এখন দেশেই পাওয়া যায় ইউরোপিয়ান গোলের স্বাদ!

আরামবাগের স্ট্রাইকার ম্যাথিউকে ঘিরে ধরেছেন ব্রাদার্সের চার ফুটবলার। ছবিঃ প্রথম আলো
আরামবাগের স্ট্রাইকার ম্যাথিউকে ঘিরে ধরেছেন ব্রাদার্সের চার ফুটবলার। ছবিঃ প্রথম আলো
>দর্শকের তালিই যদি শোনা না যায়, গ্যালারির গর্জন যদি কাঁপনই না ধরায়, যদি দর্শনীয় এক গোল করে দর্শকের আনন্দ চিৎকারই শোনার সৌভাগ্য না হয়, তবে আর গোল করা কেন!

‘নাহ, চলে না!’

ইউরোপিয়ান ফুটবল নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। উল্টো পিঠে দেশের ফুটবল নিয়ে নাক সিটকানো। ওই এক কথা, নাহ চলে না! সমর্থকদের দোষ নেই, কোথায় ইউরোপের ফুটবল আর কোথায় দেশের ফুটবল!। তবে এবার ঘরোয়া ফুটবলের চেহারায় রং লেগেছে। ডাগআউটে দেশি সেরা কোচদের সঙ্গে ভালো মানের বিদেশি কোচ আর উঁচু মানের বিদেশি খেলোয়াড়েরাও এসেছেন বাংলাদেশে। ফলে মাঠের খেলায় দেখা যাচ্ছে রোমাঞ্চকর ফুটবল আর দৃষ্টিনন্দন সব গোল।

কাল স্বাধীনতা কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ আর ব্রাদার্স ইউনিয়ন। রোমাঞ্চকর ম্যাচটি শেষ হয়েছে টাইব্রেকারে। সাডেন ডেথে জিতেছে ব্রাদার্স। এর আগে গোল, সমতা, গোল, সমতা...নির্ধারিত সময়ে ম্যাচটি ৩-৩ গোলে অমীমাংসিত ছিল। ছয় গোলের ম্যাচে তিনটি গোল তো চোখে লেগে থাকার মতো। আরামবাগের হয়ে জোড়া গোল করেছেন তাঁদের অধিনায়ক রবিউল ইসলাম। তাঁর দ্বিতীয় গোলটি তো ইউরোপের ফুটবলেও হরহামেশা দেখা যায় না!

আরেকটি গোল ক্যামেরুনের স্ট্রাইকার পল এমিলের। ব্রাদার্সের একটি করে গোল করেছেন ব্রাজিলিয়ান লিমা, স্থানীয় মান্নাফ রাব্বি ও পানামার ড্যানিয়েল। রবিউলের দ্বিতীয় গোলটি ছাড়া রাব্বি ও ড্যানিয়েলের গোলটি দেশের ফুটবলপ্রেমীদের দিতে পারে ইউরোপিয়ান ফুটবলে গোলের স্বাদ।

১-১ গোলে সমতায় থাকা অবস্থায় দ্বিতীয়ার্ধে ৫৩ মিনিটে আরামবাগকে দুর্দান্ত গোলে এগিয়ে নেন রবিউল। নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার ম্যাথিউকে বল দিয়ে নিজেই ফলো আপে গিয়ে অ্যাটাকিং থার্ডে জায়গা করে নেন এই মিডফিল্ডার। ম্যাথিউয়ের থেকে পেয়েও যান প্রত্যাশিত পাস। এরপর প্রথম টাচেই বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শট, বল দূরের পোস্ট দিয়ে জালে। মাইকুজু ওয়েবসাইটে বারবার সার্চ দিয়ে দেখার মতো এক গোল (এই সাইট ঘরোয়া ফুটবলের ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করে থাকে)।

১২ মিনিট পরে ব্রাদার্সকে ২-২ গোলে সমতায় ফেরানো মান্নাফ রাব্বির গোলটি আরও দুর্দান্ত। বাঁ প্রান্ত থেকে শফির ক্রসে ডানপ্রান্ত দিয়ে আড়াআড়ি অনেক দূর থেকে দৌড়ে এসে ভলিতে প্লেসিং করে সরাসরি জালে জড়িয়ে দিয়েছেন রাব্বি। গোলের উদ্‌যাপনটাও হয়েছে দুর্দান্ত, রোনালদোর মতো লাফিয়ে উঠে ঘুরে দাঁড়ানো।

রবিউলের গোলটি বেশি সুন্দর, না ব্রাদার্সের মান্নাফ রাব্বির—এ নিয়ে গ্যালারিতে তর্ক চলছে। এই উত্তাপে ঘি ঢেলেছেন ব্রাদার্সের পানামার স্ট্রাইকার ড্যানিয়েল মেজা। দুবার পিছিয়ে পড়ে সমতায় ফেরার পর ৭৮ মিনিটে ব্রাদার্সকে এগিয়ে নিয়েছেন পানামার স্ট্রাইকার। বক্সের বাইরে থেকে বাম পায়ের জোরালো প্লেসিংয়ে গোল করেই জার্সি খুলে ফেলেন এই স্ট্রাইকার। এমন গোল দেখে প্রতিপক্ষ কোচ ডাগ আউটে দাঁড়িয়ে হাততালি দিলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই! কিন্তু জার্সি খোলার অপরাধে দেখতে হয় হলুদ কার্ড। ম্যাচে এর আগে আরও একটি হলুদ কার্ড দেখায় লাল কার্ড দেখে মাঠের বাইরে চলে যেতে হয় মেজাকে।

নিশ্চিতভাবে বলাই যায়, ঘরোয়া ফুটবলে রোমাঞ্চকর সব ম্যাচে দর্শনীয় সব গোল হচ্ছে। ফুটবলপ্রেমী হিসেবে তাহলে ঘরে বসে থাকা কেন? দর্শকের তালিই যদি শোনা না যায়, গ্যালারির গর্জন যদি কাঁপন না ধরায়, যদি দর্শনীয় এক গোল করে দর্শকের আনন্দ চিৎকারই শোনার সৌভাগ্য না হয়, তবে আর গোল করা কেন!