অ্যাটলেটিকোর কিংবদন্তি হতে পারতেন রোনালদো!

বার্সেলোনা-রিয়াল মাদ্রিদ, দুই দলের হয়েই খেলেছেন রোনালদো। ছবি: টুইটার
বার্সেলোনা-রিয়াল মাদ্রিদ, দুই দলের হয়েই খেলেছেন রোনালদো। ছবি: টুইটার
>সর্বকালের সেরা স্ট্রাইকার কে? এই প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই বলবেন ব্রাজিলিয়ান তারকা রোনালদোর নাম। বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ, ইন্টার মিলান, এসি মিলান, পিএসভি আইন্দহোভেনের মতো ইউরোপীয় ক্লাবে খেলে জাত চেনানো এই স্ট্রাইকারকে আরেকটু হলেই দলে নিয়ে আসত অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ!

ভেবে দেখুন তো, আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি ডিয়েগো সিমিওনের সঙ্গে একই ক্লাবের হয়ে খেলতে নেমেছেন ব্রাজিলীয় কিংবদন্তি রোনালদো। গায়ে নেই রিয়াল মাদ্রিদের ধবধবে সাদা বা বার্সেলোনার বিখ্যাত বেগুনি-নীল জার্সি। বরং অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সাদা-লাল জার্সি পরে মাঝমাঠ থেকে সিমিওনের বাড়িয়ে দেওয়া বল ধরে দুর্দান্ত নৈপুণ্যে এক ডিফেন্ডারকে ছিটকে দিয়ে গোল করছেন তিনি। ভাবতে কষ্ট হচ্ছে, তাই তো? অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের কাছে আর মাত্র চার মিলিয়ন ইউরো থাকলে এই দৃশ্যপট আর কল্পনার মাঝে আটকে থাকত না, নেমে আসত বাস্তবতার পাতায়। এমনটাই জানিয়েছেন অ্যাটলেটিকোর সাবেক সভাপতি হেসুস গিল।

বিশ্বমঞ্চে ব্রাজিলের রোনালদোর আবির্ভাবটা হয়েছিল একদম রাজকীয়ভাবে। ব্রাজিলের ক্লাব ক্রুজেইরোর হয়ে গোলবন্যা ছোটানো রোনালদোকে ১৯৯৪ বিশ্বকাপের পরপরই দলে নিয়ে আসে ডাচ ক্লাব পিএসভি আইন্দহোভেন। সেখানে এসেও গোলের ধারা অব্যাহত রাখেন তিনি। উনিশ-বিশ বছর বয়সী টাকমাথার এক তরুণ ডাচ লিগে গোলের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন, স্বাভাবিকভাবেই নজর পড়ে ইউরোপের বড় বড় ক্লাবের। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে শুরু করে বার্সেলোনা, সবাই খোঁজ নিতে শুরু করল রোনালদোর, চেষ্টা করতে লাগল নিজেদের দলে নিয়ে আসার। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক ম্যানেজার স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন তো স্বীকারই করেছেন, ওয়ার্ক পারমিট সংক্রান্ত জটিলতা না থাকলে রোনালদো ১৯৯৬ সালে ম্যানচেস্টারের লাল দলেই আসতেন। রোনালদোর এত চাহিদা দেখে পিএসভিও তাদের সোনার ডিমপাড়া হাঁসের দাম এক লাফে বাড়িয়ে দিয়েছিল দ্বিগুণেরও বেশি। ৫ মিলিয়ন ইউরোর কিছু বেশি দিয়ে দলে আনা রোনালদোকে নিতে হলে ১২ মিলিয়ন ইউরো দেওয়া লাগবে, আগ্রহী ক্লাবগুলোকে সাফ জানিয়ে দেয় পিএসভি।

এদিকে মাত্রই ১৯৯৫-৯৬ মৌসুমের লা লিগা শিরোপা জিতেছে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, খেলবে চ্যাম্পিয়নস লিগে। দলটির সভাপতি হেসুস গিল মনে করলেন, চ্যাম্পিয়নস লিগের মতো মঞ্চে খেলার জন্য দলে একজন তারকা খেলোয়াড় থাকা বাঞ্ছনীয়। এ কারণেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, বার্সেলোনার সঙ্গে সঙ্গে পিএসভির রোনালদোর দিকে হাত বাড়ালেন তারাও। তবে পিএসভির চাহিদামত ১২ মিলিয়ন ইউরো নয়, রোনালদোকে পাওয়ার জন্য তারা দিতে চাইলেন ৭.৮ মিলিয়ন ইউরো। কারণটা স্বাভাবিক, রিয়াল-বার্সার মতো টাকার বস্তা নেই তাদের, অত টাকা দিতে পারবে না তারা। আর এখন আশ্চর্যজনক বলে মনে হলেও, এটা সত্যি কথা, আজ থেকে ২২-২৩ বছর আগে ১২ মিলিয়ন ইউরোর অর্থমূল্য অনেক বেশি ছিল। এখন বিশ্বের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় নেইমারের দাম যেমন ২২২ মিলিয়ন ইউরো, তখন বিশ্বের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় ইতালিয়ান উইঙ্গার জিয়ানলুইজি লেন্তিনির দাম ছিল ১৪.৪৭ মিলিয়ন ইউরো। Ô

‘মাত্র’ ৭.৮ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে রোনালদোকে অ্যাটলেটিকোর কাছে ছাড়তে চাইল না পিএসভি। ফলে দলে ‘নতুন নাম্বার নাইন’ আনার স্বপ্নটাও অপূর্ণ থেকে গেল অ্যাটলেটিকোর। পিএসভির বেঁধে দেওয়া দাম ১২ মিলিয়ন ইউরোর চেয়ে আরও ২.৭ মিলিয়ন বেশি দিয়ে রোনালদোকে বিশ্বের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় বানিয়ে ক্যাম্প ন্যু তে নিয়ে আসলেন বার্সেলোনার কোচ ব্রায়ান রবসন। পরে এই রোনালদো বার্সেলোনার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেললেও, মাদ্রিদেরই আরেক বড় ক্লাব অ্যাটলেটিকোর বিখ্যাত লাল-সাদা জার্সিটা আর গায়ে চরানো হয়নি তাঁর।

ফার্নান্দো তোরেস, ডিয়েগো কস্তা, রাদামেল ফ্যালকাও, আঁতোয়ান গ্রিজমান, সার্জিও আগুয়েরো, ডিয়েগো ফোরলানের পাশাপাশি হয়তো আজকে রোনালদোর নামও নেওয়া হতো অ্যাটলেটিকো কিংবদন্তি হিসেবে, যদি ব্যাংকে আর মাত্র চার মিলিয়ন ইউরো বেশি থাকত তাদের!