প্রায় ১০ কোটি টাকা দামের কে এই বরুণ?

রূপকথার মতো জীবন বরুণের। ছবি: টুইটার
রূপকথার মতো জীবন বরুণের। ছবি: টুইটার

২০১৯ আইপিএলে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় কে? দুটি নাম উঠে আসবে—জয়দেব উনাদকাট ও বরুণ চক্রবর্তী। উনাদকাটের নাম তো আগের দুই আইপিএলে শোনা গিয়েছে। কিন্তু এই ২৭ বছর বয়সী স্পিনার বরুণ চক্রবর্তী কে?

>আইপিএল নিলামে ৮ কোটি ৪০ লাখ রুপিতে ‘রহস্য স্পিনার’খ্যাত বরুণ চক্রবর্তীকে কিনেছে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। কিছুদিন আগেই মাইক হাসি বরুণকে উপাধি দিয়েছেন ‘নতুন রহস্য স্পিনার’। মাদুরাই প্যান্থার্সকে তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জেতানো বরুণ প্রথমবারের মতো আইপিএল খেলতে এসেই ঝড় তুলেছেন। সেটি আপাতত মাঠের বাইরে, নিলামে। ২৭ বছর বয়সী এই লেগ স্পিনারকে ৮ কোটি ৪০ লাখ রুপিতে কিনেছে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। বাংলাদেশি মুদ্রায় অঙ্কটা প্রায় ১০ কোটি (৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা)। তবে বরুণের ফেলে আসা জীবনের গল্প শুনলে রূপকথা বলেই মনে হবে। আর নিলামের অঙ্কটা হতে পারে সেই রূপকথায় নতুন ‘অধ্যায়’।

বরুণের ক্রিকেট খেলা শুরু হয়েছিল বল ধরতে ধরতে। শৈশবে বল করার চাইতে উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে বল ধরাতেই বেশি আগ্রহ ছিল তাঁর। ১৩ বছর বয়স থেকে ক্রিকেট মাঠে আসা-যাওয়া বরুণের। তখন উইকেটকিপারই হতে চাইতেন এবং ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত খেলেছেন কিপিং গ্লাভস হাতে। কিন্তু দলে খুব একটা সুযোগ পেতেন না। বয়সভিত্তিক দলগুলো থেকে বেশ কয়েকবার প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় বরুণ রাগে ক্রিকেটই ছেড়ে দিয়েছিলেন!

মা–বাবার বাধ্য সন্তানের মতোই বরুণ ক্রিকেট ছেড়ে মনোযোগ দিয়েছিলেন পড়াশোনায়। লেখাপড়ায় তাঁর মাথাও ছিল খুব ভালো। চেন্নাইয়ে এসআরএম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যকলায় ডিগ্রিও নিয়েছেন। খেলাধুলার সঙ্গে তত দিনে সম্পর্ক শেষ বললেই চলে। কিন্তু মনে মনে ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা দাবিয়ে রাখতে পারেননি। স্থাপত্যকলায় পড়াশোনার পাশাপাশি পাড়ার টেপ টেনিসে সুনাম কুড়িয়েছিলেন ভালোই।

পাঁচ বছরের পড়াশোনা শেষে স্থাপত্যবিদ হিসেবে স্বাধীনভাবে কাজ করছিলেন বরুণ। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে বরুণ বুঝতে পেরেছিলেন, এই জায়গা আসলে তাঁর জন্য নয়। এই স্থাপত্যকলায় বন্দী থাকা তাঁর পক্ষে সম্ভব না। তাঁর ধ্যানজ্ঞান আসলে ক্রিকেট মাঠ। বরুণ বুঝে ফেলেছিলেন ২২ গজেই তাঁর প্রতিভার বিকাশ ঘটবে, স্থাপত্যকলায় নয়। তাই স্থাপত্যকলার কাজ পুরোপুরি ছেড়ে দিয়ে যোগ দিলেন ক্রমবেস্ট ক্রিকেট ক্লাবে। তবে বরুণ এবার আর আগের পথে হাঁটেননি, উইকেটরক্ষক থেকে হয়ে যান সিমার অলরাউন্ডার।

কিন্তু বরুণকে আবারও হতাশ হতে হয়। সিমার হিসেবে মাত্র দুই ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছিল, আসলে তা এক ম্যাচ। দ্বিতীয় ম্যাচে খেলতে গিয়েই হাঁটুর চোটে ছিটকে পড়তে হয় মাঠের বাইরে, সেটি ছয় মাসের জন্য। বরুণের মনে তখনো একটা ভাবনা এসেছিল, সিদ্ধান্ত নিতে ভুল হলো না তো?

বরুণ ভাবনাটা নিজের মাঝেই ধরে রেখেছিলেন। এরপরই আসে পরিবর্তন। পেসার থেকে স্পিনার। চোট থেকে ফেরার পর তিনি নিজেকে পুরোপুরি পাল্টে ফেললেন। চেন্নাই লিগের চতুর্থ ডিভিশনে জুবিলি ক্রিকেট ক্লাবে যোগ দিলেন স্পিনার হিসেবে। এবার সাফল্য ধরা দিল। ২০১৭-১৮ মৌসুমে ৮.২৬ গড়ে, ৩.০৬ রান রেটে তুলে নিলেন ৩১ উইকেট। রান পেলেন ব্যাটিংয়েও। সেই মৌসুমে জুবিলি ক্রিকেট ক্লাবের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও বরুণ!

সেই মৌসুমেই সবার নজর কেড়ে নেন বরুণ। এতে ডাক পান আইপিএলের নেটে। চেন্নাই সুপার কিংসের নেটে ছিলেন চার দিন। তখন তাঁকে পছন্দ করে ফেলেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ব্যাটসম্যান মাইক হাসি। বরুণের বোলিংয়ে মুগ্ধ হয়ে কলকাতার অধিনায়কও তাঁকে নিয়ে গিয়েছিলেন নিজেদের নেটে। এরপর শুরু হয় তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগ, মাদুরাই প্যান্থার্স বরুণকে দলে ভেড়ায়। সেই টুর্নামেন্টের ফাইনালে ৪ ওভারে ৯ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে মাদুরাইয়ের শিরোপা জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন বরুণ। তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগের অসাধারণ পারফরম্যান্সের পর বিজয় হাজারে ট্রফিতেও নিজের প্রতিভা দেখান তিনি। গ্রুপ পর্বে ২২ উইকেট নিয়ে হয়েছিলেন সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি।

মাইক হাসি এই বরুণকে বলেছেন ‘নতুন রহস্য স্পিনার’। কিন্তু বরুণের ফেলে আসা জীবনটা খোলা বইয়ের পাতার মতো, যা পড়লে বিশ্বাস করতে হবে জীবনে কখনো কোনো কিছুতে হাল ছাড়তে নেই!