মধুর সমস্যা এখন তিতকুটে যন্ত্রণা

দলে ওপেনার কমানোর কথা ভাবছে টিম ম্যানেজমেন্ট। ছবি: প্রথম আলো
দলে ওপেনার কমানোর কথা ভাবছে টিম ম্যানেজমেন্ট। ছবি: প্রথম আলো
>চার ওপেনারই দুর্দান্ত ছন্দে ছিলেন এই সিরিজের আগে। সিরিজের প্রথম দুই ওয়ানডে বাংলাদেশ খেলেছে চার ওপেনারকে নিয়েই। কাল সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে বাংলাদেশ আর একই ছক মেনে হাঁটতে চাচ্ছে না

মাঠে এসেই লম্বা এক মিটিং সেরে নিল বাংলাদেশ দল। এ মিটিংয়ে ‘ফাইনালে’র দলটা চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার কথা টিম ম্যানেজমেন্টের। টিলা আর চা–বাগানে ঘেরা সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে খেলতে এসেছে বাংলাদেশ। স্নিগ্ধ, চোখজুড়ানো সৌন্দর্যের মধ্যেই লড়াইয়ের চাপা উত্তেজনা, বাংলাদেশকে যে জিততেই হবে ফাইনালে রূপ নেওয়া ম্যাচটা।

মিরপুরে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে জিতে গেলে সিলেটের ম্যাচটা ফাইনাল হিসেবে গণ্য হয় না। সেটি যেহেতু হয়নি, সিলেটে প্রথম ওয়ানডে খেলার রোমাঞ্চ নয়, বাংলাদেশকে ভাবতে হচ্ছে এখন ফাইনালের সেরা একাদশ নিয়ে। বাংলাদেশ যদি সিরিজ দ্বিতীয় ম্যাচেও জিতে যেতে, তবুও হয়তো শেষ ম্যাচে পরিবর্তন আসত। তবে সেই পরিবর্তন আর এখনকার পরিবর্তনে অনেক পার্থক্য। এখন যদি একাদশে কোনো পরিবর্তন আনতে হয়, টিম ম্যানেজমেন্টকে ভাবতে হচ্ছে, ফলপ্রসূ হবে তো? বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টকে এখন বেশি ভাবতে হচ্ছে সেই ওপেনারদের নিয়ে, যাঁরা দুদিন আগেও ফেলেছিলেন মধুর সমস্যায়। এখন তাঁরা মধুর নয়, ‘ভীষণ সমস্যা’!

তামিম ইকবাল ‘অটোমেটিক চয়েস’, গত ম্যাচেও ফিফটি করেছেন। ভাবনাটা আসলে বাকি তিন ওপেনার—ইমরুল কায়েস, লিটন দাস ও সৌম্য সরকারকে নিয়ে। জিম্বাবুয়ে সিরিজে দুর্দান্ত খেলা ইমরুল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গত দুই ওয়ানডেতে করেছেন ৪ রান। সৌম্য ২৫ রান। প্রথম ওয়ানডেতে ৪১ ও পরেরটিতে ৮ রান করা লিটন সৌম্য-ইমরুলের তুলনায় কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন। তবে তিনজনেরই এখন একাদশে জায়গা পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় থাকার কথা। সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন, কাল ব্যাটিংয়ে অবশ্যই কিছু পরিবর্তন আসছে, ‘অনেক কিছুই হতে পারে। পরিবর্তন আসলেও আসতে পারে। সবার এটা নিয়ে চিন্তা আছে।’

চার ওপেনারের মধ্যে কাউকে একাদশের বাইরে যেতে হলে ইমরুলকে হয়তো সাইড বেঞ্চে বসে দেখতে হতে পারে কাল সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচটা। যদি তামিম-লিটন ওপেন করেন, তাহলে সৌম্যর জায়গাটা হতে পারে কোথায়? গত দুই ম্যাচে তাঁকে ছয়ে খেলিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। এই ব্যাটিং পজিশনটা যে সৌম্যর জন্য আদর্শ জায়গা নয়, সেটি স্বীকার করছেন মাশরাফি, ‘আমরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এটা যে একেবারেই সঠিক, সেটা বলার সুযোগ একেবারেই নেই। তাহলে তো আমরা সব ম্যাচই জিততাম। অবশ্যই এটা নিয়ে তর্কে যাওয়ার সুযোগ নেই। আমি প্রথম ম্যাচে বলেছিলাম, সৌম্যর জন্য সেরা পজিশন হচ্ছে ওপেনিং কিংবা তিন নম্বর। ও পেস বোলিং খেলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করে। বৃত্ত ব্যবহার করাটা ওর জন্য সবচেয়ে ভালো হয়। আসলে এমন একটা পরিস্থিতি হয়েছে বলে ওকে ওই পজিশনে ব্যাটিং করাতে হয়েছে। ওখানে মানিয়ে নেওয়া জরুরি, সেটা যত তাড়াতাড়ি হয়, ততই ভালো।’

কাল যদি একাদশে থাকেন সৌম্য, তবে কি একই পজিশনে ব্যাটিং করবেন? মাশরাফি পুরোনো কথাটাই বললেন, ‘অবশ্যই এটা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। সব সময় চাইব সৌম্য ওপেন কিংবা তিনে ব্যাট করুক—যদি না ডানহাতি কিংবা বাঁহাতি সমন্বয়ে সমস্যা না হয়। নির্দিষ্ট খেলোয়াড় কোথায় খেলতে ভালো বোধ করবে, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম ম্যাচের দিকে যদি তাকান, ডানহাতি-বাঁহাতি সমন্বয়ে দাঁড় না করালে ইমরুল ওপেনিংয়ে প্রথম পছন্দ থাকত। (জিম্বাবুয়ে সিরিজে) ৩৫০ রান করার পরও তাঁকে বসিয়ে রাখা ভীষণ কঠিন। আমাদের ক্রিকেট সংস্কৃতিতে এটা অনেক কঠিন কাজ। সৌম্য ছন্দে ছিল, এশিয়া কাপেও সাতে ব্যাটিং করে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সে রান করছিল। সবকিছু মিলিয়ে চিন্তা করেও সৌম্যর সেরা পজিশন নম্বর থ্রি বা ওপেন। বাদ বাকি বিষয়গুলো আলোচনা করতে হবে।’

সংবাদ সম্মেলন শেষে ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে মাশরাফি ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন, পরিবর্তন আসতে পারে বোলিংয়েও। তবে তিন পেসার, দুই স্পিনার সমন্বয়ে পরিবর্তন আনতে তিনি আগ্রহী নন, ‘আপনি যদি প্রথম ম্যাচ দেখেন পেস বোলারদের অবদান সবচেয়ে বেশি ছিল। অবশ্যই স্পিন আমাদের শুরুতে অনেক কিছু ঠিক করে দিয়েছে। পেস বোলিংয়ে এমন কোনো বাজে অবস্থা হয়নি যে বলব সে কারণে হেরেছি। বরং জিতেছি পেস বোলিংয়ে নির্ভর করেই।’

মাশরাফি যখন সংবাদ সম্মেলনে এসেছেন, তখনো উইকেট দেখা হয়নি। সংবাদ সম্মেলন শেষে উইকেট দেখে-টেখে একটা ধারণা পেলেন। অধিনায়কের কথায় বোঝা গেল, সিলেট স্টেডিয়ামের ভারতীয় কিউরেটর তৈরি করেছেন ২৫০ রানের উইকেট।