'লাফিং গ্যাস' দিয়ে নেশা করেছিলেন ওজিলরা!

বেলুনের মাধ্যমে মাদক নিচ্ছেন অবামেয়াং। পাশে ওজিল-লাকাজেতেরা। সংগৃহীত ছবি
বেলুনের মাধ্যমে মাদক নিচ্ছেন অবামেয়াং। পাশে ওজিল-লাকাজেতেরা। সংগৃহীত ছবি
গত আগস্টে আর্সেনাল সতীর্থদের নিয়ে ৭০জন মেয়ের সঙ্গে মাদক গ্রহণ করেছেন মেসুত ওজিল


মেসুত ওজিল বেশ শৃঙ্খলাপরায়ণ ফুটবলার। এ কথা মনে করেন অনেকেই। ধারণাটা এবার পাল্টে যেতে পারে। ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ‘সান’ একটি বিস্ফোরক ভিডিও প্রকাশ করেছে। যেখানে দেখা গেছে আর্সেনাল সতীর্থদের নিয়ে মদ-মদিরায় ডুবে আছেন ওজিল!

ঘটনাটা গত আগস্টের। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের নতুন মৌসুম শুরুর কিছুদিন আগে। লন্ডনে ৩০ হাজার পাউন্ডের শ্যাম্পেন ও ভদকা পার্টিতে গিয়েছিলেন আর্সেনালের কজন তারকা খেলোয়াড়। ওজিল, পিয়েরে এমেরিক অবামেয়াং, আলেক্সান্ডার লাকাজেতে, মাতেও গুয়েনদোউজিদের সেই মদ্যপানের উৎসবে চরম অবস্থায় দেখা গেছে। ডজনখানেক ফুটবলারের সঙ্গে ছিল ৭০জন মেয়ে। এ ছাড়াও বেলুনের মাধ্যমে ফুটবলারদের মাদক নিতে দেখা যায় ভিডিওতে।

সেসব মাদকের মধ্যে একটি ‘হিপ্পি ক্র্যাক’—পশ্চিমা বিশ্বে এ নামেই পরিচিতি—যা বেলুনের মাধ্যমে নেওয়া হয়। ওজিলকে দেখা গেছে এমন একটি বেলুনের মাধ্যমে বিপজ্জনক নাইট্রাস অক্সাইড গ্রহণ করছেন মুখ দিয়ে। এই গ্যাসের প্রতিক্রিয়ায় চোখ উল্টিয়ে প্রায় অচেতন হয়ে পড়েন তিনি। ওজিলের ক্লাব সতীর্থ ফরাসি ফরোয়ার্ড লাকাজেতের অবস্থা ছিল একেবারেই তথৈবচ। বেলুনে মুখ লাগিয়ে গভীর শ্বাস নিচ্ছিলেন তিনি। তাঁর অসংলগ্ন চাহনি ও আচরণে বোঝা গেছে, আশপাশে কী ঘটছে কিংবা পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কোনো ধারণা ছিল না! সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে তাঁরা এই কম্মো সেরেছেন। একই কাজ করছেন অবামেয়াং আর বসনিয়ান ডিফেন্ডার কোলাসিনাচও।

আর্সেনালের ১৯ বছর বয়সী ফরাসি মিডফিল্ডার মাত্তেও গুয়েনদোউজি বেলুনের মাধ্যমে গ্যাস নেওয়ার পর পুরোপুরি অচেতন হয়ে পড়েন। নাইট্রাস অক্সাইড গ্যাস গ্রহণে শরীরের পেশি নড়াচড়ায় সমস্যা, হার্ট অ্যাটাক এমনকি মৃত্যু হতে পারে। ইংল্যান্ডে এই মাদক ‘স্ট্রিট ড্রাগ’ হিসেবে পরিচিত, লাফিং গ্যাসও বলা হয়। প্লাস্টিক ব্যাগে অ্যালকোহলের সঙ্গে এই গ্যাস নেওয়া হয়। চোখে ভুল দেখা, ঝিমুনি ভাব আসে। বেশি মাত্রায় গ্রহণ করলে মস্তিষ্কে অক্সিজেনের সরবরাহ কমে গিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তবে হেনরিখ মাখিতারিয়ান ও সকোদ্রান মুস্তাফিকে বেলুনের মাধ্যমে গ্যাস নিতে দেখা যায়নি।

লন্ডনের ওয়েস্ট এন্ড অঞ্চলে ব্যক্তিগত উদ্যোগে আয়োজিত এই মদ্যপান ও অন্যান্য নেশা গ্রহণের উৎসবে ৭০জন মেয়েকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ফুটবল দুনিয়াকে চমকে দেওয়ার মতো এই উৎসবে প্রায় ৩০ হাজার পাউন্ড খরচ করেছেন আর্সেনাল তারকারা। এর মধ্যে ছিল আড়াই হাজার পাউন্ডের (প্রায় আড়াই লাখ টাকা) হেনেসি ভিএস স্কচ, দুই হাজার পাউন্ডের ডম পেরিজোন শ্যাম্পেন এবং দুই হাজার পাউন্ডের চিরোক ভদকা।

পার্টিতে যোগ দেওয়া একটি মেয়ে ‘সান’কে বলেছেন, ‘খেলোয়াড়েরা “হিপ্পি ক্র্যাক"-এর টিন কিনে বেলুনের মাধ্যমে তা গ্রহণ করেছে। তাঁরা স্বাভাবিক ছিল না, একেবারেই বেহেড ছিল। ওজিল তো একপর্যায়ে অচেতন হয়ে সোফায় লুটিয়ে পড়েছেন। কোঁকড়ানো চুলের এক তরুণ খেলোয়াড়কে এই গ্যাস নিতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। সে তা নেওয়ার পর পুরোপুরি অচেতন হয়ে সোফায় এলিয়ে পড়েছিল। এটা অবিশ্বাস্য যে তথাকথিত অ্যাথলেটরা নিজেদের স্বাস্থ্যের এমন ঝুঁকি নিতে পারে। তাঁদের ভক্তরা এই দৃশ্য দেখলে ভয় পেত।’

এই মদ্যপান উৎসবের কয়েক দিন পর ম্যানচেস্টার সিটির মুখোমুখি হয়ে হার দিয়ে লিগ মৌসুম শুরু করেছিল আর্সেনাল। পরের সপ্তাহে চেলসির মাঠেও হারে গানাররা। কিন্তু তারপর সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা ২০ ম্যাচ অপরাজিত আর্সেনাল। লিগ টেবিলের পাঁচে রয়েছে উনাই এমেরির দল। ওজিলদের এই মদ্যপান উৎসব নিয়ে আর্সেনালের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে ক্লাবটির এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘খেলোয়াড়দের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলা হবে এবং তাঁরা যে ক্লাবের প্রতিনিধি এবং দায়-দায়িত্ব সমন্ধে তাঁদের মনে করিয়ে দেওয়া হবে।’