পূজারা মুখ বাঁচালেন কোহলিদের

দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ভারতকে প্রথম দিন পার করিয়েছেন পূজারা। ছবি: এএফপি
দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ভারতকে প্রথম দিন পার করিয়েছেন পূজারা। ছবি: এএফপি
>অ্যাডিলেড টেস্টে প্রথম দিন শেষে ভারতের স্কোর ৯ উইকেটে ২৫০। চেতেশ্বর পূজারা রুখে না দাঁড়ালে ২০০ রানও হতো না ভারতের। ৪১ রানে ৪ আর ৮৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়েছিল ভারত!

ব্যাটিং অর্ডারের লেজ বেরিয়ে গিয়েছিল। অন্য প্রান্তে ছিলেন পেসার মোহাম্মদ শামি। ৮৮তম ওভারে চারটি বল খেলার পর পঞ্চম বলে তাই ১ রান চুরি করতে চেয়েছিলেন চেতেশ্বর পূজারা। কিন্তু কে জানত প্যাট কামিন্স অমন দুর্দান্ত ফিল্ডিং করবেন! অস্ট্রেলিয়ান পেসারের সরাসরি থ্রোতে পূজারা রানআউট হওয়াই হয়ে গেল অ্যাডিলেড টেস্টে প্রথম দিনের শেষ দৃশ্য। কোনো বোলারের কাছে হার মানলেন না, এটা ভালো হলো। না হলে যে অন্য কোনোভাবে বোঝানো যেত না ২৪৬ বলে পূজারার ১২৩ রানের ইনিংসটাকে।

ভারত প্রথম ইনিংসে ২০০ রান করবে, এটাই একসময় অভাবিত ছিল। প্রথম ৫ ব্যাটসম্যান শুধু নেমেছেন আর ফিরেছেন সাজঘরে। পূজারা একপ্রান্ত আগলে রেখে ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফরের শুরুটাকে ভয়াবহ হতে দিলেন না। প্রায় অর্ধেক রান এল তাঁর একার ব্যাটে। প্রথম দিন শেষে ভারত ৯ উইকেটে ২৫০।

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এই টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে কত কথাই–না হয়েছে! বেশির ভাগই টিম পেইনের দলের বিপক্ষে। ভিভিএস লক্ষ্মণ বলেছেন, এই অস্ট্রেলিয়া তাঁর দেখা দুর্বলতম। ফারুখ ইঞ্জিনিয়ার রায় দিয়েছিলেন, ভারত এই সিরিজ ৪-০ ব্যবধানে জিতবে। অস্ট্রেলিয়ার দু-একজন সাবেকও বিরাট কোহলির দলের পক্ষে গলা ফাটিয়েছেন। ডিন জোন্স যেমন বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারত এবার সিরিজ জিততে না পারলে আর কখনোই পারবে না। এসবই বলা হয়েছে টিম পেইনের দলকে ভারতের চেয়ে দুর্বল ভেবে নিয়ে। কিন্তু ভাবনা আর বাস্তবতার ফারাকটা টেস্টের প্রথম দিনেই দেখিয়ে দিয়েছেন স্টার্ক, হ্যাজলউড, কামিন্স, লায়নরা। এই চার বোলারই নিয়েছেন ২টি করে উইকেট।

অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের এই দেখিয়ে দেওয়ায় ভারতীয় টপ অর্ডারের বেশ ভালো সাহায্য ছিল। সেটি শট নির্বাচন আর কোন বল খেলব, কোনটা ছাড়ব, তা নিয়ে দ্বিধার জন্য। ভুল শট নির্বাচনের খেসারত গুনে ভারতের দুই ওপেনার (মুরালি বিজয় ও লোকেশ রাহুল) ফিরেছেন দলীয় ১৫ রানের মধ্যে। বিরাট কোহলি এসে দলের এই বিপদকে আরও ঘনীভূত করেছেন দলীয় ১৯ রানের মধ্যে বিদায় নিয়ে। প্যাট কামিন্সের বলে গালি অঞ্চলে কোহলির দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়েছেন উসমান খাজা। টেস্টে এ পর্যন্ত কামিন্সের চারটি বল মোকাবিলা করে দুবার আউট হলেন কোহলি। এর প্রথম নজির গত বছর রাঁচি টেস্টে। সেবার আউট হয়েছিলেন কামিন্সের প্রথম বলেই। আজ হলেন তৃতীয় বলে।

কোহলি ফেরার পর অজিঙ্কা রাহানে ও রোহিত শর্মার হাল ধরার কথা ছিল। লায়ন আর হ্যাজলউড তাঁদের ইনিংস বেশি লম্বা হতে দেননি। দুজনেই উইকেট দেওয়ায় একপর্যায়ে ভারতের স্কোর ছিল ৫ উইকেটে ৮৬। পূজারা এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে দেখেছেন সতীর্থদের আসা-যাওয়ার এই মিছিল। তিনে ব্যাটিংয়ে নেমে চেষ্টা করেছিলেন সবার সঙ্গেই জুটি গড়ার। রোহিতের সঙ্গে ৪৫, ঋষভ পন্তের সঙ্গে ৪১ রানের জুটি আরও দীর্ঘ হয়নি পূজারার সতীর্থদের জন্যই। শেষ পর্যন্ত সাতে নামা রবিচন্দ্রন অশ্বিন কিছুটা সঙ্গ (৬২) দিয়েছেন পূজারাকে। আর পূজারা নিজে? অ্যাডিলেডের ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পূজারা স্রেফ ধৈর্যের ছবি এঁকেছেন। তাতেই প্রথম দিনটা কাটাতে পেরেছে ভারত।

ট্যাকটিকসটা ছিল এমন, সতীর্থদের মতো বলের ওপর চড়াও হবেন না। উল্টো বলের জন্য অপেক্ষা করেছেন এবং নতুন বলের উজ্জ্বলতা নষ্ট হওয়ার পর সুযোগমতো হাত খুলেছেন। ২৩১ বলে সেঞ্চুরিটা অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তাঁর দীর্ঘতম ইনিংস। সব মিলিয়ে ২৪৬ বলে ১২৩ রানের ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়ের ছবি আঁকার পথে পূজারা টপকে গেছেন ২০১৪ সালে ১৩৫ বল খেলার ইনিংসকে। ৭ চার ও ২ ছক্কার এই ইনিংসে তিনি ঝুঁকি নিয়েছেন শেষের দিকে। ছক্কা মেরে পা রেখেছেন ‘নার্ভাস নাইনটিজ’-এ। এরপর চার মেরে পৌঁছেছেন ৯৯-য়ে। অন্য প্রান্তে থাকা শামি জায়গা বদলে করে পূজারাকে তাঁর প্রাপ্য সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার সুযোগটা করে দেন। পূজারা ছাড়া রোহিত করেছেন ৩৭, বাকিদের কেউ ৩০ রানের কোটা ছুঁতে পারেননি।

পূজারা এই সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পথে টপকেছেন ৫ হাজার রানের মাইলফলকও। কাকতালীয় ব্যাপার, তিনি টেস্ট ক্যারিয়ারের ৩ হাজার, ৪ হাজার ও ৫ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন রাহুল দ্রাবিড়ের সঙ্গে মিল রেখে। দ্রাবিড়ও পূজারার মতো ক্যারিয়ারের ৬৭তম, ৮৪তম ও ১০৮তম ইনিংসে এসে যথাক্রমে এই তিন মাইলফলকের দেখা পেয়েছেন। আর হ্যাঁ, দ্রাবিড়ের মতো পূজারাও তিনে ব্যাট করেন!