্রথম আলো
বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নিয়ে রোডস সাফল্য পাচ্ছেন একের পর এক। ছবি: প্রথম আলো

সাকিব খেলেছেন। দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ধবলধোলাই করেছে বাংলাদেশ। টেস্ট সিরিজ জয়ের আনন্দক্ষণেও অ্যান্টিগার সেই স্মৃতি ফিরে আসে মিরপুরে। সেই তিক্ত অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে একবার কাষ্ঠহাসিতে রোডস বলেছিলেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এমন শুরু খুব কম কোচেরই হয়!’ ৪ জুলাই, অ্যান্টিগার স্যার ভিভ রিচার্ডস স্টেডিয়ামের ড্রেসিংরুমের সামনে খোলা বারান্দায় বসে দেখলেন, চোখের পলকে বাংলাদেশ কীভাবে ৪৩ রানে অলআউট হলো। ক্যারিবীয় সমুদ্র থেকে উঠে আসা এক দঙ্গল হাওয়াও হয়তো এত দ্রুত মিলিয়ে যায় না, যত দ্রুত গুটিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ! পুরো টেস্ট সিরিজেই আর মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি দলটা, শেষে তো ধবলধোলাই।

পাঁচ মাসের মধ্যে সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নিজেদের মাঠে ধবলধোলাই করে কেমন লাগছে রোডসের? এটিই যে হবে, আগে থেকেই নাকি জানা ছিল বাংলাদেশ কোচের, ‘অ্যান্টিগার ব্যর্থতার পর আমরা অনেক পরিশ্রম করেছি। জানি, যখন বিদেশে খেলতে যাব, আবারও আমাদের অগ্নিপরীক্ষা হবে। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে যেভাবে টেস্ট সিরিজ জিতেছি, সেটা হোক দেশে কিংবা বিদেশে, অবশ্যই অনেক বড় অর্জন। আমি ছেলেদের নিয়ে গর্বিত। অ্যান্টিগায় আমরা শোকে পাথর হয়ে গিয়েছিলাম। তবু আশাবাদী ছিলাম, দেশের মাঠে আমরাও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে একইভাবে হারাতে পারব।’

প্রশ্নটা হলো সরাসরি, ‘প্রতিশোধ’ নিয়ে কতটা তৃপ্ত? তৃপ্তির কথা বলতে গিয়ে অধিনায়ক সাকিবের প্রশংসাই বেশি করলেন রোডস, ‘প্রতিদিনই কিছু করার থাকে, এটিই আগামী দিনের ইতিহাস তৈরি করে। এবার আমরা ওয়ানডে সিরিজ নিয়ে ভাবব। তবে এ মুহূর্তে টেস্ট সিরিজ জয়টাকে বড় করে দেখছি। দুটি টেস্টেই ও যেভাবে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে, সাকিবের কথা আলাদা করে বলতেই হবে। একজন খেলোয়াড় কিংবা একজন অধিনায়ক হিসেবে তার পারফরম্যান্স ছিল প্রশংসনীয়।’

আর রোডস সম্পর্কে সাকিবের ধারণা কী, সেটি অধিনায়ক বলেছেন মিরপুর টেস্ট শুরুর আগেই, ‘আমার মনে হয়, ও খুব বন্ধুভাবাপন্ন। ওর ভালো একটা গুণ, সবার সঙ্গে খুব সহজে মিশতে পারে। যেটা একটা কোচের খুব বড় গুণ। ম্যান–ম্যানেজমেন্ট খুব ভালো, আমার কাছে মনে হয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’

একটা দলের সাফল্যে কোচ–অধিনায়কের রসায়নটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাকিব–রোডস এখানে ‘এ প্লাস’ পেয়েই উত্তীর্ণ হবেন।