সিলেটের ভাগ্য ফিরবে ওয়ানডে অভিষেকে?

এবার ওয়ানডে অভিষেকের অপেক্ষায় সিলেট। প্রথম আলো ফাইল ছবি
এবার ওয়ানডে অভিষেকের অপেক্ষায় সিলেট। প্রথম আলো ফাইল ছবি
>মাশরাফির মুখে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের প্রশংসা। বলেই ফেললেন, এটি বাংলাদেশের অন্যতম সেরা মাঠ। সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রশংসাও তাঁর কণ্ঠে। কিন্তু কালকের ম্যাচটা এমন এক সমীকরণ দাঁড় করিয়েছে, প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগের সুযোগ নেই। এই ম্যাচ যে হয়ে উঠেছে অলিখিত ফাইনাল!

সিলেট স্টেডিয়ামটা সত্যিই খুব সুন্দর। বিকেল নামলে কুয়াশার সাদা মেঘ ফুঁড়ে দূরের মেঘালয় পাহাড়ের অবয়ব দৃশ্যমান হয়। তারই প্রেক্ষাপটে পাহাড়চূড়ার এক মাঠ। একপাশে চা–বাগান। অন্য পাশে পাহাড়। এমনকি এই মাঠে গ্যালারির একটা অংশই আদতে পাহাড়। খাঁজ কেটে বানানো। দেশের আর কোথায় মিলবে এমন মাঠ?

মাশরাফি এর আগে এ মাঠে দুটি ম্যাচ খেলেছেন। বিপিএলে রংপুর রাইডার্সের হয়ে। তবে আন্তর্জাতিক ম্যাচের স্বাদ পেতে যাচ্ছেন এই প্রথম। আর আগে এ মাঠে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি আর টেস্ট খেলেছে। এই দুই ফরম্যাটেই মাশরাফি আর খেলেন না। ভাগ্যিস খেলেন না। মাশরাফি তাই বলার সুযোগ পাচ্ছেন, সে দলে আমি তো ছিলাম না। বাংলাদেশ যে এর আগে এ মাঠের টি-টোয়েন্টি আর টেস্ট—দুই অভিষেকেই হেরেছে। সর্বশেষ জিম্বাবুয়ের কাছে টেস্ট হারার স্মৃতিটা তো টাটকাই। বছরের শুরুর দিকে শ্রীলঙ্কার কাছে টি-টোয়েন্টি হারের অভিজ্ঞতাও ফিরে আসছে। আগামীকাল যে এ মাঠের ওয়ানডে অভিষেক।

এক দিক দিয়ে এই মাঠ মাশরাফিদেরও অচেনা। ভীরু মনে তাই শঙ্কা জাগেই। মাশরাফি অবশ্য মনে করেন না টি-টোয়েন্টি বা টেস্টে হেরে যাওয়া কোনো প্রভাব এ ম্যাচে ফেলবে, ‘পেছনেরটা মনে করে কোনো লাভ নেই। কালকে আমাদের নতুন ম্যাচ। নতুন সবকিছু। খুব ব্যাকফুটে আছি, তা–ও না। ১-১ সমতায় আছে, এটা সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ। এটা এমন না যে আমাদের সবকিছু হারিয়ে যাচ্ছে। ইতিবাচক খেলতে হবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাদের সেরাটা খেলবে ধরেই নিয়েই আমাদের ভাবতে হবে। আমাদেরও সেরা ক্রিকেট খেলতে হবে। এ মাঠে আগে কী হয়েছে, সেটা ভেবে মাঠে নামলে আরও খারাপ হবে।’

যথার্থ দাওয়াই দিয়েছেন অধিনায়ক। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, এ মাঠের উইকেট বাংলাদেশ ঠিকমতো চেনে কি না। এখানকার কন্ডিশন, শীতের শিশির, দিনরাতের ম্যাচ...এসব ব্যাপারও উঠে আসছে আলোচনায়। মাশরাফি অকপটে স্বীকার করছেন, ‘এই ভেন্যুতে খেলার খুব একটা অভিজ্ঞতা নেই। বিপিএলে দুটি ম্যাচ খেলেছিলাম। শিশির ছিল। এই সময়ে কেমন শিশির হচ্ছে সেটাও দেখার ব্যাপার। অত বেশি অভিজ্ঞতা নেই যে আপনাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেব। এখন আর অত কিছু ভেবে লাভ নেই। এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা সময়, এখানে আপনাকে নিজের সেরাটা দিতে হবে। এখন অন্য কিছু নিয়ে ভাবার সুযোগ নেই।’

তবে তার মানে এমন নয়, একেবারেই অচেনা ভিনদেশে খেলা। বাংলাদেশ হোম কন্ডিশনের সুবিধা নিয়েই খেলবে বলে মনে করেন মাশরাফি, ‘আমি তো ঢাকা থেকে বলে আসছি, এটা আমাদের দেশ, আমাদের উইকেট, কন্ডিশন। সমর্থকও আমাদের পক্ষে থাকবে। ক্রিকেট এখানে অত খেলার সুযোগ পাইনি, তার মানে এই না যে আবহাওয়া বা কন্ডিশন সব বদল হয়ে যাচ্ছে।’

মিরপুরে শেষ করে আসতে পারলে ভালো হতো, তা মানছেন। তবে তা যখন হয়নি, অত ভেবে আর লাভ নেই বলেই মনে করেন মাশরাফি, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজে সেন্ট কিটসে আমরা যখন শেষ ম্যাচ খেলতে গেলাম, তখন আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে, গায়ানায় সব শেষ করতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু সেন্ট কিটসে গিয়ে কিন্তু আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলতে পেরেছি। কারণ আমরা মানসিকভাবে তৈরি ছিলাম।’

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এ মাঠে টেস্ট খেলার আগে বাংলাদেশ বেশ আগেভাগে চলে এসেছিল। জিম্বাবুয়েকে রেখে এসেছিল চট্টগ্রামে। জিম্বাবুয়ে তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচটা সেখানেই খেলেছে। তবু ম্যাচটা হারতে হয়েছিল। আজও যেমন বাংলাদেশ স্বাগতিক হওয়ার সুবিধা নিল ফ্লাডলাইটে অনুশীলন করে; ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনুশীলন করে ফিরে গেছে দিনের আলোতেই। ম্যাচ যদিও দিনরাতের।
যত দূর শোনা যাচ্ছে, উইকেট থেকেও সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে চাইছে বাংলাদেশ। এ মাঠের উইকেট ব্যাটিং সহায়ক হলেও কালকের জন্য ধীর উইকেট বানানো হচ্ছে। টেস্টের পর প্রথম ওয়ানডেতেও একই রকম উইকেট বানিয়েছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওয়ানডের উইকেটে ব্যাটে বল আসছিল বেশ ভালো। মাশরাফি আজ সংবাদ সম্মেলনে এসেছেন টিম মিটিং করেই। ফলে উইকেট দেখার অভিজ্ঞতা তখনো হয়নি। তবে কী রেসিপিতে উইকেট বানানো, তা কি আর তিনি জানেন না! যদিও মাশরাফি বলছেন, ‘উইকেট এখনো দেখা হয়নি। তবে সবাই বলল, মিরপুরের মতো একই রকম উইকেট হবে। ব্যাটিং সহায়ক উইকেট। টেস্ট ম্যাচে যা দেখেছি, তা বাদ দিলে তো সাধারণত ব্যাটিং সহায়ক উইকেটই হয়।’

ক্যারিবীয় অধিনায়ক অবশ্য এর আগে যা বলে গেছেন, তাতে মাশরাফির কথার সঙ্গে মিল পাওয়া গেল না। রোভম্যান পাওয়েল বলছেন, ‘দেখে তো বাংলাদেশের উইকেটগুলোর মতোই মনে হলো, ধীর আর নিচু বাউন্সের। আশা করি দল এর সঙ্গে মানিয়ে নিয়েই জিতবে।’

উইকেট নিয়ে দুই অধিনায়কের মতে মিল না পাওয়া গেলেও দুজনই মানছেন, স্টেডিয়ামটা সুন্দর। পাওয়েল তো ক্যারিবীয় দ্বীপের মানুষ। সেখানে সব মাঠের সহজাত অনুষঙ্গ যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। সেই দেখার অভ্যস্ত চোখেও পাওয়েলকেও মুগ্ধ করেছে এই মাঠ, ‘এটা খুবই সুন্দর স্টেডিয়াম। সুযোগ-সুবিধা দেখেও মুগ্ধ হয়েছি। খুব সুন্দর লাগছে।’

এখন সিলেটের ওয়ানডে অভিষেকে শুরুর ম্যাচ খেলার অপেক্ষায়!